ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এই বুঝি ওরা ফিরে এসে আবার হামলা করল!

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৮ জুন ২০১৫

এই বুঝি ওরা ফিরে এসে আবার হামলা করল!

কে বলবে মাত্র কুড়ি বছর বয়স! এই বয়সেই কেমন যেন বুড়িয়ে গিয়েছে চেহারাটা। টুকটুকে ফর্সা মুখটা জায়গায় জায়গায় ঝলসে গিয়েছে। গাড় নীল রঙের ওড়নায় মুখ আড়াল করে রেখেছেন আফগান তরুণী মমতাজ। তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে উজ্জ্বল দুটি চোখ। চার বছর আগে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল পড়শি যুবক নাসির। এই ছেলের সঙ্গে জঙ্গী যোগসাজশ থাকায় তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি মমতাজ। তারপরও তাদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত সে। তা নিয়ে মমতাজের বাবার সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছিল এক দিন। কিন্তু সেসব পাত্তা দিত না নাসির। শেষে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন তার বাবা। ‘অপমানিত’ নাসির ছয় সঙ্গীকে নিয়ে এক রাতে মমতাজদের বাড়িতে ঢুকে এসিড ছুড়ে মেরেছিল তার মুখে। হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল তাকে প্রত্যাখ্যানের জবাবটা, ‘দেখি এবার কে তোকে বিয়ে করে!’ আর তারপর থেকেই কঠিন হয়ে উঠেছে জীবন। বহু বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। প্লাস্টিক সার্জারির যন্ত্রণা তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে তাড়া করে বেরাচ্ছে ভয়। মমতাজের দেয়া সাক্ষ্যে অপরাধীদের ১২ বছর কারাদ- দিয়েছিল আদালত। আফগানিস্তানের মতো দেশে যা এক রকম বিরল রায়। কিন্তু অপরাধীরা পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যায়। তারপর থেকেই আতঙ্ক, এই বুঝি ওরা ফিরে এলো। এবার পুরো পরিবারকেই হত্যার হুমকি দিয়েছে অপরাধীরা। আর তাই ঘরছাড়া। পরিবারকে নিয়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন কুন্দুজ প্রদেশের কোনও এক ঠিকানায়। বন্ধু বলতে পাশে রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। চিকিৎসা থেকে মামলা-মোকদ্দমার সব খরচ বহন করেছে তারাই। এমন বেঁচে মরে থাকা জীবনেও মমতাজের হাত ছাড়েননি একজন। চার বছর আগে যে ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাবা-মা, এ বছর শুরুর দিকে সেই ছেলের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছে তার। সে কথা জানালেন মমতাজ নিজেই। তার ভীত-সন্ত্রস্ত, দগ্ধ মুখটাতে খেলে গেল মিঠে লাজুক হাসি। -আনন্দবাজার পত্রিকা।
×