অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের আজ ৭ম দিবস। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে পাঞ্জেগানা নামাজসহ তারাবীহ নামাজের জামাতে উপচে পড়ছে অগুনতি মুসল্লি। আসলে মাহে রমজানে মুসলমানরা নতুন করে নামাজের স্বাদ গ্রহণ করে। আহকামে ইলাহী, তথা ঐশ্বরিক বিধানের হিকমত ও প্রজ্ঞার সামনে আমাদের সকলকেই মাথা ঝুঁকিয়ে দেয়া উচিত। এ অবিচল বিশ্বাস আমাদের থাকতে হবে যে, সালাত হলো বান্দার জন্য প্রেরিত আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ উপহার প্রধানতম ফরয, দ্বীনের অন্যতম মূল স্তম্ভ নাজাত ও মুক্তির পূর্বশর্ত, ঈমানের অতন্দ্র প্রহরী। আল্লাহতায়ালা বলেন : তোমরা সালাত কায়েম করো আর মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম : ৩১)। সূরা আ’লার ১৪-১৫ আয়াতে এসেছে : সফল ব্যক্তি সেই, যে পবিত্রতা অর্জন করেছে। আপন প্রতিপালকের নাম স্মরণে অতপর সালাতে মগ্ন থেকেছে।
প্রত্যেক সালাতের জন্যই আল্লাহ পাক সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল কোরানে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর সময় সহ ফরয করা হয়েছে।’ (সূরা নিসা : ১০৩)। অতএব নির্ধারিত সময় মতোই আমাদের সালাত আদায় করতে হবে। সালাতের সময়সমূহের প্রতি ইঙ্গিত করে আল কোরানে ইরশাদ হয়েছে : সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাত আঁধার হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করুন, আর ভোরের সালাতও। নিশ্চয় ফজরের সালাত (ফিরিশতাদের) উপস্থিতির সময়।- (সূরা বনী ইসরাঈল : ৭৮ ) সূরা ত্ব-হা’র ১৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে : আপন প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠে রত থাকুন সূর্যদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং দিনের শুরু ও রাতের শেষে তাসবীহ পাঠ করুন: যেন আপনি সুখী হন।’
সময়ের অল্প অল্প ব্যবধানে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করার পিছনে নিহিত রয়েছে আল্লাহতায়ালার বিরাট হিকমত। সালাতের এই বারংবারতা ও প্রাত্যহিকতার মাধ্যমে মানুষ তার আত্মা ও রূহের জন্য লাভ করে পরিপূর্ণ ও পুষ্টিকর খাদ্য। তদ্রƒপ এতে রয়েছে কলবকে সৃষ্টিবিমুখ ও স্রষ্টামুখী করে পার্থিব লোভ লালসা ও শয়তানের চতুর্মুখী প্ররোচনা থেকে হিফাজতের পরিপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দীস দেহলবী (রহ) বড় সুন্দর লিখেছেন : মুসলিম উম্মাহ যদি প্রতিদিন বারবার জীবন ও কর্মের হাসাবা ও কর্মের পর্যবেক্ষণ অব্যাহত না রাখে, তবে এই উম্মাহর রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো কিছুতেই সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান প্রদানের মাধ্যমে মহা-প্রজ্ঞাবান আল্লাহপাক সে ব্যবস্থাই করেছেন। আমাদের এ অভিজ্ঞতা আছে যে, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ত করে শয্যা গ্রহণ করে সে অন্ততপক্ষে পশুর মতো নিশ্চিন্তে কিছুতেই ঘুমোতে পারবে না। তদ্রƒপ কারো অন্তর যদি সর্বদা সালাত ও অন্যান্য যিকির ইবাদতের চিন্তায় মগ্ন থাকে তবে তার ভেতরের পশুত্ব কিছুতেই তাকে কোন পাশবিক কর্মে লিপ্ত করতে সফল হবে না।’ সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে- ‘ঘুম থেকে জাগ্রহ হতে হতে যার মুখে কালিমা শাহাদাৎ, তাসবীহ ও তাহমিদ তথা পবিত্রতা ও প্রশংসাবাদ উচ্চারিত হয় সে যদি কোন দুআ করে কিংবা অযু করে সালাত আদায় করে তবে তার দু’আ ও সালাত অবশ্যই কবুল হবে।’ (হাদীসটি তিরমিযী ও আবু দাউদেও উদ্ধৃতি হয়েছে)।
আল্লাহপাক মু’মিনদের সন্বন্ধে বলেছেন : এরা এমন লোক যাদের ব্যবসা ও ক্রয়-বিক্রয় কিছুই আল্লাহর যিকির থেকে গাফিল করতে পারে না। (সূরা নূর : ৩৭)।
অতএব নির্ধারিত সময়ে আমাদের সালাত আদায় করতে হবে। সময়ের মতো সালাতের রাকাআত সংখ্যা ও আল্লাহপাক নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা অবশ্যই পালনীয়। কোন অযুহাতেই এর অন্যথা হতে পারবে না। রাসূলুলাহ (স) ও তাঁর পুণ্যাত্মা সাহাবাগণ সালাতের সময় ও রাকাআত সংখ্যা উভয়েরই যথাযথ পাবন্দী করেছেন জীবনভর। এমনকি জিহাদ ও যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও এ ব্যাপারে কোনরূপ শিথিলতা তারা প্রদর্শন করেননি। ইসলামী উম্মাহ সালাতের এই ইবাদত এমন নিষ্ঠা, যতœ, ব্যাপকতা ও ধারাবাহিকতার সঙ্তে পালন করে এসেছে যার তুলনা খুঁজে পাওয়া যাবে না পৃথিবীর কোন জাতির ইতিহাসে।
বস্তুত পক্ষে এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত- নির্ধারিত সময় ও রাকা’আত সংখ্যাসহ- মানুষের রূহ ও আত্মার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষাকারী ইন্জেকশন স্বরূপ। আর স্বয়ং রব্বুল আ’লামিন তার বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন এ ব্যবস্থাপত্র; যিনি মহাজ্ঞানী ও অনন্ত প্রজ্ঞার অধিকারী। মানুষকে যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের যাবতীয় দুর্বলতা সম্পর্কে যিনি মানুষের চেয়েও বেশি অবগত। তাই মানুষের উচিত স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার বিধান মেনে নেয়া এবং অবনত মস্তকে তার নির্দেশ পালন করে যাওয়া।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: