ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালী জাতির জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২৪ জুন ২০১৫

আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালী জাতির জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকীতে দেশবাসী ও দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও আওয়ামী লীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগের ইতিহাসই হচ্ছে বাঙালীর জাতির জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস। স্বাধীনতা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি বড় অর্জন ও অগ্রযাত্রা এসেছে, তা সবই এনে দিয়েছে গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ। জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে উজানে নাও (নৌকা) ঠেলেই আওয়ামী লীগ দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াসহ সবক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে, আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। কেউ তা রুখতে পারবে না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের শুরুতে আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অতীতে বহুবার আওয়ামী লীগকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার অনেক ষড়যন্ত্র ও চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু কেউ-ই সফল হয়নি। আগামীতেও কেউ সফল হবে না। কারণ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তিই হচ্ছে জনগণ। দেশের জন্য অনেক ত্যাগের কারণেই জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। আর এ দলটি তৃণমূল থেকে আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠেছে। আদর্শ নিয়ে গড়ে ওঠা দলকে (আওয়ামী লীগ) শেষ করা অত সহজ নয়, নিশ্চিহ্ন করা যায় নাÑ তা গত ৬৬ বছরে প্রমাণ হয়েছে। দলের জন্মদিনে দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে নানা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়নি, সব সময়ই আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ, উন্নতি ও তাদের উন্নত জীবনদান। এ লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর বিশ্বের যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঠাট্টা করেছিল, আজ তারাই স্বীকার করে বলছে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ কোনদিন পিছিয়ে যাবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, একটু সময় দিন আমরা দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাব। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই। অনির্ধারিত এ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন হোসেন আমু এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বক্তব্য রাখেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনাতেও সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পাঁচ যুগেরও অধিক সময় দেশ ও জাতির জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলন, ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উপমহাদেশে যত পুরনো দল রয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগ অন্যতম। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী সীমাহীন নির্যাতন, জেল-জুলুম ও জীবন দিতে হয়েছে। এদেশের জন্য আওয়ামী লীগের ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস অপরিসীম। তিনি বলেন, এ দেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করেছেন, হাসিমুখে সকল নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। কিন্তু কখনও আপোস করেননি। স্বাধীনতার পর মাত্র ৯ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এত সুন্দর সংবিধান আর দেখা যায় না। দেশের ইতিহাসে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগে উন্নীত হয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের উন্নতি, প্রাপ্তি ও সমস্যার সমাধান। তিনি বলেন, সমুদ্র বিজয় অর্জন ও স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ বঙ্গবন্ধুই নিয়েছিলেন, আমরা শুধু বাস্তবায়ন করছি মাত্র। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ’৭৫-পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর দেশের মানুষ কী পেয়েছে? খাদ্য ঘাটতি, বিদ্যুত সঙ্কট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সার ও বিদ্যুত চাইতে গিয়ে মানুষকে গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ চিরদিন ত্যাগ করে দেশের জন্য বড় বড় অর্জন এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সব দিক থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেই সকল সমস্যার সমাধান করছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ- এ লক্ষ্যে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া বাংলাদেশ কোনদিন পিছিয়ে থাকতে পারে না, হবেও না। বাংলাদেশ পারবে ও পারে তা প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রমাণ দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের দেশ। ক্রিকেটেও তার প্রমাণ দিয়েছি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দেশকে আমরা পরাজিত করেছি। বাঙালী জাতি বরাবরই প্রমাণ দিয়েছে যে, তাদের একটু সুযোগ দিলে তারা যে কোন অসাধ্য সাধন করতে পারে। বাংলাদেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের বুকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই।
×