ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নায়েক রাজ্জাককে শর্ত ছাড়াই ফেরত দেবে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২৪ জুন ২০১৫

নায়েক রাজ্জাককে শর্ত ছাড়াই ফেরত দেবে মিয়ানমার

চট্টগ্রাম অফিস/স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ বাংলাদেশ সরকারের কঠোর মনোভাবে অবশেষে মিয়ানমার অপহৃত বিজিবি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে দেয়ার ইস্যুতে নমনীয় হয়েছে। সহসা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মানজনকভাবে রাজ্জাককে বিজিবির হাতে হস্তান্তর করা হবে বলে মিয়ানমারের বিজিপি সূত্রে জানা গেছে। বিজিবির পক্ষে টেকনাফে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য বিজিপিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপি ফেরত কোন বার্তা দেয়নি। বিজিবি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে সীমান্তের ওপারে মংডুর যে কোন এলাকায় এ বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হলে তাতে কোন আপত্তি নেই। টেকনাফ ৪২ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, বৈঠক যে কোন স্থানে হতে পারে। এপারে হলেও আমরা রাজি। ওপারেও হলেও আমাদের আপত্তি নেই। আমরা চাই নায়েক রাজ্জাককে যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রসহ তাকে সসম্মানে ফেরত প্রদান করা হোক। বিজিবির দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবার রাতে মিয়ানমারের বিজিপির ২নং ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল থেইন কো কো মুঠো ফোনে টেকনাফ বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদকে জানিয়েছেন, কোন শর্ত ছাড়াই বিজিবি নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দেয়া হবে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করার পর আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ উৎকণ্ঠার অবসান হতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে তাকে ফেরত প্রদান প্রসঙ্গে মিয়ানমারের বিজিপি নানা টালবাহানা শুরু করে। বিভিন্ন শর্তজুড়ে দেয়। গত বুধবার ভোরে নাফ নদীতে টহল দানকালে বিজিবি-বিজিপির মধ্যে গুলিবর্ষণ ঘটনার পর নায়েক আবদুর রাজ্জাককে অপহরণ করে নিয়ে যায় বিজিপি সদস্যরা। এরপর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বিজিবির পক্ষে সার্বক্ষণিকভাবে কথাবার্তা চালানো হচ্ছে। কিন্তু ওই দিন থেকেই বিজিপির পক্ষে নানা শর্তজুড়ে দিতে শুরু করে। টেলিফোন আলাপে মিয়ানমারে উদ্ধারকৃত মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের বাংলাদেশী হিসেবে ফেরত নেয়ার শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এসব প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থান নিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে ঢাকায় সে দেশের নিয়োজিত রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হলে সোমবার থেকে বিজিপির অবস্থান অনেকাংশে নমনীয় হয়। রাতেই টেলিফোনে কোন শর্ত ছাড়াই আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দেয়া হবে বলে বিজিবিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, মিয়ানামরে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশী হিসেবে যারাই নিশ্চিত হবে তাদের সকলকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নেয়া হবে না। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই মিয়ানমার থেকে দু’দফায় ১৮৭ বাংলাদেশীকে ফেরত আনা হয়েছে। যার মধ্যে ১ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাও রয়েছে। তাকে বর্তমানে জেলহাজতে রাখা হয়েছে। বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বিজিপির কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের সঙ্গে অপহৃত বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে কোন অবস্থাতেই ইস্যু করা যাবে না। দুটি ঘটনা ভিন্ন। একদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান এবং বিজিবির পক্ষে ব্যাপক চাপের মুখে সোমবার সন্ধ্যার পর মিয়ানমারের মংডু বিজিবির ২নং ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল থেইন কো কো জানিয়েছেন, কোন ধরনের শর্ত ছাড়াই রাজ্জাককে ফিরিয়ে দেয়ার তৎপরতা চলছে। তবে এর আগে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ্জাককে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এমনকি রাজ্জাককে নামাজ-রোজার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বিজিবির পক্ষে মিয়ানমারের বিজিপির সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠান স্থল নিয়ে তাদের প্রস্তাবের অপেক্ষায় রয়েছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফিরতি বার্তা পৌঁছেনি। তবে সহসা তা আসবে বলে বিজিবি সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) মঙ্গলবার রাত ৮টায় বিজিবির কাছে দেয়া এক পত্রে জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে পতাকা বৈঠকে বসবে এবং নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দেবে।
×