ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ সামনে রেখে দম ফেলার ফুরসত নেই ব্যবসায়ীদের

ইসলামপুরের পাইকারি কাপড় বাজারে রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৬ জুন ২০১৫

ইসলামপুরের পাইকারি কাপড় বাজারে রমরমা বাণিজ্য

রহিম শেখ ॥ রোজার ঈদ সামনে রেখে সারাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশী কাপড়ের অন্যতম পাইকারি বাজার ঢাকার ইসলামপুর। খুচরা ব্যবসায়ীদের আগমনে ইসলামপুরে এখন স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি ভিড়। কাপড়ের গজ মাপা, খাতায় পরিমাণ তোলা, টাকা গুনতি, মালবোঝাই করে ট্র্যাক-কাভার্ডভ্যান, লঞ্চ কিংবা ঠেলাগাড়ি করে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এখন হরহামেশাই সবার নজর কাড়ছে। বেচাকেনার চাপে দম ফেলার সময় নেই এখানকার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বস্ত্র ব্যবসায়ীর। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, থান কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশই ইসলামপুর থেকে সরবরাহ করা হয়। এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ভাল ব্যবসার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, ইসলামপুরে তিন হাজার ছোট ও মাঝারি মানের দোকান রয়েছে। পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর, নবাববাড়ি এলাকাজুড়ে দেশের বস্ত্রের সবচেয়ে বড় এই পাইকারি মার্কেট। এর বাইরেও রয়েছে সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট সাবেক চায়না বর্তমান আহসান মঞ্জিল সুপার মার্কেট। রয়েছে ইস্ট বেঙ্গল ও রয়েল প্লাজার মতো বড় পাইকারি মার্কেট। এছাড়া ছোট বড় মিলিয়ে আরও শতাধিক মার্কেট রয়েছে ইসলামপুর রোডে। বেশির ভাগ দেশীয় বস্ত্র কারখানার উৎপাদিত কাপড়ের শো-রুম আছে এখানে। তাছাড়া দেশের উৎপাদিত কাপড়ের পাশাপাশি থাই, চাইনিজ, পাকিস্তানী, ভারতীয়, জাপানী প্রভৃতি কাপড়ের বস্ত্রের সমাহার রয়েছে এসব মার্কেটে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার ঈদ সামনে রেখে শবেবরাতের পর থেকে মূলত ইসলামপুরে বেচাকেনা শুরু হয়। চলবে আগামী ১০ থেকে ১২ রমজান পর্যন্ত। এ ব্যাপারে ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান সোহেল জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামপুরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছেন। আগে এরা ভারত ও চীন থেকে আমদানিকৃত পোশাক বিক্রি করলেও এখন তারা দেশী তৈরি শাড়ি, থ্রিপিস, ওড়না, সার্টিং-স্যুটিং ও বোরকা বিক্রি করছেন। পাইকাররাও দেশী তৈরি এসব পোশাকের প্রতি ঝুঁকছেন। মাসুদুর রহমান জানান, সড়কে জ্যাম ও রাস্তা খারাপের কারণে একটু সমস্যা হলেও বেচাকেনা এবার অনেক ভাল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল থাকায় এবার ব্যবসা ভাল বলে জানান তিনি। ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, নরসিংদীর মাধবদী ও বাবুরহাট, ঢাকার সাভার, কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মিল থেকে শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি করিয়ে এনেছেন তারা। রাজধানীসহ রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা আসছেন এবং কাপড় কিনছেন। ইসলামপুর রোডের প্যারাডাইস ভবনের নিচতলায় কথা হয় সিলেট ও মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম ও হামিদ উল্ল্যাহর সঙ্গে। দোকানের জন্য রোজার আগেই দু’বার ইসলাপুর এসেছিলেন এই দুই ব্যবসায়ী। তারা জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাইকারিতে দাম একটু বেশি। ফলে ঈদে খুচরা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হবে বলে জানান তারা। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট সুপার শপের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক। দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে তিনিও কাপড় কিনতে এসেছেন ইসলামপুর। তিনি জানালেন, মূলত দেশী পোশাকই তিনি এখান থেকে কিনে থাকেন। ভারতীয় পোশাকের জন্য আলাদা সাপ্লাইয়ার রয়েছে। এবার বাচ্চাদের ও নারীদের পোশাকে বৈচিত্র্য এসেছে বেশ। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ের পাইকারি বাজার ছিল ইসলামপুরে। এখন আর সে রকম নেই, চিত্র পাল্টে গেছে। ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসার বড় অংশই এখন দেশী কাপড়ের দখলে। এবার ব্যবসা ভাল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী দোকানিরা। পাকিজা ফেব্রিক্স কালেকশনের সহকারী ম্যানেজার দীপক চন্দ্র ভৌমিক জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামপুরে তাদের মোট ছয়টি শোরুম রয়েছে। মূলত শবেবরাতের পর থেকে প্রথম রমজান পর্যন্ত তাদের বেচাবিক্রি হয়। এবার যে কোন বারের চেয়ে বেশি বেচাবিক্রি হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগই বেচা শেষ। তারা মূলত থ্রিপিস, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, শাড়ি ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন। থ্রিপিস বিক্রি করছেন ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ফেব্রিক্স ফ্যাশনের আজিজুর রহমান জানালেন, ৪০-৮০ টাকা দামে লেডিস আইটেমের গজ কাপড় বিক্রি করছেন তারা। মূলত নিম্নবিত্তদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা কাপড় সরবরাহ করেন। এখান থেকে কাপড় নিয়ে যান টেইলার্স ব্যবসায়ীরা। তারা সেলাই করে আবার দোকানিদের কাছে বিক্রি করেন। এজন্য তাদের ঈদ ব্যবসা শুরু হয় শবেবরাতের আগেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল থাকায় এবার ব্যবসা ভাল বলে জানান তিনি। এদিকে প্রতিবার বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটলেও এবার বিদ্যুতের কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে রানী টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবিরের মতোই সন্তোষ প্রকাশ করলেন অনেক ব্যবসায়ী। তবে রাস্তা খারাপ ও যানজটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, প্রতিবছরই এমনটি হয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে সমিতি থেকে মেয়রের কাছে রাস্তা ঠিক করে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হবে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাই ব্যবসায়ীরা চাইলেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। এ বিষয়ে ইসলামপুর ব্যবসায়ী সমিতির সংস্কৃতি সম্পাদক মিরাজ মোড়ল বলেন, ইতোমধ্যে ইসলামপুরের রাস্তা ঠিক করার জন্য বিল পাস হয়েছে। তাছাড়া যানজট নিরসনের জন্য স্থানীয় ওসি ও ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এসব ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের এখনও কিছু জানানো হয়নি। এদিকে উর্দু রোডেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা। বেচাকেনায় ব্যতিব্যস্ত ব্যবসায়ীদের দম ফেলার যেন ফুরসত নেই। ইসলামপুর ও উর্দু রোডের দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদ উপলক্ষে দেশী মিনি থ্রিপিস ৪২০-৫০০ টাকা, থ্রিপিস ৩৫০-২৫০০ টাকা, লুঙ্গি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঞ্জাবি ছোটদের ২৫০-২৫০০ টাকা, বড়দের পাঞ্জাবি ৪০০-৮০০০ টাকা ও থান কাপড়ের প্রিন্টের থ্রিপিস ৪৫০-৬৫০ টাকা।
×