স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিনবাঁধা ঘোড়ার মুখ, দড়িবাঁধা মহিষের মুখ, মায়ের সঙ্গে মেয়ের প্রতিচ্ছবি, বিচিত্র রঙের ফুল, নদীর পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা গ্রামের মেঠোপথসহ জল রঙে আঁকা কিছু চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে গ্যালারিতে। নিসর্গ, জনজীবন, মানুষ, পশু-পাখি, ফুল, লতা-পাতাসমৃদ্ধ বাংলার প্রকৃতি যেন ফুটে উঠেছে শিল্পী ইসকিন্দার মির্জার প্রতিটি চিত্রকর্মে। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘বাংলার জল রঙের ছোঁয়া’। শিল্পীর প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী হলেও প্রতিটি চিত্রকর্মে রয়েছে মুন্সিয়ানার পরিচয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি-২-এ বুধবার সকালে সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ড. নাসরীন আহমদ, বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আজিজ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা বলেন, ইসকিন্দার মির্জা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে এমএফএ সম্পন্ন করেছে। পরিশ্রমী ও প্রতিভাবান নবীন এ শিল্পীর কাজে ব্যতিক্রমী ও বাস্তবতার রূপ ফুটে উঠে। সে তার কাজের প্রতি আন্তরিক থেকে শিল্পের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়। তার আদর্শ হলো দেশ। সেই দেশের ছোঁয়া পাওয়া যায় তার চিত্রকর্মে।
প্রতিক্রিয়ায় শিল্পী ইসকিন্দার মির্জা বলেন, আমি জলরং নিয়ে বেশি কাজ করি। এ প্রদর্শনীতে ঘোড়া নিয়ে আমার বেশি কাজ করা হয়েছে। কেননা পুরান ঢাকার ঐতিহ্য গোড়ার গাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। তাই আমি শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে চেয়েছি এই ঐতিহ্য আরও দীর্ঘদিন বেঁচে থাক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অতিথিরা ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম দেখেন।
শিল্পী ইসকিন্দার মির্জার একক জলরং প্রদর্শনীর কাজগুলোতে স্থান পেয়েছে বাংলার প্রকৃতি, মানুষ ও পশু-পাখি। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে মোট ২৯টি চিত্রকর্ম। এতে বাংলার নরীদের কিছু চিত্রও স্থান পেয়েছে। মূলত জলরং ওয়াশ পদ্ধতিতে চিত্রকর্ম করা হয়েছে এবং এটাকে কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে তুলে ধরা হয়েছে কোন কোন চিত্রে। চিত্রকলায় রেখার দক্ষতা, রংয়ের প্রয়োগ কৌশল ও মেধার সমন্বয়ে নিজস্ব রীতির স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। তার ব্যবহৃত রেখা রঙ এবং আলোছায়া প্রতিটি চিত্রকে জীবন্ত ও অর্থবহ করে তুলেছে।
প্রদর্শনী উৎসর্গ করা হয়েছে শিল্পী ইসকিন্দার মির্জার মা-বাবা ও ফাহিমকে। প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এবং প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
‘কোলাজ কাব্য’ শিল্পী সুমন বৈদ্যর প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী ॥ ‘কোলাজ কাব্য’ শিরোনামে শিল্পী সুমন বৈদ্যর প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার জয়নুল গ্যালারি-১-এ। বুধবার বিকেলে সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল আজিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল র্বাক আলভী। প্রাচ্যরীতির টেকনিক সমুন্নত রেখে শিল্পী সুমন বৈদ্য তাঁর চিত্রকর্মগুলোতে জলরং, এ্যাক্রিলিক ও অক্সাইডের ব্যবহার করেছেন। প্রদর্শনীতে শিল্পীর সৃজনশীল ও মৌলিক ধারার ভাবরস প্রাধান্য পেয়েছে। চিত্রকর্মগুলোতে সমসাময়িক ঘটনা, অপরাধ, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-ভালবাসাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে একাডেমিক পর্বের কিছু চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে, যার মধ্যে শিল্পীর একাডেমিক দক্ষতার ছাপ স্পষ্ট।
প্রদর্শনীতে মোট চিত্রকর্মের সংখ্যা ২৪টি। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শনী খোলা থাকবে।