ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উইকিলিকসের তথ্য প্রকাশ

নজরদারিতে ফরাসী প্রেসিডেন্টরা

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ২৫ জুন ২০১৫

নজরদারিতে ফরাসী প্রেসিডেন্টরা

ফ্রান্সের তিন প্রেসিডেন্টের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ)। ২০০৬-১২ সাল পর্যন্ত জ্যাক শিরাক, নিকোলাস সারকোজি ও ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের ওপর এই নজরদারি চলে। এনএসএ’র শীর্ষ পর্যায়ের গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও টেকনিকেল নথির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এ কথা বলেছে বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস। এদিকে ফ্রান্স বলেছে, মিত্রদের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি অগ্রহণযোগ্য। ওলাঁদ বুধবার এই ইস্যুতে তার প্রতিরক্ষা পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার বলেছে, ওলাঁদের যোগাযোগ মাধ্যম তাদের লক্ষ্যবস্তু নয় এবং ভবিষ্যতেও হবে না। তবে তারা এনএসএ’র অতীতের নজরদারি নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি। খবর এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ানে। এদিকে এলিসি প্রাসাদ এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন কোন কিছুই রবদাশত করবে না তারা। ২০১৩ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা ফরাসী নেতাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করবে না। এ বিষয়টি উল্লেখ করে তারা বিবৃতিতে আরও বলেছে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটি তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং এর প্রতি সম্মানও দেখাতে হবে। উইকিলিকস বলেছে, তারা এনএসএর ‘এস্পায়নেজ এলিসাই’ শিরোনামের গোপন নথিগুলো প্রকাশ করেছে। ওলাঁদ (২০১২-বর্তমান), সারকোজি (২০০৭-২০১২) এবং শিরাকের (১৯৯৫-২০০৭) পাশাপাশি ফ্রান্সের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফরাসী রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগের ওপর এনএসএ’র সরাসরি নজরদারি থেকে এসব নথি পাওয়া গেছে। উইকিলিকসের এই গোপন নথিগুলো ফরাসী দৈনিক লিবারেশন এবং নিউজ ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্ট প্রকাশ করছে। এই তথ্যগুলো এনএসএর সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের চুরি করা কি না এ স্পষ্ট নয়। এনএসএ জার্মানির ওপর নজরদারি করেছে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে কর্মকর্তা ও কোম্পানির ওপর নজরদারিতে জার্মানির বিএনডি গোয়েন্দা সংস্থা সহযোগিতা করেছে বলে খবর প্রকাশের পর পশ্চিমা মিত্রদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির এ তথ্য ফাঁস হলো। শীঘ্রই আরও ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ প্রকাশ হবে জানিয়ে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ বলেছেন, ফরাসী জনগণের জানার অধিকার রয়েছে যে, তাদের নির্বাচিত সরকারও কথিত মিত্রের বৈরী নজরদারির শিকার। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যত, ওলাঁদের প্রশাসন ও জার্মানির চ্যান্সেলর মেরকেলের সরকারের সম্পর্ক, জাতিসংঘের নির্বাহী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রচেষ্টা এবং ফ্রান্সের ওপর মার্কিন গোয়েন্দাগিরি বিষয়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরোধ নিয়ে ফ্রান্সের সরকারি কর্মকর্তাদের কথোপকথনের সারমর্মও এসব নথিতে উঠে এসেছে। ফরাসী প্রেসিডেন্টের সেল ফোনসহ এলিসি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বহু কর্মকর্তার সেল ফোন নম্বরও এসব নথিতে রয়েছে। গত সপ্তাহে সৌদি আরবের ৬০ হাজারের বেশি কূটনৈতিক তার বার্তা প্রকাশ করে উইকিলিকস বলেছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও পাঁচ লাখের মতো বার্তা প্রকাশ করবে তারা। উইকিলিকস বলেছে, এনএসএ’র নজরদারিতে দেখা যায়, ইউরো জোন থেকে গ্রীসের বেরিয়ে যাওয়ার পর কী ঘটতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্য ২০১২ সালের মে মাসে মন্ত্রিসভার একটি গোপন বৈঠক ডেকেছিলেন ওলাঁদ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সোস্যালিস্ট ওলাঁদ কনজারভেটিভ জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ‘হতাশ’ হয়েছিলেন। ২০১১ সালের ১০ জুনে এনএসএ’র নজরদারিতে পাওয়া আরেক নথিতে বলা হয়েছে, তৎকালীন ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছাড়াই ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা পুনরায় চালুর কথা ভাবছিলেন। এদিকে জ্যাক শিরাক ও সারকোজি আমলের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেলে এলিউ মঁ ফ্রান্সের একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, ফ্রান্স অনেক আগে থেকেই জানে যে কথোপকথনে আড়িপাতার মতো কারিগরি সক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আমরা অতো কাঁচা নই, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্টের কথোপকথন যা হয়েছে তা টেলিফোনে হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই আড়িপাতার ঘটনা ‘মিত্রদের মধ্যে আস্থার সম্পর্কে সমস্যা তৈরি করবে’। এদিকে ওয়াশিংটনের মঙ্গলবার রাতে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের যোগাযোগ মাধ্যমকে আমরা নজরদারি চালাচ্ছি না এবং ভবিষ্যতেও চালাব না। আন্তর্জাতিক উদ্বেগের সব বিষয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব এবং ফ্রান্স আমাদের অপরিহার্য অংশীদার। তবে তিনি এনএসএ’র অতীত নজরদারি কার্যক্রম নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট ও বৈধ জাতীয় নিরাপত্তাজনিত উদ্দেশ্য ছাড়া আমরা কোন বিদেশী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করছি না। এটি সাধারণ নাগরিক ও বৈশ্বিক নেতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
×