ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে ছিটকে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে!

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৭ জুন ২০১৫

বাংলাদেশকে ছিটকে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতেই ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এমন যখন পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে গেছে, তখন বাংলাদেশকে এ ট্রফি থেকে ছিটকে ফেলার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র চলছে! যে পরিকল্পনার সামনে থাকছে জিম্বাবুইয়ে। র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন ৭ নম্বরে। ৮ নম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ৯ নম্বরে আছে পাকিস্তান। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকা দলগুলোই আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করবে। সেই হিসেবে সামনে পাকিস্তানের ওয়ানডে খেলা থাকলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোন ওয়ানডে খেলা ছিল না। এখন পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে জিম্বাবুইয়ে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করতে চায়। সেটি আগস্টেই হবে। আর তাই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়েও এখন দেখা দিচ্ছে খানিক সংশয়। যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের একটি ওয়ানডে জিতে যায় বাংলাদেশ, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে কোন ধরনের সংশয়ই থাকবে না। আর যদি বাংলাদেশ একটিও জিততে না পারে তাহলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। আলোচিত হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি চ্যাম্পিয়ন হয়, জুলাইয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার পর পাকিস্তান যদি ত্রিদেশীয় সিরিজে রানার্সআপ হয়, সিরিজে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরস্পরের মোকাবেলায় যদি একটি করে ম্যাচ জিতে এবং জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দুই দলই সব ম্যাচ জিতে; তাহলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে পড়বে। যেহেতু বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে ফেলার পরিকল্পনা হচ্ছে, সবকিছু পরিকল্পনাকারীদের সাজানো নাটকের মতোই ঘটবে। তাতে বাংলাদেশকে এখন মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। সেটি কী? ত্রিদেশীয় সিরিজের দিকে নজর না দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে কোন একটি ম্যাচে হারিয়ে দিতে হবে। তাহলেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে সব সংশয় দূর হয়ে যাবে। আগস্টে আসলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল জিম্বাবুয়ের। অবশ্য ওই সিরিজের সূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এখন এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যোগ হওয়ায় বিষয়টি বেশ গোলমেলেই হয়ে গেছে। কারণ ভারতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ জেতায় র?্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন সাতে। অষ্টম দল হিসেবে শুধু লড়াইয়ের কথা পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এফটিপি অনুযায়ী, আগামী মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ রয়েছে পাকিস্তানের। এরপর আগস্টে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোয়ালিফাইয়ের ‘ডেডলাইন’ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোন ম্যাচ ছিল না। এখন হিসাবটা গোলমেলে করে দিতে পারে আলোচিত এ ত্রিদেশীয় সিরিজ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হিসাবের বাইরে থাকা জিম্বাবুইয়ে এ ত্রিদেশীয় সিরিজের মূল উদ্যোক্তা। তারাই উদ্যোগী হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘সম্প্রতি আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে। তবে এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।’ পাকিস্তান যথেষ্ট উৎসাহী এ সিরিজ খেলতে। র?্যাঙ্কিংয়ের জন্য এ সিরিজে অংশ নিতে যথেষ্ট আগ্রহী ওয়েস্ট ইন্ডিজও। সত্যিই যদি তা-ই হয়, হিসাবটা জটিল থেকে জটিলতর হবে বাংলাদেশের জন্য। এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটা ম্যাচ জিতলেই মাশরাফিদের সব ঝামেলা চুকে যায়। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জনের আনন্দে মাতার দুটি উপলক্ষ তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশে। সিরিজটা যাও-বা মুঠোয় এলো, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে নিশ্চিত থাকা যাচ্ছে কোথায়? চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। এখন বাংলাদেশই পড়ে যেতে পারে অনিশ্চয়তার মধ্যে। বাংলাদেশ যদি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে, তাহলে রেটিং পয়েন্ট হবে ৯৯। যদি ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ, তাহলে রেটিং পয়েন্ট হবে ৯৬। যদি সিরিজে একটিমাত্র ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ, তাহলে রেটিং পয়েন্ট হবে ৯২.৭। আর যদি বাংলাদেশ সিরিজে কোন ম্যাচই না জিততে পারে তাহলে হবে ৮৯.৮। অন্য দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং পয়েন্ট ৮৮.৪। ক্যারিবীয়রা সেপ্টেম্বরের মধ্যে আর কোন ম্যাচ না খেললে বাংলাদেশের চিন্তার কোন কারণ নেই। ত্রিদেশীয় সিরিজটা যদি সত্যিই হয়, সে ক্ষেত্রে কী হতে পারে? জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আছে। এই সিরিজে লঙ্কানদের ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ হারাতে পারলে পাকিস্তানের রেটিং পয়েন্ট হবে ৯৪। যদি পাকিস্তান ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয়, তাহলে রেটিং পয়েন্ট হবে ৯১.৭। ৩-২ ব্যবধানে জিততে পারলে রেটিং হবে ৮৯.৮। আর যদি শুধুমাত্র দুটি ম্যাচ জেতে, তাহলে হবে ৮৭.৮। যদি একটি মাত্র ম্যাচ জয় পায়, পাকিস্তানের রেটিং পয়েন্ট দাঁড়াবে ৮৫.৯। যদি কোন ম্যাচেই জয় না পায়, তাহলে পাকিস্তান ৮৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুযোগ পাওয়া থেকেই ছিটকে পড়বে। পাকিস্তান অন্তত তিন ম্যাচ জিতলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে চলে যাবে। সিরিজ হারলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে। আলোচিত ত্রিদেশীয় সিরিজ হলে, প্রত্যেক দল প্রত্যেকের সঙ্গে দুটি করে মোট চারটি ম্যাচ খেলবে এবং সেরা দুটি দল খেলবে ফাইনাল। পাকিস্তান যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যায়, তাহলে পাকিস্তান বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে কেউ জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে একটি ম্যাচ হারলেই দুই দলের কেউ বাংলাদেশের ওপরে যেতে পারবে না। তবে প্রথমপর্বে পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ একে অপরের সঙ্গে একটি করে জিতলে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে জিতলে দুই দলই বাংলাদেশের আগে চলে যাবে। তবে সেটা তখনই সম্ভব হবে, যদি বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারে এবং শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের কাছে হেরে যায়। বাংলাদেশ যদি এর মধ্যে একটি ম্যাচ জিতে যায়, তাহলে ওই ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়েও বাংলাদেশকে আটকানো যাবে না। তখন এক ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের রেটিং থাকবে ৯৩ পয়েন্ট। বাংলাদেশকে ধরতে পাকিস্তান যদি দারুণ খেলে, তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পিছিয়ে যাবে। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক ভাল খেললে পাকিস্তান পিছিয়ে যাবে। কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে শুধুমাত্র একটি ম্যাচ জিততে পারলেই বাংলাদেশের আর কিছু ভাবতে হবে না। আবার এই ত্রিদেশীয় সিরিজ না হওয়ার যুক্তিও দেখা যেতে পারে। পাকিস্তান যদি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ জিতে যায়, তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে তারাই আট নম্বরে চলে আসবে। তখন আর পাকিস্তান ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে চাইবে না। পাকিস্তান আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত হয়ে যাবে। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার ঝুঁকি নিতে চাইবে না।
×