ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাহের ও ননী আমার ভাইসহ ৬ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৬ জুন ২০১৫

তাহের ও ননী আমার ভাইসহ ৬ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নেত্রকোনার দুই রাজাকার মোঃ ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী মোঃ আমির উদ্দিন জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার ভাই সিদ্দিকুর রহমানসহ ৬ জনকে তাহের ও ননীসহ কয়েকজন রাজাকার গুলি করে হত্যা করেন। এর দুই-তিন দিন পর ভাইকে হত্যার খবর জানতে পারি আমরা। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৬ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার। প্রসিকিউশনের সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আমির উদ্দিন। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৮০/৮২ বছর। আমার ঠিকানা- গ্রাম কামালাগতি, থানা ও জেলা- নেত্রকোনা। ১৯৭১ সালে সংগ্রামের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ৩৭/৩৮ বছর। তখন আমি কৃষি কাজ করতাম। ১৯৭১ সালে বিরামপুর বাজারে আমার ছোট ভাই সিদ্দিকুর রহমানের একটি কাপড়ের ব্যবসা ও দর্জির দোকান ছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ নবেম্বর বেলা আনুমানিক ১১টার সময় বিরামপুর বাজারের দিক হতে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আমি বাড়ি হতে ধীরে ধীরে বাজারের দিকে রওনা হই। বাজারে গিয়ে আমি দেখি যে, আসামি ওবায়দুল তাহের ও আতাউর রহমান ননী আমার ভাই সিদ্দিকুর রহমান, বদিউজ্জমান মুক্তা, আব্দুল মালেক শান্ত, ইসলাম উদ্দিন, ইসমাইল, লেবুসহ মোট ৬ জনকে আটক করে বেঁধে ফেলেছে। সাক্ষী আরও বলেন, তারা বাজারের পাশের বাড়ি হতে আরও একজনকে ধরে আনে, যার নাম এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না। তারা আটকৃতদের লক্ষীগঞ্জ খেয়া ঘাটের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে ইসমাইল যার বয়স ১০/১১ বছর ছিল তাকে আটক করে। আমি ইসলাম উদ্দিনের বাবা হাফিজ উদ্দিন ও আব্দুল মালেক শান্তর বাবা ফয়েজ উদ্দিন আকন্দ লক্ষীগঞ্জ খেয়া ঘাটের কাছে একটি ঝোপের আড়াল থেকে দেখি যে , আসামি ওবায়দুল হক তাহের লেবু তালুকদারকে হিন্দু মনে করে গুলি করে মেরে নদীতে ফেলে দেয়। আটককৃত অন্যদের নদী পার করে পাকিস্তানী আর্মিদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আমরা ৪/৫ জন লোক নেত্রকোনা শহরে গিয়ে মঞ্জুরুল হক সাহেবের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে আটককৃতদের প্রাণ ভিক্ষা চাই। মঞ্জুরুল হক সাহেব আমাকে মুক্তিবাহিনীর দালাল বলে গালাগালি করে এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তিনি আরও বলেন যে, বাড়ি থেকে বের না হলে যাদের ধরে আনা হয়েছে তাদের সঙ্গে আমাকে জড়িত করে দেবে। আমরা মঞ্জুরুল হক সাহেবের বাসা থেকে বের হয়ে পুরাতন ফৌজদারী কোর্টের সামনে দেখি যে, আটককৃতদের একটি খোলা জীপে তুলে রডের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং বদিউজ্জামান মুক্তা ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বাংলা’ বলে চিৎকার করছে। আটককৃতরা পানি পানি বলে চিৎকার করলে তাদের পানি না দিয়ে আসামি ওবায়দুল হক তাহের ও আসামি আতাউর রহমান ননী তাদের ওপর নির্যাতন করতে থাকে। আমরা রাতে নেত্রকোনা শহরের পাশে কুরপা মীর বাড়িতে গিয়ে রাত যাপন করি। রাত আনুমানিক ১২টা ১টার দিকে মোক্তারপাড়া ব্রিজের দিকে হতে কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। সকাল বেলা আমরা ব্রিজের কাছে গেলে লোকজন বলাবলি করতে থাকে যে, গতকাল যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে আনা হয়েছিল তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা আরও দেখি যে, আসামি ওবায়দুর হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীসহ অন্যান্যরা রাজাকাররা ফাঁকা গুলি করে আনন্দ-উল্লাস করছে। স্থানীয় কয়েকজন লোক আমাদের পরিচয় জেনে আমাদের ব্রিজের দিকে না গিয়ে তাড়াতড়ি বাড়ি ফিরে যেতে বলে। আমরা শহরের দিকে না দিয়ে রিক্সাযোগে বাড়ি ফিরে আসি।
×