ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের কেনাকাটা

বড় মার্কেট শপিংমলে বৃষ্টির বাগড়া, ক্রেতাশূন্য ফুটপাথ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৭ জুন ২০১৫

বড় মার্কেট শপিংমলে বৃষ্টির বাগড়া, ক্রেতাশূন্য ফুটপাথ

রহিম শেখ ॥ ঈদ কেনাকাটায় অনেকখানি বাদ সেধেছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। শুক্রবার ভোর রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা বর্ষণ ঈদ মার্কেটের বিক্রেতাদের শুধু হতাশই করেনি, ভোগান্তিতে ফেলে ক্রেতাদেরও। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক ও ধানম-ি হকার্স মার্কেটে রমজানের শুরু থেকেই কেনাকাটায় থাকে জমজমাট। আর ছুটির দিন হলে তো কথাই নেই। কিন্তু দিনভর বৃষ্টি আর অসহনীয় যানজট যেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের ছুটির দিনটিকে প- করে দিয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় শামিল হয়েছেন নগরবাসী। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বড় বড় মার্কেট, বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস ও শপিংমলগুলোতে ক্রেতার ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু সন্ধ্যায় সেই ভিড় বাড়লেও বৃষ্টিতে ফুটপাথের বিকিকিনি তলানিতে গিয়ে ঠেকে। শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানম-ি হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক ও গাউছিয়াসহ আশপাশের সব কয়টি মার্কেটের সামনেই ছিল পানিতে সয়লাব। তবে দোকানিরা ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সকালেই দোকান খুলে বসেন। ক্রেতারাও একেবারে নিরাশ করেনি বিক্রেতাদের। বৃষ্টির কারণে কাদা আর পানিতে মাখামাখি, যেন ঠিকমতো চলাফেরা করাই দায়। দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কোন কোন দোকানি তাদের ডামিগুলো সাজাতেও পারেননি ভালভাবে। শাড়ি-জামার ডিসপ্লে করতে পারেননি আগের মতো। ধানম-ি হকার্সের বিক্রেতা মিজান মিয়া জানান, আমাদের ক্রেতাদের বেশিরভাগই নারী। বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় নারীদের। তারপরও বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অনেক ক্রেতাই এসেছেন। কিন্তু বিকিকিনি অতটা ভাল হয়নি। শুক্রবার সকালে বৃষ্টির মধ্যে ঈদের শপিংয়ে এসেছেন ফাহিমা আক্তার ও তার স্বামী ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ। তারা বলেন, শুক্রবার ছাড়া কেনাকাটা করার উপায় নেই। আগাম ভিড় সামলাতে বৃষ্টির মধ্যেই তাই মার্কেটে আসা। এই দম্পতি জানালেন, তারা কিনেছেন শাড়ি, থ্রি-পিস ও কিছু জুয়েলারি। ঈদের সময় হওয়ায় দামটা একটু বেশি। স্ত্রী ফাহিমা আক্তার তার ব্যাগের থ্রি-পিস দেখিয়ে বলেন, এই থ্রি-পিস ঈদের আগে হলে অনায়াসে ২ হাজারে পেতাম কিন্তু সেই থ্রি-পিস এখন কিনতে হলো ৩ হাজার টাকায়। রাইসা ও সুমাইয়া মোহাম্মদপুর থেকে গাউছিয়া মার্কেটে এসেছেন ঈদের শপিংয়ে। তারা অভিযোগ করেন, যানজটের কারণে ৩০ মিনিটের পথ এসেছি ২ ঘণ্টায়। এখন বৃষ্টি থামছে না। কেনাকাটা আজকের মতো মোটামুটি শেষ কিন্তু রিক্সাওয়ালারা যেতে চাচ্ছে না। যারাও বা যেতে চায় ভাড়া হাঁকছে অনেক বেশি। তারা বলেন, বৃষ্টি ভাল লাগলেও হঠাৎ এত বেশি বৃষ্টি সবাইকে হতাশ করেছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শুক্রবার বিকেলের দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতার ভিড় বাড়তে থাকে। ছুটির দিন বলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটায় নেমে পড়েন অনেকেই। সকালের জলজট দুপুর গড়িয়ে অতিমাত্রায় যানজটে পরিণত হয়। বিকেলের দিকে নিউমার্কেট এলাকায় অনেকেই গাড়ি নিয়ে কেনাকাটা করতে এসে গাড়ি পার্ক করার জায়গা পাননি। মালিবাগ, মৌচাক এলাকার মার্কেটগুলোতেও অসহনীয় যানজটের মধ্যেই কেনাকাটা করেছেন। গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স ও নিউমার্কেটে ঈদ উপলক্ষে এবারও বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় হিন্দি ছবি, সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে ট্যাগ করা পোশাক। এছাড়া আধুনিক ও নতুন নতুন ডিজাইনের ভারতীয়, পাকিস্তানী ও দেশী সেলাই করা এবং সেলাইবিহীন থ্রি-পিসও বিক্রি হচ্ছে বিপণি বিতানগুলোতে। বৃষ্টির মধ্যেও নিউমার্কেটের ইমিটেশন গহনার দোকানগুলোতে তরুণীদের ভিড় দেখা গেল। পোশাক ও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনছেন তরুণীরা। আজিমপুর থেকে নিউমার্কেটে আসা গৃহবধূ সিনথিয়া ইসলাম জানান, পুরান ঢাকায় অনেক বড় বড় দোকান আছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমরা নিউমার্কেটে কেনাকাটা করেছি। এখানে দাম খুব একটা যে কম তা নয়, তবে অনেক চেনা দোকান আছে। বৃষ্টি হলেও শুক্রবার ছুটির দিন বলেই মার্কেটে এসেছি। শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশী পোশাকের পাশাপাশি এবার দেশী কাপড় ও ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের বুটিক হাউসগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা উপাদান ব্যবহার করে পোশাকে শতভাগ বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব রয়েছে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ মার্কেটে। মার্কেটের প্রথম তিনতলায় প্রায় দুই শতাশিক বুটিক হাউসে স্থান পেয়েছে দেশী কাপড়ে তৈরি ঐতিহ্যের পোশাক। এদিন বৃষ্টি উপেক্ষা করেই আজিজ মার্কেটে তরুণ-তরুণীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। তবে বিকিকিনি ভাল হয়নি বলে দাবি বিক্রেতাদের। বিক্রেতারা জানালেন, আজিজে সিল্কের পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে সুতি, খাদি, সিল্ক এবং তাঁতের কাপড়ের পাঞ্জাবি। হাতের কাজ, কারচুপি, স্প্রে, এমব্রয়ডারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে এসব পাঞ্জাবিতে। এছাড়া দেশী সুতি, তাঁত, খাদি, এ্যান্ডি ও মুগা কাপড়ের তৈরি সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, নানা রকম শাড়ি, থ্রি-পিস, টি-শার্টসহ রকমারি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিনে মার্কেট, বিপণিবিতানের পাশাপাশি ফুটপাথেও বৃষ্টির বাগড়া যেন দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে থাকে। দুপুরের দিকে এই বৃষ্টির মধ্যে নিউমার্কেটের ফুটপাথে নিত্যদিনের হাঁকডাক- ‘এক দাম দেড় শ’, যা নেবেন দেড় শ’ বা ‘এক দাম এক শ’, বাইছা লন এক শ’। শুধু নিউমার্কেট নয়, গুলিস্তান, ফার্মগেটসহ সব ফুটপাথেই বৃষ্টির কবলে পড়ে আটকে যায় বেচাকেনা। বিক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার বেচাকেনা একটু কম। দু’একদিন হলো মার্কেট জমেছে। এর মধ্যে বৃষ্টি অনেকটাই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
×