ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঋণদাতাদের শর্তাদি মানা হবে কিনা সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ ॥ সিপরাস

গ্রীসে ৫ জুলাই গণভোট

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৮ জুন ২০১৫

গ্রীসে ৫ জুলাই গণভোট

গ্রীসে বেলআউটের শর্ত বিষয়ে আগামী ৫ জুলাই গণভোট হবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপরাস টেলিভিশনে এই গণভোটের ঘোষণা দেন। দেশটির ঋণদাতাদের প্রস্তাবিত এক বেলআউট চুক্তির শর্তাদি গ্রহণ না প্রত্যাখ্যান করা হবে গ্রীক নাগরিকরা গণভোটে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশটির একজন মন্ত্রী বেলআউটের শর্তাদির বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রাসেলসে একক মুদ্রা ব্যবহারকারী ইউরো জোনের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে গ্রীসের চলা আলোচনায় অচলাবস্থার মধ্যেই গণভোটের ঘোষণাটি এল। খবর বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে সিপরাস বলেন, ‘গ্রীসের জনগণ ৫ জুলাই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি স্বাধীন থাকবে নাকি আন্তর্জাতিক অর্থ যোগানদাতাদের ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হবে।’ দেউলিয়া হওয়া ঠেকাতে হলে গ্রীসকে ৩০ জুনের মধ্যে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পাওনা ১৫০ কোটি ইউরো পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সেটি করার মতো অর্থ এ মুহূর্তে গ্রীসের কাছে নেই। এ জন্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা বেলআউট বাবদ অবশিষ্ট ৭২০ কোটি ইউরো ছাড় করার জন্য ব্যয় সংকোচন ও অর্থনৈতিক সংস্কারের শর্ত দিয়েছে। কিন্তু গ্রীস শুক্রবার শর্ত মেনে বেলআউটের অর্থ গ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। গ্রীসের আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা হলো ইউরোপিয়ান কমিশন, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) ও আইএমএফ। এর আগে বিষয়টি নিয়ে ইইউর সঙ্গে গ্রীসের কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চললেও দু’পক্ষ কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য এটি গণভোটে দেয়া হলো। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে গ্রীস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইএমএফকে দেয় অর্থ শোধ করতে পারবে না। যদি তাই হয় তবে গ্রীসই হবে প্রথম কোন উন্নত দেশ যাকে আইএমএফ দেউলিয়া তালিকাভুক্ত করতে চলেছে। সিপরাস টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ঋণদাতাদের দেয়া প্রস্তাবগুলো অবমাননাকর এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে গ্রীসকে কঠিন ব্যয়সংকোচন করতে হবে। তিনি বলেন, এসব প্রস্তাব কাজ, সমতা আর সম্মানের যে নীতি ইউরোপীয় আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে তারও লঙ্ঘন। গ্রীসের জনগণ কোন ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হতে পারে না। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করা হবে কি হবে না। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি সম্মান বজায় রেখে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় পৌঁছাতে গ্রীক সরকার গত ছয় মাস ধরে কাজ করেছে। আমাদের কৃচ্ছ্রমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। যাদের মধ্যে আছে শ্রমবাজারকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা, পেনশন খাতে বরাদ্দ কমানো এবং খাদ্যদ্রব্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও বিদ্যুত, ওষুধ ও হোটেল-রেস্তরাঁর মতো পরিষেবার ওপরও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপগুলো হতো পুরো গ্রীক জনগণের জন্য অবমাননাকর।’ অন্যদিক গ্রীস চেয়েছিল সবরকম ঋণ থেকে পুরোপুরি নিষ্কৃতি। ঋণদাতাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোন প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। সিপরাসের উন্নয়ন মন্ত্রী পেনাইইয়োতিস লাফাজানিস বেলআউটের শর্তাদির বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই সব প্রস্তাব মেনে নিতে গ্রীসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল। এদিকে জরুরী অর্থ যোগান বিষয়ে রবিবার গ্রীসের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ইসিবির বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। গ্রীসে গত ছয় বছর ধরে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই এ বছর জানুয়ারিতে সিপরাসের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী সিরিজা পার্টি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা গ্রহণ করে। দলটি মনে করে ব্যয় সংকোচন নীতি দেশের আর্থিক সমস্যার সমাধানের বদলে সমস্যা আরও জটিল করে তুলেছে।
×