ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৫ জুন ২০১৫

ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন

আইনের জন্য জনগণ নয়, জনগণের জন্যই আইন। সেই আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়াটাই সঙ্গত। কিন্তু আইনের ভেতর যদি রয়ে যায় ফাঁক-ফোকর, তবে তা গলিয়ে প্রবেশ করতে পারে বেআইনী কারবার। বাস্তবে যে তা হয় না, তা নয়। আইনের অপপ্রয়োগের মাত্রাও কম নয়। নানা অসঙ্গতি মেলে তখন। তথাপি আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে যেমন হ্রাস পেতে বাধ্য অপরাধ, দুর্নীতি, অনিয়ম তেমনি জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতাও ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ হোক এটা কারও চাওয়া হতে পারে না। দুধে পানি, ফলমূলে ফরমালিনসহ কেমিক্যাল মেশানো, ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি মারাত্মক অপরাধ হলেও তা নিরসনে যদি যথাযথ আইন প্রয়োগ করা না যায়, তবে ভয়াবহ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এর মূলোৎপাটন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধ করে যদি অপরাধী পার পেয়ে যায়, তবে অপরাধের বিস্তার রোধ দুষ্কর বরং এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক। আর যত্রতত্র অবাধে ইভটিজিং চলবে, তা মেনে নিতে পারে না সমাজ, রাষ্ট্র। অথচ এসব ঘটনায় অনেক গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে। ইভটিজিং প্রতিরোধ আইনের প্রয়োগ যথাযথ না হলে এর ভয়াল থাবা বেড়ে যাবে। ভেজালবিরোধী অভিযান, ইভ টিজিং প্রতিরোধ, দুর্নীতিমুক্ত পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠান, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জানমাল রক্ষায় দ্রুত বিচারের জন্য ২০০৯ সালে প্রণয়ন করা হয় মোবাইল কোর্ট তথা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন। এই আদালতের মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে সাড়ে ৫ লাখ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিশেষ করে ইভটিজিং প্রতিরোধে খুব কার্যকর ফল এনেছে বলা যায়। কারণ, এই অপরাধের মাত্রা অনেক হ্রাস পেয়েছে। এমনকি জনসচেতনতাও বেড়েছে। তবে বিদ্যমান আইনটিতে বড় ধরনের ত্রুটি হলো মোবাইল কোর্টে বিচারযোগ্য অপরাধ যিনি করেছেন, তা স্বীকার না করলে শাস্তি দেয়া যায় না। আইনের এই দুর্বল দিকটি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নয়। কোন অপরাধীই সহজে তার অপরাধ স্বীকার করে না, তবে শাস্তিদান না করা গেলে অপরাধ বাড়বেই। আইনটিতে আনা সংশোধনী সংসদে পাস হলে অপরাধ দমনে নতুন মাত্রা আসবে। সংশোধনের ফলে দোষ স্বীকার করলেও অপরাধীদের শাস্তি দেয়া যাবে। আবার দোষ স্বীকার না করলেও সাক্ষ্য গ্রহণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে শাস্তি দেয়া যাবে মোবাইল কোর্টে। সংশোধিত আইনে মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট, যিনি বিচার পরিচালনা করবেন, তিনি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবেন। দুধে পানি দেয়ার বিষয়টি পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ মতামত প্রয়োজন হবে। খাদ্যে ভেজাল, ফরমালিন মেশানো দূরীভূত করা মানেই জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা। সংশোধিত আইন বিচারিক আদালতের ক্ষমতা খর্ব করছে না। বরং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। জনগণের স্বার্থে জনগণের জন্য প্রণীত আইনটির সংশোধনী ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ করবে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে অযথাই। সবকিছুকে বাঁকা চোখে দেখার প্রবণতাই এর কারণ। কয়েকটি সংবাদপত্র ও প্রচারমাধ্যম বিষয়টিকে এমন বক্রদৃষ্টিতে উত্থাপন করছে যে, ফরমালিন মেশানো বা ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল; এ এক খোঁড়া যুক্তি। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধ দমন যেখানে মুখ্য সেখানে অপরাধী রক্ষার প্রবণতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ জনগণের জন্যই যদি আইন হয়, তবে জনস্বার্থ রক্ষাটাই জরুরী। মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধই যেখানে প্রধান সেখানে অপরাধীর পক্ষে যায়, এমন প্রচারণা জনস্বার্থবিরোধী। সব আইনের মতো এই সংশোধিত আইনটির যথাযথ প্রয়োগই দেশবাসীর কাম্য।
×