ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিভিউ মিটিং

জালনোট চক্রের শেকড় উপড়ে ফেলতে কঠোর অভিযানের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৬ জুন ২০১৫

জালনোট চক্রের শেকড় উপড়ে ফেলতে কঠোর অভিযানের আহ্বান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জালনোট চক্রের শেকড় উপড়ে ফেলতে কঠোর অভিযান পরিচালনাসহ জামিনে থাকা এ সব অপরাধীদের ওপর নজরদারি জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জাল নোট প্রতিরোধকল্পে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক এক সভায় এ অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জাল নোট প্রতিরোধে জনসচেতনা বাড়াতে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জাল নোট প্রতিরোধে সমন্বিত প্রয়াসের অংশ হিসেবে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং দেশের সব বাণিজিক ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রহিম জনকণ্ঠকে বলেন, এটা মূলত রিভিউ মিটিং ছিল। কারণ বড় বড় উৎসব এলে নগদ টাকার লেনদন বাড়ে। এ সময়ে নোট জালকারী চক্রগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠে। এ জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে তৎপর থাকার অনুরোধ করেছি। একই সঙ্গে নোট জালকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত যারা বর্তমানে জামিনে বাইরে রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নজরদারি জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, একই সভায় দেশের সব ব্যাংকে জনসম্মুখে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ভিডিও প্রচারের নির্দেশনা দিয়েছি। একই সঙ্গে ব্যাংকিং কর্মদিবসে লেনদেনের সময় জাল নোট এড়াতে প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে নোট পরীক্ষার কথা বলেছি। তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ শাখা অফিসগুলো থেকে তফসীলি ব্যাংকের সঙ্গে জাল নোট প্রতিরোধে আলোচনা করা হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলি করা হবে ব্যাংক নোটের আসল বৈশিষ্ট্য সংবলিত এক লাখ হ্যান্ডবিল। দেশের গুরুত্বপূর্ণ শপিংমলে জাল নোট শনাক্তকরণে এফবিসিসিআইকে ২০০ মেশিন সরবরাহ করা হবে। এছাড়া ঈদ পর্যন্ত নিয়মিত পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে জাল নোট বিষয়ে প্রচার চালানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার জাল নোট প্রতিরোধে প্রতি জেলায় নানাধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে ঈদ ঘিরে জাল নোটের যে ব্যাপকতা দেখা যায়, তা এবার থাকবে না। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট বেশি জাল হয়। এজন্য এসব নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত কয়েক লাখ পিস হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিসের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কাউন্টারের মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে এটিএম মেশিনে টাকা ঢোকানোর আগে তা পরীক্ষা করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বিষয়ক পোস্টার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইউএনও অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের অফিসে নেট দিয়ে আবদ্ধ নোটিস বোর্ডে টানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সচেতনতা বাড়াতে রমজান মাসজুড়ে প্রতিসপ্তাহে আসল ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন অন্তত পাঁচটি পত্রিকায় প্রচার করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টিভি চ্যানেলগুলোতে জাল নোটের ওপর তৈরিকৃত ভিডিও প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, জাল নোট প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসগুলোর উদ্যোগে সারাদেশে কর্মশালা ও সচেতনামূলক কর্মসূচী নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ৮টি উপজেলায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কর্মশালায় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, শিক্ষক ও এলাকার জনগণকে রাখা হয়েছে। আসল নোট চেনার সহজ উপায় ॥ সম্প্রতি জাল টাকা প্রতিরোধে আসল নোটের বৈশিষ্ট্য সংবলিত বিজ্ঞাপন প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সম্বলিত ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রধান চারটি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞপনটিতে। ১। প্রত্যেক প্রকার নোটেই মূল্যবান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লগো সম্বলিত নিরাপত্তা সুতা রয়েছে। নোটের মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লগো নিরাপত্তা সুতার ৪টি স্থানে মুদ্রিত আছে। নোট চিত করে ধরলে নিরাপত্তা সুতায় মূল্যমান এবং লগো দেখা যাবে। কিন্তু কাত করে খাড়াভাবে ধরলে তা কালো দেখা যাবে। এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত বা নোটের কাগজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নখের আঁচড়ে বা মুচড়িয়ে উক্ত নিরাপত্তা সূতা কোনক্রমেই উঠানো সম্ভব নয়। জাল নোট নিরাপত্তা সুতা সহজেই নখের আঁচড়ে বা মুচড়ানোতে উঠে যায়। ২। প্রত্যেক প্রকার নোটের উপরের ডানদিকে কোনায় ইংরেজী সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান রং পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত রয়েছে। ১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট আস্তে আস্তে নড়াচড়া করলে নোটের মূল্যমান লেখাটি সোনালী হতে ক্রমেই সবুজ রং-এ পরিবর্তিত হয়। একইভাবে ৫০০ টাকা মূল্যমানের নোটে ৫০০ মূল্যমান লেখাটি লালচে হতে পরিবর্তিত হয়ে সবুজ হয়। জাল নোটে ব্যবহৃত এ রং চকচকে করলেও তা পরিবর্তিত হয় না। ৩। প্রত্যেক প্রকার নোটের সম্মুখ ও পশ্চাত পৃষ্ঠের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান এবং ৭টি সমান্তরাল সরলরেখা উঁচু-নিচু (খসখসে) ভাবে মুদ্রিত আছে। তাছাড়া, নোটের ডানদিকে ১০০ টাকার নোটে ৩টি, ৫০০ টাকার নোটে ৪টি এবং ১০০০ টাকার নোটে ৫টি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে যা হাতের স্পর্শে উঁচু-নিচু (খসখসে) অনুভূত হয়। ৪। প্রত্যেক প্রকার নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান প্রতিকৃতির তুলনায় উজ্জ্বল দেখাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞাপনটিতে আরও বলা হয়, এসব বৈশিষ্ট্য জাল নোটে সংযোজন করা সম্ভব নয়। ভেজাল ইফতারি রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমজান উপলক্ষে ভেজাল ইফতারি ও খাবারের বিরুদ্ধে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত এ অভিযান ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কুদ্দুস আদালতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করা হয়। ডিএমপি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কুদ্দুস জানান, অষ্টব্যঞ্জন রেস্টুরেন্ট, স্টার হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, আমতলী রেস্টুরেন্ট, ঘরোয়া হোটেল, মালঞ্চ রেস্টুরেন্ট এ্যান্ড ফাস্ট ফুডে অভিযান চালানো হয়। তিনি জানান, অষ্টব্যঞ্জন প্রতিষ্ঠানকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রাখা, গ্লাভস ব্যবহার না করা। এমনকি মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর আমতলী রেস্টুরেন্টে ময়লা-নোংরা পরিবেশে খাবার রাখা। গ্লাভস ব্যবহার না করা। ৪ দিন আগের বাসি খাবার ও পোড়া তেল ব্যবহার করায় আমতলী রেস্টুরেন্টকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘরোয়া হোটেলে ৪ দিন আগের পচা-বাসি খাবার, ২ দিন আগের মুরগির রোস্ট ও মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় ৩ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে।
×