ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৬৪ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ

ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগে নবদিগন্ত

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৭ জুন ২০১৫

ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগে নবদিগন্ত

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর ॥ ১০৬৪ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দিনাজপুরে রেলের সম্ভাবনার নবদিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। জাপানী আর্থিক সহায়তায় রেলের বিশাল উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে রেল পথে বাণিজ্য ও যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হবে সর্বোচ্চ মাত্রার সুযোগ। রেল রুট হবে এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের দিনাজপুরের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়নের মাত্রাকে এগিয়ে নিতে নেয়া হয়েছে ১ হাজার ৬৪ কোটি ১৫ লাখ ২৮ হাজার টাকার মেগা প্রকল্প। এর মধ্যে জাপানী উন্নয়ন কনসোটিয়াম ফোরাম অর্থ দিচ্ছে ৯শ’ ৮১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ৮২ কোটি ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকার যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল একনেকের বৈঠকে মেগা প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবরের সভায় প্রকল্প ব্যয় হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয় ১ হাজার ২৬ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পার্বতীপুর-পঞ্চগড় এবং পার্বতীপুর-বিরল সীমান্ত রেল পথের উন্নয়নে দীর্ঘদিনে নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। পাকিস্তান আমলেও এই গুরুত্বপূর্ণ এই ২টি রেল রুট ছিল উপেক্ষিত ও অবহেলিত। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের আগে পার্বতীপুর থেকে ভারতের রাধিকাপুর, মালদহ, রায়গঞ্জ, কাটিহারসহ ভারতীয় অংশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ছিল। এই রুটে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহন করা হতো। ’৬৫-এর যুদ্ধের পর ভারতের সঙ্গে রেল রুট বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের নেয়া মেগা প্রকল্পে পার্বতীপুর থেকে বিরলের সীমান্ত স্টেশন পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার এবং কাঞ্চন জংশন থেকে পঞ্চগড় স্টেশন পর্যন্ত ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ মিটার গেজ থেকে ডুয়েল ও ব্রডগেজে রূপান্তরের কাজ প্রায় শেষের পথে। এছাড়া ১৬ কিলোমিটার রেলপথ ১৪টি স্টেশনের লুপ লাইন হিসেবে স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে ১শ’ ৩১টি ছোট আকারের এবং ৮টি বড় আকারের রেল সেতু পুনর্নির্মাণের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৪টি রেল স্টেশন মন্মথপুর, চিরিরবন্দর, কাউগাঁ, কাঞ্চন, বিরল, মঙ্গলপুর, সেতাবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, ভোমরাদহ, শিবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, রুহিয়া, কিসমত এবং পঞ্চগড় রেল স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন করে প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয়েছে। রেলের পশ্চিমাঞ্চলের এক কর্মকর্তা জানান, পার্বতীপুর-কাঞ্চন রুটটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দেশের অন্যতম রেল জংশন স্টেশন পার্বতীপুরের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রুট। রেলের উত্তর-পশ্চিম অংশের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ কাঞ্চন-পঞ্চগড় রুট। প্রতিবছর এই রুটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী পারাপারসহ প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ২টি রুটের রেল পথ রয়েছে মিটার গেজ। তাই বাস্তবিক ক্ষেত্রে ট্রেন চলাচলে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ভারত ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে তাদের অংশের রাধিকাপুর স্টেশনের রেল পথ মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করে। বিরলের সঙ্গে মিটার গেজে রেল যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশের অংশের রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এর সঙ্গে কাঞ্চন স্টেশন থেকে বিরল পর্যন্ত মিটার গেজকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের কাজ প্রায় শেষের পথে। ২০১১ সালের জুন মাসে শুরু হওয়া এই মেগা প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালের জুন মাসে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হাজার কোটি টাকার অধিক এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে তমা কন্সট্রাকশন ও ম্যাক্স কন্সট্রাকশন কোম্পানি। দীর্ঘদিন পর দেশের অন্যতম রেল রুট পার্বতীপুর-পঞ্চগড় লাইনে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত রেল সংস্কারের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেল এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে সকলে আশাপ্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে বিরল সীমান্তের রেল পথ দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। একই সঙ্গে অবদান রাখবে জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
×