ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী এ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন এক লাখ টুইট হয়

আইএসের ওয়েব এ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বিশেষ পুলিশ টিম হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ২৫ জুন ২০১৫

আইএসের ওয়েব এ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বিশেষ পুলিশ টিম হচ্ছে

জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা কর্মসূচীর মূল হোতাদের ধরতে ইউরোপজুড়ে বিশেষ ওয়েব পুলিশ টিম গঠন করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সাহায্যে আইএস বিদেশী যোদ্ধা ও জিহাদী কনে সংগ্রহ করে থাকে। এই ইসলামী জঙ্গী গ্রুপটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার এ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টুইট করা হয়। খবর গার্ডিয়ান ও বিবিসির। ইউরোপীয় পুলিশ সংস্থা ইউরোপোলের ওয়েব ইউনিট এই উদ্দেশে পহেলা জুলাই থেকে কাজ শুরু করবে। চরমপন্থীদের ওয়েব এ্যাকাউন্টগুলো চিহ্নিত করার দুই ঘণ্টার মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদের। ইউরোপোলের ডিরেক্টর রব ওয়াইরাইট ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, এই নতুন রেফারাল ইউনিট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিরীক্ষণ করে যারা চরমপন্থীদের শিকারে পরিণত হতে পারে এবং যারা তরুণদের প্ররোচিত করছে তাদের চিহ্নিত করবে। তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে কারা তরুণদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, তাদেরই প্রথমে ধরা হবে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গতিশীল প্রকৃতির হওয়ায় এ কাজ করা অত্যন্ত কঠিন হবে। এই পুলিশ বাহিনী আইএসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ্যাকাউন্টগুলো চিহ্নিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবে। ইউরোপোল বলেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করতে রাজি হয়েছে তাদের নাম তারা প্রকাশ করা হবে না। যে এ্যাকাউন্টগুলো সবচেয়ে সক্রিয় সেগুলো শনাক্ত করতে তারা নেটওয়ার্ক এ্যানালাইটিক্স ব্যবহার করবে। বিশেষ করে যে এ্যাকাউন্ট থেকে সবচেয়ে বেশি বেশি বার্তা পাঠানো হয়েছে এবং অনলাইন কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উইনরাইট বলেছেন, এই নতুন ইউনিটের উদ্দেশ হলো অনলাইন রিংলিডারদের খুঁজে বের করা। সন্ত্রাস বিরোধী তদন্তকারীরা তাদের টার্গেট করা প্রায় ৫০ হাজার এ্যাকাউন্টের প্রত্যেকটিতে যেতে পারে না। কারণ এটি সংখ্যায় অনেক বেশি এবং নতুন যে কেউ সহজেই প্রবেশ করতে পারে। ইউরোপোলের ধারণা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস থেকে পাঁচ হাজারের বেশি নাগরিক আইএস নিয়ন্ত্রিত ভূখ-ে গিয়েছে। সংগঠনটি ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এক বিশ্লেষক বলেছেন, আইএসের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে টুইটার। ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষকরা বলেছেন, আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত টুইটারে এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনের তিন স্কুল ছাত্রী তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় পালিয়ে যায়। এরপরে জানা যায়, ওই তিন ছাত্রীর একজন শামীমা বেগমের সঙ্গে এক আইএস যোদ্ধার স্ত্রীর সঙ্গে টুইটারে যোগাযোগ ছিল। এদিকে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার থেকে তিনবোন তাদের নয় সন্তানকে নিয়ে সৌদি আরবে ওমরা পালন শেষে ভাইয়ের কাছে সিরিয়া পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে তাদের ভাই জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হয়ে যুদ্ধ করছে। ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের জিহাদী সংগঠন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এ্যারন জেলন বলেছেন, নতুন নিয়োগের জন্য সাধারণত টুইটার ব্যবহার করা হয়। তবে স্কাইপ, হোয়াটসএ্যাপ ও কিকের সাহায্যে কথোপকথনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়। ওয়াইরাইট বলেছেন, বিপথগামী কিছু কিশোর আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া গিয়েছে। কারণ তারা আইএসকে নিজেদের গ্যাংয়ের চেয়ে অনেক বড় গ্যাং বলে মনে করে। তবে এমন অনেকেই আইএসে যোগ দিয়েছে, যাদের নিজ দেশেই উজ্জ্বল ভবিষ্যত ছিল। তিনি আরও বলেন, আইএসের অর্থের উৎসও খুঁজে বের করা হবে। অর্থের উৎস অনুসরণ করলেই খুঁজে পাওয়া যাবে তারা কারা, তারা কি করতে চায় এবং তাদের সহযোগী কারা। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সন্ত্রাস বিরোধী ইন্টারনেট-রেফারাল ইউনিটভিত্তিতেই ইউরোপীয় এই নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×