ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ননী ও তাহের আমার ভাইসহ ৬ জনকে হত্যা করে ॥ আয়েশার জবানবন্দী

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৫ জুন ২০১৫

ননী ও তাহের আমার ভাইসহ ৬ জনকে হত্যা করে ॥ আয়েশার জবানবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নেত্রকোনার মোঃ ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের ১০ম সাক্ষী আয়েশা আক্তার জবানবন্দীতে বলেছেন, ১৯৭১ সালের কার্তিক মাসের ২৮ তারিখে আমার ভাই বদিউজ্জামান মুক্তাসহ ৬ জনকে আসামি রাজাকার ওবায়দুল হক তাহের এবং আতাউর রহমান ননী ধরে নিয়ে যায়। এরপর নির্যাতন করে তাদের গুলি করে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সাক্ষীর জবানবন্দীর পর আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। আজ বৃহস্পতিবার পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর আপীল মামলায় ১৮তম অভিযোগের সপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বুধবার ৬ষ্ঠ দিনের মতো শুনানি হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপীল বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। নেত্রকোনার রাজাকার কমান্ডার ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে জবানবন্দী প্রদান করেছেন দশম সাক্ষী আয়েশা আক্তার। আজ পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এ সময় সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল এবং প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী। জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার। সাক্ষী আয়শা আক্তার বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বদিউজ্জামান মুক্তা সবার ছোট ছিল। ১৯৭১ সালের কার্তিক মাসের ২৮ তারিখে আমার ছেলে সবুজ ও ভাইয়ের ছেলে ফারুককে বিরামপুর বাজারে পাঠাই বদিউজ্জামান মুক্তারের খোঁজখবর আনতে। তারা বাজারে গিয়ে দেখতে পায়, আসামি রাজাকার কমান্ডার ওবায়দুল হক তাহের ও আসামি রাজাকার আতাউর রহমান ননীসহ কতিপয় রাজাকার আমার ভাইকে সিদ্দিকের দোকান থেকে এবং অন্য ৭ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে নির্যাতন করে তাদের নেত্রকোনা শহরে নিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা তারা আমাদের বাড়িতে এসে জানালে আমার মা মুক্তাবিন নেছা, বোন জোহরা আক্তার, ছেলে সবুজ, ভাইয়ের ছেলে ফারুকসহ নেত্রকোনা শহরে বড় নেতা মঞ্জুরুল হকের বাড়িতে যাই। সেখানে রাজাকাররা সব সময়ই আসা-যাওয়া করত। সাক্ষী আরও বলেন, ‘মঞ্জুরুল হক আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করেন এরা কারা। আমার মা তখন বলেন, আমি বদিউজ্জামান মুক্তারের মা, যাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা লোকজন আমাদের দেখিয়ে বলেন, এরা মুক্তিবাহিনীর মা- বোন। এ সময় মঞ্জরুল হক বলেন, তোমরা কি চাও? আমার মা তখন বদিউজ্জামানের প্রাণভিক্ষা চেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। তখন মঞ্জুরুল হক বলেন, বদিউজ্জামান মুক্তা ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিচ্ছে, সে বিদ্রোহী তাকে ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমরা কান্নাকাটি করে তার পায়ে পড়লে তিনি ননী এবং তাহেরকে ডেকে আমাদের বের করে দিতে বলেন।’ আয়শা আক্তার তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, আমরা বের না হতে চাইলে তাহের এবং ননী আমাদের নির্যাতন করে বের করে দেয়। তখন রাত হয়ে যাওয়ায় বন্যপাড়ায় মোর্তজা আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেই। এরপর ভাইয়ের খোঁজ নিতে সবুজ ও ফারুককে পাঠাই। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তাহের ও ননীসহ রাজাকাররা আমার ভাই বদিউজ্জামান মুক্তারসহ ৬ জনকে হত্যা করে ব্রিজের নিচে গুলি করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে। এর ২-৩ দিন পর আমার ভাইয়ের লাশ ব্রিজের কিছু দূরে কাটলি ঘাটে ভাসছে জানতে পেরে সে ঘাটে গিয়ে লাশ আমাদের বাড়ির ঘাটে নিয়ে আসি। এরপর রাত আনুমানিক ৪টায় আমার ভাইয়ের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করি। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। সাকা চৌধুরী ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর আপীল বুধবার ৬ষ্ঠ দিনের অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপীল মামলায় ১৮তম অভিযোগের সপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য উপস্থাপন চলছে। এ অভিযোগে চান্দগাঁওয়ের সালেহউদ্দিনকে (শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি) অপহরণ করে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আসামি পক্ষে এসব সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
×