ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে লুটপাট আড়াই শ’ কোটি টাকা ;###;৬ জেলার দু’লাখ মৎস্যজীবী জিম্মি ;###;ভয়ে পেশা বদল করছেন অনেকেই ;###;ছয় বছরে ৫ হাজার জেলে অপহৃত ;###;দস্যুদের টোকেন মূল্য ৫ হাজার টাকা

সুন্দরবনভিত্তিক ১৫ বাহিনী তৎপর ॥ সাগর দাপাচ্ছে জলদস্যু

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৮ জুন ২০১৫

সুন্দরবনভিত্তিক ১৫ বাহিনী তৎপর ॥ সাগর দাপাচ্ছে জলদস্যু

রাজন ভট্টাচার্য/শংকর লাল দাশ ॥ বঙ্গোপসাগরে সুন্দরবনভিত্তিক সক্রিয় ভয়ঙ্কর ১৫ জলদস্যু বাহিনী। তাদের কাছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলবর্তী ৬ জেলার অন্তত দুই লাখ ইলিশ শিকারী জিম্মি। এক বছরে এসব জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা কেবলমাত্র ইলিশ শিকারী জেলেদের কাছ থেকেই মুক্তিপণ আদায় করেছে প্রায় শত কোটি টাকা। এর বাইরে লুটপাট, চাঁদাবাজি, টোকেন বিক্রিসহ অন্যান্য খাতেও জলদস্যুরা আরও দেড় শ’ কোটি টাকা আয় করেছে। বর্তমানে অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হয়ে পড়েছে যে, অসংখ্য জেলে সাগরে নামার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। দস্যু দমনে মাঝে মধ্যেই সুন্দরবনে র‌্যাব-কোস্টগার্ড অভিয়ান চালাচ্ছে। অভিযানে মারা যাওয়া এবং ধরা পড়ার পর নতুন নামে ফের সংগঠিত হয় দস্যুবাহিনী। গহীন অরণ্যে ঘাঁটি গেড়ে অবাধে অপকর্ম চালাচ্ছে এই চক্র। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের কাছে অসহায়। মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুদের হাত থেকে বেঁচে আসা প্রত্যক্ষদর্শী জেলেসহ বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের ছয়টি জেলা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতা প্রতিরোধ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, পটুয়াখালীর মূলত তিনটি উপজেলাÑ গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া সাগর সংলগ্ন। এর সবগুলোতেই নজরদারি আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও ভোলাসহ অন্যান্য এলাকাতেও পুলিশ নিশ্চয়ই টহল নজরদারি বাড়িয়েছে। এসব এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি জেলে নৌকা নজরদারির আওতায় রয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত জলদস্যুতার কোন ঘটনা পুলিশের নজরে আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন গভীর সমুদ্র যাত্রায় সমস্যা হতো। কিন্তু এখন আমাদের কোস্টগার্ড গভীর সমুদ্রে অভিযানের সক্ষমতা অর্জন করেছে। কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দিচ্ছে। ফলে জলদস্যুতার ঘটনা আশা করি শূন্যে নেমে আসবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, পটুয়াখালীর আলীপুর, সোনারচর ও চরমোন্তাজ মৎস্য বন্দরে পুলিশী টহলের ব্যবস্থা করা হবে। নানা নামে সক্রিয় দস্যু বাহিনী ॥ প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কিছু জেলে জানিয়েছেন, সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে দুই ডজনেরও বেশি ছোট-বড় জলদস্যু বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জলদস্যু বাহিনী সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর। এদের রয়েছে বন্দুক, রাইফেলসহ বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। রয়েছে দ্রুত গতির নৌযান। এদের লোকবলও অনেক বেশি। কোন কোন বাহিনীতে ৫০-৬০ জন পর্যন্ত সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, ভয়ঙ্কর জলদস্যু বাহিনীগুলো হচ্ছে- রাজু বাহিনী, কৃষ্ণ বাহিনী, জুলফু বাহিনী, আব্বাস বাহিনী, ফেরাউন বেলাল বাহিনী, দারোগা বাহিনী, বনরাজা বাহিনী, রেজাউল বাহিনী, শীর্ষ বাহিনী, রুবেল বাহিনী, মোশারেফ বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, শহিদুল বাহিনী, ফরহাদ বাহিনী ও আউয়াল বাহিনী। এছাড়া, মাঝে মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠা ছোট আকারের জলদস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে গামা বাহিনী, মোর্তজা বাহিনী, আল-আমিন বাহিনী, জলিল বাহিনী, মতিন বাহিনী, নুর বাহিনী, সবুজ বাহিনী, মান্নান বাহিনী ও সোহরাব বাহিনী অন্যতম। এসব বাহিনীর কাছে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার কমপক্ষে দু’ লাখ জেলে জিম্মি। এ সমস্ত জেলেদের সকলেই বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার করে জিবিকা নির্বাহ করে। বরগুনা ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ট্রলার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, গত এক বছরে এ ৬ জেলার কমপক্ষে পাঁচ হাজার জেলে জলদস্যুদের অপহরণের শিকার হয়েছে। জনপ্রতি ২ লাখ হারে কেবলমাত্র মুক্তিপণ খাতে জলদস্যুরা আদায় করেছে শত কোটি টাকারও বেশি। জাল, নৌকা, মাছসহ অন্যান্য সরঞ্জাম লুট করেছে আরও শত কোটি টাকার। এছাড়া, বাওয়ালি, মৌয়াল, শুঁটকি জেলে-শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশাজীবীর কাছ থেকেও অন্তত ৫০কোটি চাঁদা আদায় করেছে। সব মিলিয়ে জেলেরা দৃশ্যমান খাতগুলো থেকেই গত এক বছরে আড়াই শ’ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে। অদৃশ্যমান খাত রয়েছে আরও অনেক। যেমন টোকেনের বিনিময়ে জলদস্যুরা প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা আয় করে। সাগরে ইলিশ ধরার জন্য অধিকাংশ জেলে জলদস্যুদের কাছ থেকে আগাম টোকেন সংগ্রহ করে। টোকেন দেয়া হয় মৌসুমভিত্তিক। আষাঢ় থেকে কার্তিক পর্যন্ত ইলিশ মৌসুম এবং পরবর্তী সাত মাস পৌষ মৌসুম। একেকটি মৌসুমের জন্য জেলেরা জলদস্যুদের কাছ থেকে পৃথক টোকেন সংগ্রহ করে। প্রতিটি টোকেনের জন্য জলদস্যুরা সর্বনিম্ন ১০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে। ট্রলারে টোকেন সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। আবার অনেক সময় এমন ঘটনাও ঘটে জেলেরা জলদস্যুদের একটি বাহিনীর কাছ থেকে টোকেন সংগ্রহ করেছে। অথচ অপর এক জলদস্যু বাহিনী এসে তাদের সর্বস্ব লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৮ দিন পরে ফিরে আসা রাঙ্গাবালী উপজেলার কোড়ালিয়া গ্রামের ট্রলার মালিক আলমগীর জলদস্যুদের আস্তানা এবং কার্যক্রমের বিবরণ দিতে গিয়ে জানান, অধিকাংশ জলদস্যু বাহিনীর আস্তানা সুন্দরবনের এতটাই গভীরে যে, সেখানে সাধারণের পৌঁছানো একেবারেই দুঃসাধ্য। সরু বা চিকন খালের দু’পাড় ঘেঁষে তারা আস্তানা গড়ে তোলে। বড় গাছের মাথায় উঠে তারা আশপাশে নজরদারি চালায়। তাদের কাছে অত্যাধুনিক বাইনোকুলার পর্যন্ত রয়েছে। রয়েছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। ৭৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৭ দিন পরে ফিরে আসা একই উপজেলার ছোটবাইশদিয়া গ্রামের রফিক মাঝি জানান, প্রত্যেকটি জলদস্যু বাহিনীর কাছে দ্রুতগতির নৌযান রয়েছে। কোনক্রমে জলদস্যু বাহিনীর প্রধান মারা গেলে ২/৪ দিনের মধ্যে দলটি আবার সংগঠিত হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে দলটির দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ব্যক্তি বাহিনীর হাল ধরে। কখনো দলের নাম পরিবর্তন হয়। আবার কখনো পুরনো নামেই দলটি পরিচালিত হয়। যে কারণে কোনক্রমেই জলদস্যুতা একেবারে নির্মূল হচ্ছে না। প্রায় এক মাস জলদস্যুদের আস্তানায় বন্দীজীবন কাটিয়েছেন গলাচিপার দক্ষিণ পানপট্টি গ্রামের ত্রিশোর্ধ ফিরোজ গাজী। দু’ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা ফিরোজ গাজী সঙ্গী ৬ জেলেসহ অপহৃত হয়েছিলেন দুর্ধর্ষ মোতালেব বাহিনীর হাতে। তিনি জানান, সাগরে তাদের ট্রলারটি বিকল হয়ে গিয়েছিল। মোতালেব বাহিনীর জলদস্যুরা তাদের ট্রলারটি ৭/৮ ঘণ্টা দূরত্বের পথ টেনে সুন্দরবনের ঘন বনের মাঝে সরু একটি খালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের আলাদা করে ফেলা হয়। তার ট্রলারের কয়েক লাখ টাকার ইলিশ জলদস্যুরা মাত্র দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপরে কেবলমাত্র তার একার মুক্তির জন্য মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করে। তাকে একটি নৌকার ছোট্ট পাটাতনের মধ্যে আরও অনেকের সঙ্গে গাদাগাদি করে রাখা হয়। পালানোর কোন পথ ছিল না। তার পরে ছিল বাড়তি সতর্কতা। তিনি আরও জানান, প্রত্যেক জলদস্যুর হাতে ছিল একনলা অথবা দোনলা বন্দুক। কারও কারও হাতে ছিল স্টেনগান এবং কাটা রাইফেল। সারা শরীরে বাধা অজস্র গুলি, গ্রেনেড। জলদস্যুদের কেউ কেউ উঁচু গাছের ওপর বসে থাকত। তাদের ট্রলারে লোহার পাত বসানো রয়েছে। যাতে প্রতিপক্ষের গুলি ট্রলার ভেদ করতে না পারে। তাদের নিজেদের রান্না নিজেদের করতে হতো। এক সময় তাদের চাল-ডাল ফুরিয়ে গেলে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। তাদের যে খালের মধ্যে রাখা হয়েছে সেই খালে আরও আগে থেকে মুক্তিপণের দাবিতে কয়েক শ’ নৌকা বাঁধা ছিল। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মাছ ধরার জন্য প্রতিটি ছোট নৌকা থেকে জলদস্যুরা প্রতিসপ্তাহে তিন শ’ এবং বড় নৌকা থেকে ১ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে। যারা চাঁদা দিতে ব্যর্থ হয়, তাদের নৌকা এভাবে আটক করে রাখা হয়। আটক নৌকার জেলেদের নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। কাউকে কাউকে খুনও করা হয়। নিজের ভয়ঙ্কর দুঃসহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ফিরোজ গাজী আরও বলেন, সুন্দরবনে বেশ কয়েকটি জলদস্যু বাহিনী রয়েছে। এরমধ্যে মোতালেব বাহিনী ছাড়াও রাজু, কৃষ্ণ, জুলফু ও আব্বাস বাহিনী সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। মোতালেব বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ জনের মতো। কারোরই বয়স চল্লিশের বেশি নয়। জলদস্যুতা ছাড়াও এ বাহিনী স্থানীয় জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিদের কাছ থেকে সপ্তাহ এবং মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করে। মোতালেব বাহিনী চোরাচালানের সঙ্গেও যুক্ত। ভারত থেকে গভীর সাগর হয়ে যে সব চোরাচালানি পণ্যবাহী ট্রলার আসে, সেগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে। ফিরোজ গাজী ধারণা করেন- জলদস্যুতা চোরাচালানি ও চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য কাজের মাধ্যমে মোতালেব বাহিনী প্রতিবছর অন্তত শত কোটি টাকা আয় করে। এ বাহিনীর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ রয়েছে। আয়ের অর্থের একটা অংশ নিয়মিত ওপরমহলে পৌঁছে দেয়া হয়। যে কারণে এরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জলদস্যুদের এক বাহিনীর সঙ্গে অপর বাহিনীর প্রায়ই যুদ্ধ হয়। তাতে অনেকে মারাও যায়। তথ্যানুন্ধানে জানা গেছে, ‘শীর্ষ বাহিনী’ প্রধান জুলফিকার ওরফে জুলফু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর তার সেকেন্ড ইন কমান্ড দারোগা বেলাল নতুন একটি বাহিনী গঠন করেছে, যা দারোগা বেলাল বাহিনী নামে পরিচিত। একই বাহিনীর আরেকটি গ্রুপ শীর্ষ বাহিনী নাম ব্যবহার করছে। আউয়াল বাহিনী প্রধান আউয়ালের বাড়ি বাগেরহাটের জয়মনি গ্রামে। বাহিনীতে ২৫-৩০ জন সদস্য রয়েছে। দারোগা বাহিনীর প্রধান এমদাদুলের বাড়ি খুলনার নিকলেপুরে। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা শুরুতে ১০-১২ জন হলেও এখন তা ৩০ ছাড়িয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি জলদস্যু বাহিনী এভাবে প্রতিবছর তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়েই চলছে। সাগরে ইলিশ শিকারী জেলেরা জানান, জলদস্যুদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এরপরেও জলদস্যুদের তৎপরতা সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে, খুব অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জনের সহজ সুযোগ। এক শ্রেণীর মৎস্য ব্যবসায়ী ইচ্ছা-অনিচ্ছা যে কারণেই হোক জলদস্যুদের সহায়তা করতে বাধ্য হচ্ছে। অধিকাংশ মুক্তিপণের অর্থ এদের মাধ্যমেই লেনদেন হয়ে থাকে। জলদস্যুদের এমন অব্যাহত তা-বে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের কয়েক হাজার জেলে এরই মধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছে। বহু জেলে পেশা বদলে বাধ্য হয়েছে। জলদস্যুদের তৎপরতা প্রসঙ্গে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, সরকার সামুদ্রিক মৎস্য খাত থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করলেও জেলে-ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। বরগুনার পাথরঘাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, জলদস্যুতার শিকার বহু জেলে এ বছর এখন পর্যন্ত সাগরে নামতে পারেনি। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে ইলিশ আহরণ মারাত্মক হারে ব্যাহত হতে পারে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হবে। বরিশাল র‌্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান জানান, সুন্দরবন অঞ্চলে র‌্যাব বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। যে কারণে জলদস্যুতা অনেক কমে গেছে। ভবিষ্যতেও অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাগরে জলদস্যুতা প্রতিরোধসহ অন্যান্য নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমের জন্য ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা নিয়ে কোস্টগার্ডের দক্ষিণ জোন গঠন করা হয়েছে। এর বেজ বা স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে ভোলায়। বর্তমান বেজ কমান্ডার একেএম জাকারিয়া জনকণ্ঠকে জানান, চলতি মৌসুমে সাগরে জলদস্যুতা প্রতিরোধে বর্তমানে কলাপাড়ার নিজামপুরে উচ্চগতিসম্পন্ন দু’টি হারবার পেট্রোল বোট রয়েছে। পাথরঘাটাতেও এ ধরনে কয়েকটি বোট রয়েছে। গভীর সাগরে যা দ্রুততার সঙ্গে পাওয়া মাত্র জলদস্যুতা রোধ করা সম্ভব হবে। গলাচিপায় একটি আউটপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সাগরে নিয়মিত টহল দেয়ার পাশাপাশি চলছে নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ ও অভিযান। ফলে এ বছর জলদস্যুতা অনেক কমে গেছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও জানান, জলদস্যুদের মূলত আশ্রয় প্রশয় দিয়ে থাকে প্রভাবশালীরা। স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে তাই তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য স্থানীয়দেরও এগিয়ে আসতে হবে। মোটকথা সাগরে জেলেদের নির্বিঘেœ মাছ ধরার সহায়তা করার জন্য কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে সব ধরনে ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে।
×