ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৬ জুন ২০১৫

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

মানব জাতি অরণ্যের সঙ্গে আদিম সম্পর্ক ঘুচিয়ে সভ্য হয়েছে সেই কত হাজার বছর আগে, তবু তার ভেতর বন্য স্বভাব মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বন্যেরা বনে শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। এক শ্রেণীর মানুষ বন্যপ্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। অনেক স্থানে বনখেকো হিসেবেও কোন কোন ব্যক্তি পরিচিতি পাচ্ছে। মানুষের এই লোভী স্বভাবের কারণেই দেশে দেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থেই। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সবুজ-শ্যামল দেশ। যদিও প্রকৃতি ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে দেশের বিপুল পরিমাণ বনাঞ্চল ও পশু-পাখির চারণক্ষেত্র হ্রাস পেয়েছে, তবু এ দেশ বিভিন্ন সঙ্কটাপন্ন প্রাণীর আশ্রয়স্থল তথা অভয়ারণ্য হিসেবে তাদের অস্তিত্ব সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বনাঞ্চল এবং বয়ে চলা অসংখ্য নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয়, যা নানা প্রজাতির পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এ দেশে ৩০-৩৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬৫০ প্রজাতির পাখি ও ১১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল। মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অতি আহরণের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্রমশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আবাসস্থল ধ্বংস, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব এবং অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ প্রয়াসের কারণে প্রায় অর্ধেকসংখ্যক বন্য প্রাণীই বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন (আইইউসিএন)-এর তথ্য মতে, সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল করা না হলে আগামী কয়েক দশকে মোট বন্যপ্রাণী প্রজাতির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বিলুপ্ত হতে পারে। ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ নামক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ গোষ্ঠীর তথ্য মতে, আবাসস্থল ধ্বংস, বিশেষ করে বন উজাড়করণের ফলে ১৬০০ প্রজাতির মেরুদ-ী প্রাণীর প্রায় অর্ধেক প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন। পাখির মধ্যে লাল মাথাযুক্ত হাঁস ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে; অন্যদিকে কালো তিতির, লাল মাথাযুক্ত শকুন, ঈগল, পেঁচা ও সাদা ঈগল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উভচর প্রাণীর মধ্যে সবুজ ব্যাঙ এবং সাপের মধ্যে পাইথন, কোবরা, ভাইপার সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। বুধবার জনকণ্ঠে র‌্যাবের হাতে ১৭টি রাজগোখরাসমেত একজন বিষ পাচারকারীর ধৃত হওয়ার সংবাদ আমাদের জানিয়ে দেয় বন্যপ্রাণী নিয়ে ব্যবসা এখনও বন্ধ করা যায়নি। একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এ জাতীয় দুর্বৃত্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কথায় বলে চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। তবু আইনানুগ শাস্তির ভীতি দেখিয়ে হলেও দুর্বৃত্তদের সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও পরিকল্পিত অভিযান প্রয়োজন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমানে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অনেক বন্যপ্রাণী হিমশিম খাচ্ছে। কোন কোন প্রাণী প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে বিলুপ্তির পথে। এজন্য প্রকৃতিকে সবার জন্যে বাসযোগ্য করার দায়িত্ব মানুষের। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বিলুপ্তির হাত থেকে বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করতে এর আবাসস্থল পুনরুদ্ধার, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও নির্বিচারে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ করতে হবে।
×