ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসময়ে জ্বলে উঠল ভারত!

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২৫ জুন ২০১৫

অসময়ে জ্বলে উঠল ভারত!

মিথুন আশরাফ ॥ যখন জ্বলে উঠার দরকার ছিল, তখন জ্বলে উঠতে পারেননি মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলিরা। যখন জ্বলে উঠলেন, তখন দেখলেন সর্বস্বই হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ হেরে গেছে ভারত। তাতে দলের ব্যাটসম্যানরা কিছুই করে দেখাতে পারেননি। এরপর তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে ঝলক দেখা গেল। তাতে ভারত বড় স্কোরই গড়ল। যে স্কোর নিয়ে জয়েও স্বপ্নও দেখছে। জয় হলে যে সম্মানটুকু বাঁচে। খেলা শুরুর আগে বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এ সিরিজে অসাধারণ খেলেছে।’ আর ধোনি বলেছেন, ‘২০০৭ সালের পর এমন মুহূর্ত আর পাইনি। খুবই হতাশাজনক।’ সেই হতাশা টস হেরে গিয়েও ধোনির কণ্ঠে ঝড়ল। তবে একটি লাভ বোধ হয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে হলো ধোনির দলের। সেটি কী? টস হেরেও আগে ব্যাট করতে পারলেন। তাতে ভারত এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩১৭ রানের বড় স্কোরই গড়ে নিল। যে স্কোর ভারতকে সিরিজে অন্তত একটি জয়ের আশাতেও ভাসাচ্ছে। তৃতীয় ওয়ানডে পর্যন্ত ভারত ইনিংসে একটি শতকও হলো না। এরপরও পরপর দুই ওয়ানডে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশই। এর প্রধান কারণ, প্রথম ওয়ানডেতে যেমন ২২৮ রানে অলআউট হয়ে ভারত ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও সেই ব্যর্থতা বজায় থেকেছে। এবার ২০০ রানেই গুটিয়ে গেছে ভারত! তাতে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানে ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে ৬ উইকেটের বড় জয়ই পেয়েছে। যে জয়গুলো ভারতকেও শিখিয়েছে, প্রতিপক্ষ যে দলই হোক; পাত্তা দিতে হবে। হেলায় কাটালে ফল বিপরীতমুখীই হয়। অনেক ঠেকে আসার পর যেন তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে ভারত ব্যাটসম্যানরা তা বুঝতে পারলেন। তাই তো যতই কষ্ট হোক, শেষপর্যন্ত শিখর ধাওয়ান ৭৫, মহেন্দ্র সিং ধোনি ৬৯, আম্বাতি রায়ুডু ৪৪, সুরেশ রায়না ৩৮ রান করেছেন। তাতে ভারতও জয়ের ভিত গড়েছে। জয় হয়েছে কি না, তা ম্যাচ শেষ হতেই বোঝা যাবে। তবে ভারত যে নিজেদের ভুল বুঝে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাই বোঝা গেছে। শুরু থেকেই ভারত ব্যাটসম্যানরা বুঝে খেলতে থাকেন। ধীরে ধীরে স্কোরবোর্ডে রান যুক্ত করতে থাকেন। ধাওয়ান এগিয়ে যেতে পারলেও রোহিত শর্মা আবারও ব্যর্থ হন। তবে ধোনি নেমে দলকে টেনে নিয়ে যান। ধোনি যে কতটা চাপে আছেন তা বোঝাই যাচ্ছে। দলকে জেতাতে কোন চেষ্টার ত্রুটি করছেন না। এমনকি চার নম্বর পজিশনে ব্যাট হাতে নেমে যান। তাতে সফলও হয়েছেন ধোনি। ধাওয়ান ও রায়ুডু একবার করে ‘নতুন জীবন’ পান। তবে খেলায় এমনটি হতেই পারে। সেই সুবিধা নিয়ে কে কতটা ভাল করতে পেরেছে, অনেক সময় এটিই দেখা হয়। ধাওয়ান ও রায়ুডু দুইজনই ‘নতুন জীবন’ পাওয়ার সুবিধা তুলে নিয়েছেন। ভারত এর আগে তিনবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩০০ রানের বেশি স্কোর গড়েছে। প্রতিবারই জিতেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের মাটিতেই এ নিয়ে তিনবার তিন শ’ রানের বেশি করল। এবার যে ভারত এত বড় স্কোর গড়ল, তাতে যেন স্বস্তিও মিশে থাকল। এর আগে কখনই ভারত যে বাংলাদেশ সফরে এসে এতটা চাপে থাকেনি। এমনই অবস্থা হয়েছে, ‘বাংলাওয়াশ’ হওয়ার সামনে পড়ে গেছে ভারত। সেই ভারত দলকে দুই ওয়ানডেতে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ বার বার দুমড়ে মুছড়ে গেছে। অবশেষে সেই ব্যাটিং লাইনআপ যেন লাইন খুঁজে পেল। তাতেও কী ভারত আহামরি কিছু করে ফেলেছে বলা যাবে? ভারত দলটির সিনিয়র ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সফরে আসতেই চাচ্ছিলেন না। যদি না আসতেন ধোনি, কোহলিরা তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াতো, তা অনুমান করাই যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন বাংলাদেশ ৩-০তে সিরিজ জিতল, তখন থেকেই ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশকে নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে। ধোনি, কোহলিরা আইপিএল শেষে যতই বিশ্রাম চান, তাতে কাজ হয়নি। শেষে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাংলাদেশে পাঠানোই হয়েছে। তাতেও ভারত কোন লাভ আদায় করে নিতে পারেনি! শুধুই হার হচ্ছে নিয়তি। লজ্জা আর লজ্জা পেয়েছে। এবার সম্মান বাঁচানোর ম্যাচে এসে ভারত জ্বলে উঠেছে। বলতে গেলে সিরিজ খোয়ানোর পর অসময়েই জ্বলে উঠেছে ভারত।
×