ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৬ জুন ২০১৫

আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ শুক্রবার শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই অগ্রণী সৈনিক। মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত মা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সংগঠক এ মহায়ীসী নারীর নেতৃত্বেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে করা সেই আন্দোলনই আজ এগিয়ে যাচ্ছে চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে। চলছে মানবতাবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মশাল জ্বালানো অসীম সাহসী এ নারীর প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় ধানম-ির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রদান করা হবে জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন (১৯৬১-১৯৭১)’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা করবেন সঙ্গীতজ্ঞ ও ছায়ানটের সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে প্রদান করা হবে জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক। ব্যক্তি হিসেবে অধ্যাপক অজয় রায়কে এবং সাংগঠনিকভাবে ছায়ানটকে প্রদান করা হবে এই পদক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। বক্তব্য রাখবেন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ইতিহাসবিদ ও লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রমুখ। জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিবেদিত করেন। যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধ সময়ের ডায়রি একাত্তরের দিনগুলি তার এক অনন্য সৃষ্টি। ১৯২৯ সালের ৩ মে অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে জাহানারা ইমাম জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পিতা আবদুল আলীর তত্ত্বাবধানে তিনি রক্ষণশীলতার বাইরে এসে আধুনিক শিক্ষা শুরু করেন। স্বামী প্রকৌশলী শরীফ ইমামও তাঁকে লেখাপড়ায় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ১৯৪৫ সালে কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। বিএড পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে বাংলায় এমএ পাস করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতার মাধ্যমে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। এর পর ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে তিনি আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ১৯৬৬ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৮ সালে তা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যোগ দেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ছেলে রুমী ও স্বামীকে হারান। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাঁর কেটেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ত্রাসের মধ্য দিয়ে। এ সময় তার মনের মধ্যে ছিল দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার স্বপ্ন। এ দুঃসময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের এসব বৃত্তান্ত তিনি দিনলিপি আকারে নানা চিরকুটে, ছিন্ন পাতায় ও গোপন সঙ্কেতে লিখে রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের এ দিনলিপি ১৯৮৬ সালে একাত্তরের দিনগুলি নামে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মর্মস্পর্শী এ বৃত্তান্ত জনমনে ব্যাপক সাড়া জাগায়। স্বাধীনতার পর জাহানারা ইমাম লেখালেখি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় কাটান। মুক্তিযুদ্ধে ছেলে রুমীর আত্মত্যাগ এবং নিজের অবদানের জন্য সবার কাছে আখ্যায়িত হন শহীদ জননী হিসেবে। ১৯৯২ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক হন। এ সময় একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের বিচারের দাবিতে গড়ে তোলা হয় গণআদালত। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রমে উৎসাহ যুগিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ হচ্ছেÑ অন্য জীবন (১৯৮৫), বীরশ্রেষ্ঠ (১৯৮৫), জীবন মৃত্যু (১৯৮৮), চিরায়ত সাহিত্য (১৯৮৯), বুকের ভিতরে আগুন (১৯৯০), নাটকের অবসান (১৯৯০), দুই মেরু (১৯৯০), নিঃসঙ্গ পাইন (১৯৯০), নয় এ মধুর খেলা (১৯৯০), ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস (১৯৯১) ও প্রবাসের দিনলিপি (১৯৯২)।
×