স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরে ভোজ্যতেল ঘোষণা দিয়ে আমদানি হয়ে আসা চালানের মধ্যে একটি ড্রামে ১৮৫ কেজি কোকেনের সন্ধান মিলেছে। চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষার পর চালানটিতে কোকেনের কোন অস্তিত্ব না মিললেও ঢাকায় দুটি পরীক্ষাগারে পৃথক পৃথক পরীক্ষার পর তরল কোকেনের অস্তিত্ব মিলেছে। এ তথ্য জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মঈনুল খান।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খান জাহান আলী লিমিটেড নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির এক ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জাল করে সানফ্লাওয়ার ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেল ঘোষণা দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে ১০৭ ড্রাম ভর্তি তেল আমদানি করে। চট্টগ্রাম বন্দরে এসব ড্রাম খালাস হওয়ার পর পুলিশ সদর দফতর থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় তেলের নামে এ চালানে কোকেন রয়েছে। গত ৭ জুন বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে কন্টেনারগুলো নমুনা পরীক্ষার স্বার্থে সিলগালা করে রাখা হয়। পরদিন ৮ জুন গোয়েন্দা পুলিশ, শুল্ক ও গোয়েন্দা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী, কাস্টমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ সব ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা শেষে এ ১০৭টি ড্রামে কোকেনের কোন অস্তিত্ব নেই বলে রিপোর্ট প্রদান করা হয়।
সূত্রে জানায়, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারি বিদেশী একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে খবর পান যে, ভোজ্য তেলের নামে আসা এ চালানে কোকেন রয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মাধ্যমে কাস্টমসের সহায়তায় তেলের এ চালানের খালাস কাজ স্থগিত করে তা সিলগালা করান। স্থানীয় পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষায় চালানে কোকেনের অস্তিত্ব না মেলায় তা অধিকতর পরীক্ষার জন্য ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে নমুনা প্রেরণ করা হয়। পৃথক পৃথকভাবে পরীক্ষা শেষে চালানের ৯৬ নম্বর ড্রামে তরল কোকেন হিসেবে চিহ্নিত হয়। যার ওজন ১৮৫ কেজি।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানানো হয়, বলিভিয়া থেকে আমদানি করা সূর্যমুখী ব্র্যান্ডের ভোজ্যতেলবাহী একটি কন্টেনার জাহাজীকরণ হয় উরুগুয়ের মন্টিভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে গত ১২ মে এ কন্টেনারটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। এ পণ্যের আমদানিকারক হিসেবে কাগজেপত্র রয়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পুলিশী তদন্তে প্রতিষ্ঠানের মালিক নুর মোহাম্মদ দাবি করেছেন, তার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জালিয়াতি করে তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক মোঃ সোহেল এ কাজ করেছেন। পরে পুলিশ সোহেলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সোহেল পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তিনি নিজ উদ্যোগে এ চালানটি এনেছেন। তদন্তে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এবং গোয়েন্দা পুলিশ উদঘাটন করে কোন ধরনের ঋণপত্র এবং বিল অব এন্ট্রি ছাড়াই কন্টেনার ভর্তি এ চালানটি এসেছে।
শনিবার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মঈনুল খান সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন একটি ড্রামে তরল কোকেন রয়েছে। তার মতে, দেশে তরল কোকেন ধরা পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে এ ধরনের কোন চালান এসেছে কিনা তা জানা নেই। এ ১৮৫ কেজি কোকেনের বাজারমূল্য কত তা নিয়ে রয়েছে একেক জনের একক বক্তব্য। কারও মতে ৫০ কোটি আবার কারও মতে তার চেয়েও বেশি। সঠিক কোন মূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি সরকারী সংস্থার কোন পক্ষ। চালানটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে সিলগালা অবস্থায় রয়েছে। তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ায় পরবর্র্তী ব্যবস্থা গৃহীত হবে বলে বন্দর ও কাস্টম সূত্রে শনিবার জানানো হয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: