ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুস্তাফিজের চ্যালেঞ্জ নিজেকে ধরে রাখা

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৬ জুন ২০১৫

মুস্তাফিজের চ্যালেঞ্জ নিজেকে ধরে রাখা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ যা করেছেন সেটা বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষক, আলোচক ও বিশেষজ্ঞরা এখন তাঁর বোলিং রহস্য ভেদের জন্য চুলচেরা নিরীক্ষণ শুরু করে দিয়েছেন। কারণ অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েই থামেননি, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ এবং তৃতীয় ম্যাচে ২ উইকেট শিকার করেছেন। তিন ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে বিস্ময়কর এক নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, যা বিশ্বরেকর্ড! এখন তাই সবার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে মুস্তাফিজ। আর সেজন্যই পরের যে কোন সিরিজ কিংবা ম্যাচে বাড়তি একটা চাপে থাকবেন এ ১৯ বছর বয়সী সাতক্ষীরার তরুণ। ক্ষুরধার বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং প্রতিপক্ষ শিবিরে আতঙ্কের নাম হিসেবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ মুস্তাফিজের জন্য। বাংলাদেশ পেসারদের জন্য স্বর্গরাজ্য নয়। এর আগে অনেক পেসার এসেছেন এবং চলে গেছেন অন্তরালে কিছুদিন পরেই। অনেকেরই অভিষেক হয়েছে স্বপ্নের মতো, শুরুর দিকে দারুণ প্রভাব খাটিয়েছেন প্রতিপক্ষ শিবিরের ওপর। কিন্তু এর মধ্যে অনেকেই হারিয়ে গেছেন, অনেকেই লড়ছেন ইনজুরির সঙ্গে এবং ফিটনেস ফিরে পেতে। বড় উদাহরণ মাশরাফি বিন মর্তুজা। দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ থেকে দীর্ঘদিন তিনি বাইরে সেই পরিমাণ ফিটনেস না থাকার কারণে। বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে তাঁর। বর্তমান দলে থাকা পেসারদের মধ্যে অন্যতম রুবেল হোসেনরও কিছুদিন আগে কাঁধে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে, তাসকিন আহমেদ বেশ কিছুদিন ইনজুরিতে ছিলেন। টেস্ট বোলার শাহাদাত হোসেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গেছেন। দীর্ঘদিন দলের বাইরে আছেন নাজমুল হোসেন, শফিউল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম শিবলু। আরেক পেসার আবুল হোসেন রাজু ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার লড়াইয়ে আছেন। এর কারণ এদেশের প্রতিভাধর পেসারদের সঠিক পরিচর্যা না থাকা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) যথেষ্ট যতেœর অভাব। তাই টর্নেডোর মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেও কিছুদিন পর হারিয়ে যাচ্ছেন পেসাররা। মুস্তাফিজের ভাগ্যে কি ঘটবে? এ বিষয়ে জাতীয় দলের পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক নিজেই বললেন, ‘মুস্তাফিজ খুব ভাল বোলিং করছেন। আমি মনে করি বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং সহায়তা করতে হবে একইভাবে চলার জন্য। তিনি এখনও যথেষ্ট তরুণ। আমরা তাঁকে কিভাবে সামাল দেব সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাঁরা যেন দীর্ঘসময় ধরে উচ্চ পর্যায়ের অনুশীলন করে। তিনি ১১ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু আমরা সবসময় তাঁর কাছ থেকে ৫ উইকেট প্রত্যাশা করতে পারি না। তিনি তাঁর যোগ্যতা দেখিয়েছেন। আমরা যদি তাঁর প্রতি যতœবান হই এবং যথেষ্ট সমর্থন জোগাই তিনি আমাদের জন্য অনেক বড় ম্যাচ উইনার হয়ে উঠবেন।’ আবার নতুন করে হাইপারফর্মেন্স বিভাগ চালু করার কারণে অবশ্য পেসারের হারিয়ে যাওয়াটা ঠেকানো সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করছেন। ইনজুরিমুক্ত থাকা এবং ফিটনেস ধরে রাখাটা এর মাধ্যমে সম্ভব হবে হয়তো মুস্তাফিজের জন্য। কিন্তু যে পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন সেটা কি ধরে রাখতে পারবেন? বরাবরই দেশের উইকেটগুলো স্পিনবান্ধব। পেসারদের জন্য স্বর্গ হিসেবে কখনও কোন উইকেট তৈরি হয়নি বলে অনেকেই বলেছেন পেসারদের নিরুৎসাহিত করছে এ ধরনের পিচ। নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটা ঘরোয়া আসরেই কম পেসারদের জন্য। তাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ এখন মুস্তাফিজের জন্য। কারণ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বেও এমন অনেক বোলার ভীতিকর হিসেবে পদার্পণ করেছেন, কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি। যেমন শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিস, নিউজিল্যান্ডের শেন বন্ড ও জিওফ এ্যালট। এরা হারিয়ে গেছেন। এ কারণেই ভারতীয় অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন বললেন, ‘তিনি যা করেছেন সেজন্য আসলেই ভাল লাগছে। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি মনে করি তাঁরা অনেক ভাল বোলার। অজন্তা মেন্ডিস, মুস্তাফিজুর, তাসকিন এরা সবাই খুব ভাল বোলার। আপনাকে এদের কৃতিত্বের প্রশংসা করতেই হবে। এর মধ্যে অনেকেই হয়তো এখন বাইরে চলে গেছেন। কিন্তু যখনই তাঁরা ফিরবেন তখনই বিস্ময়ের বস্তুতে পরিণত হবেন। আমি মনে করি এখান থেকেই তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জ শুরু হলো। একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে এ নৈপুণ্যই যে কারও চেয়ে ভাল বলে জানি। তাই এখন মানুষ তাঁর নৈপুণ্য দেখার জন্য আসবে।’ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলে বাঁহাতি পেসারের বেশ সঙ্কট। মুস্তাফিজুরের আবির্ভাবটা সেই অভাবও যেন পূরণ করলো। এ তরুণ যেভাবে ক্যারিয়ার শুরু করলেন তাতে বেশ সন্তুষ্ট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি মনে করেন দেশের বাইরের বড় আসরগুলো খেলার যোগ্যতা রাখেন মুস্তাফিজ। জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য নিজের প্রতিও যতœবান হওয়া উচিত মুস্তাফিজের। মাশরাফি বলেন, ‘মুস্তাফিজ যেভাবে বোলিং করেছে এভাবে খেলতে পারলে আইপিএল খেলার দাবি রাখে। মুস্তাফিজ যদি নিজের যতœ নেয় তাহলে আরও ১০-১৫ বছর খেলতে পারবে। আমি ১৪-১৫ বছর ধরে খেলছি। অনেক খেলোয়াড় দেখেছি এসেছে, আবার চলেও গেছে। ওর (মুস্তাফিজ) ভেতরে খুব ভাল জিনিস দেখলাম। কাল (মঙ্গলবার) দেখলাম বোলিংয়ের পর জিম করেছে। আমি যখন জিমে যাই দেখি একা একা জিম করছে। এটা কিন্তু ইতিবাচক দিক। বিশেষ করে ওর বয়স মাত্র ১৯। এখন থেকেই শিখছে, নিজের যতœ নিতে হবে, কিভাবে আরও লম্বা সময় দেশকে সার্ভিস দেয়া যায় এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।’
×