ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সাহিত্য-সঙ্গীত ও অভিনয়ের সমন্বিত প্রযোজনা স্টর্ম স্টিল মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৬ জুন ২০১৫

সাহিত্য-সঙ্গীত ও অভিনয়ের সমন্বিত প্রযোজনা স্টর্ম স্টিল মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার দিনভর ঝরেছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সেই সূত্রে আষাঢ়ের রাতেও ছিল স্বস্তির পরিবেশ। আর এমন বর্ষণসিক্ত রাতে শিল্পানুরাগীদের ভিড় জমেছিল ধানম-ির গ্যেটে ইনস্টিটিউটে। মিলনায়তনভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে মঞ্চস্থ হলো ভিন্নধর্মী নাট্য প্রযোজনা স্টর্ম স্টিল। সাহিত্যের সঙ্গে সুর আর সংলাপের সমন্বিত পরিবেশনায় মুগ্ধ হলো দর্শনার্থীরা। একই সঙ্গে অনুভূত হলো শ্রবণ ও দর্শনের অনবদ্য উপলব্ধি। নানা ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে উঠে এলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আবর্তিত কাহিনী। বইয়ের পৃষ্ঠা ছেড়ে মঞ্চে উপস্থাপিত হলো অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হ্যাংকের স্টর্ম স্টিল শিরোনামের উপন্যাসটি। সুরেলা শব্দধ্বনি সঙ্গে সংলাপের সহযোগে প্রাণ পেল সাহিত্যকর্ম। উপন্যাসটিকে মঞ্চ উপযোগী করেছেন সঙ্গীতকার বরুণ কিশোর এবং অভিনয়শিল্পী তানাজী দাসগুপ্ত। আলোক পরিকল্পনা করেছেন নবীন কিশোর। সবার জন্য উন্মুক্ত প্রযোজনাটি আজ শুক্রবার রাত ৮টায় পুনরায় মঞ্চস্থ হবে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিয়ের ফ্যাশন হাউস যাত্রা বিরতি প্রাঙ্গণে। গ্যেটে ইনস্টিটিউটের এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে যাত্রা বিরতি। প্রায় ৭০ মিনিট ব্যাপ্তির প্রযোজনাটিতে লেখকের অনুভূতির ভেতর দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। সাহিত্য-গীত ও অভিনয়ের সমন্বিত প্রযোজনাটি আবর্তিত হয়েছে স্বপ্ন, বাগ্মিতা, চেতনার প্রবাহ ও স্মৃতির বীণাকে কেন্দ্র করে। গল্পের রেশ ধরে উঠে এসেছে জীবন ও মৃত্যবিষয়ক ভাবনা। সেই সূত্র ধরে এসেছে যুদ্ধ ও শান্তির বয়ান। এসেছে পরিবারের কথা। উচ্চারিত হয়েছে শেকড়সংলগ্নতার জবানবন্দী। সেই সঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে বর্তমানের সঙ্গে অতীত ও ভবিষ্যতের দ্বন্দ্ব। আর পুরো পরিবেশনাটিকে সংলাপ ও সুরে আশ্রয়ে এগিয়ে নিয়ে যান বরুণ কিশোর ও তানাজী দাসগুপ্ত। গিটার, কি-বোর্ড, ড্রামসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের সূর মূর্ছনা ছড়িয়ে দেন মিউজিশিয়ান বরুণ কিশোর। অন্যদিকের সেই সুরের ভেতর দিয়ে সংলাপ আওড়ে যান অভিনয়শিল্পী তানাজী দাসগুপ্ত। নিজের ছোড়া প্রশ্ন থেকে নিজেই খুঁজে নেন উত্তরটি। সুরের আশ্রয়ে সাহিত্যনির্ভর চমৎকার সংলাপে তানাজীর কথোপকথনে উচ্চারিত হয়Ñ এ উষর, এ বৃক্ষহীন প্রান্তর, এখন এ মধ্যবয়সে! কি-ই বা দেখার আছে হেথায়। সবদিক থেকে এ উষর ভূমি আমায় ঘিরে ধরছে। তোমার জন্য অনেক সময় ধরে বসে আছি। বিশ্বাস করো, আমি তোমার শান্তি বিনষ্ট করিনি। তবু তুমি আমায় শান্তি দাও না। আমরা সবাই কোথায় এসেছি এখন? এখানে বেলা কত? এখন বলতে আসলে কখন? এটি উষর তৃণভূমির গুল্মবহুল সময়। এটা কি এখন, নাকি ইতিহাস? এটা কি সেই সময়, যা হারিয়ে গেছে... হারিয়ে ফেলেছি আমি অথবা তুমি, নাকি অন্য কেউ? উনিশ শ’ ত্রিশ ছিল আমাদের সুখের বছর। সেটা ছিল সূর্য আর বরফের বছর...। জার্মান ভাষায় রচিত স্টর্ম স্টিল উপন্যাসটির ইংরেজী অনুবাদ করেছে ভারতের কলকাতার সিগাল বুকস। প্রযোজনাটির প্রদর্শনীর সময় উৎসুক গ্রন্থানুরাগীদের জন্য বইটি সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে। মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আধুনিকায়নের তাগিদ ॥ দেশের ঐতিহ্য মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আধুনিকায়তনে তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। তাদের মতে, এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হলেই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। নইলে পিছিয়ে পড়তে হবে। সবার দোরগোড়ায় এই শিল্প পৌঁছে দিতে হলে তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সর্বস্তরে পেশাদারিত্বের ছাপ থাকা জরুরী। দৃষ্টিনন্দন করে উপস্থাপনার পাশাপাশি বিপণন ব্যবস্থাতেও যুগোপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। একই ঐতিহ্যগত মান ধরে রাখতে। তবেই দেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বেঁচে থাকবে। ‘রাজশাহী বিভাগের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পী তৈরির কৌশল ও প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, বাজারজাতকরণ এবং মৃৎশিল্প ব্যবহার বিষয়ক জনসচেতনা কার্যক্রম’ শীর্ষক সেমিনারের বক্তারা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র বা সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ রিসার্চ (সিডিসিএইচআর)। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ রিসার্চের সভাপতি ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিডিসিএইচআর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আমিনুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দেশজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আগের চেয়ে অবহেলিত নেই। প্রাচীন সংস্কৃতি সংরক্ষণে সবধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। যেসব ঐতিহ্য ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে সেগুলো সংরক্ষণ সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মৃৎশিল্প দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এই শিল্পকে যদি যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে উন্নত করা যায় তাহলে এই শিল্পের যাত্রা আরও সুসংহত হবে। কিভাবে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সে জন্য যার যার জায়গা থেকে সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। মৃৎশিল্পকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করলেই চলবে না। এর বাজারজাত প্রক্রিয়াতেও আধুনিকায়ন করতে হবে। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সবার আগে নিজেকেই সচেতন হতে হবে। সেমিনারে মৃৎশিল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রবন্ধকার ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম। একই সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্ভাবনার দিক তুলে ধরা হয় নানা উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে। ক্ষুদে লেখক কর্মশালা শুরু ॥ লেখালেখির জগতটা শুধু বড়দের জন্য নয়, চাইলে ছোটরা হতে পারে লেখক। আর এ ভাবনায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আয়োজনে শুরু হলো ক্ষুদে লেখক কর্মশালা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালা। ঢাকার ৫২ জন ও ঢাকার বাইরের দুই ক্ষুদে অংশ নিচ্ছেন কর্মশালায়। কর্মশালাটি পরিচালনা করছেন টোকন ঠাকুর, চঞ্চল আশরাফ, সব্যসাচী হাজরা, শামীম রেজা ও শোয়েব সর্বনাম। কর্মশালা প্রসঙ্গে শিশু একাডেমির গ্রন্থাগারিক রেজিনা আক্তার বলেন, শিশুদের ব্যাপকা সাড়া পাচ্ছি এই কর্মশালায়। আমাদের লক্ষ্য ছিল ৩০ জন শিশুকে নিয়ে কর্মশালাটি পরিচালনা করব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে ৫৪ জনে পরিণত হয়েছে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সেরা ১০ জনের লেখা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রকাশিত মাসিক ‘শিশু’ ও দৈনিক ইত্তেফাকের ‘কচিকাঁচার আসর’-এ প্রকাশিত হবে। এছাড়া অংশগ্রহণকারী সবার জন্য থাকবে বিশেষ শুভেচ্ছা পুরস্কার।
×