ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাচ্ছেন রাঘব বোয়ালরা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৪ জুন ২০১৫

ইয়াবা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাচ্ছেন রাঘব বোয়ালরা

শংকর কুমার দে ॥ প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের ৭ লাখ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমানের গ্রেফতারের ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন রাঘববোয়ালরা। কক্সবাজার থেকে আসা ইয়াবা চোরাচালানের গন্তব্য ছিল ঢাকায়। এএসআই মাহফুজুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার আগে আরও একাধিকবার কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছে ইয়াবার চালান। ফেনীতে আটক হওয়ায় রাজধানী ঢাকায় ইয়াবা চালানটি পৌঁছতে না পারলেও ইয়াবা চোরাচালানি চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইয়াবা চোরাচালানের তালিকায় ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও জড়িত রয়েছে আরও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। র‌্যাব ও পুলিশের উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। কালো রংয়ের এলিয়ন গাড়িসহ ৭ লাখ পিস ইয়াবাসহ ফেনীর লালপোল এলাকায় র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমানকে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইয়াবা চোরাচালানের বিস্তৃত থাবা। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পুলিশের আরও অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ছোট পদের চাকরি করে ইয়াবা ব্যবসার সুবাদে বনে গেছেন বিপুল ধনসম্পদের মালিক। আটক এএসআই মাহফুজুর রহমানের দেয়া তথ্যানুযায়ী ইয়াবা চোরাচালানে তার সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম আরও দুই এসআইয়ের নাম উঠে এসেছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া পুলিশের বিশেষ শাখার এএসআই মাহফুজুর রহমানের জবানবন্দীতে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। কক্সবাজার থেকে আসা প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের ৭ লাখ পিস ইয়াবার চালানটি রাজধানী ঢাকায় আসার পথে গত শনিবার রাতে ফেনীর লালপোল এলাকা থেকে উদ্ধারের সময়ে এএসআই মাহফুজুর রহমান ও তার গাড়িচালক জাবেদ আলীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এএসআইর কাছ থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা, চারটি মোবাইল ফোন সেট ও বিভিন্ন ব্যাংকের আটটি ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে র‌্যাব কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় গ্রেফতার মাহফুজ, জাবেদ আলী, এসআই আশিক ও বেলাল এবং অজ্ঞাতনামাসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। এএসআই মাহফুজুর রহমানকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইয়াবার চালানসহ এএসআই মাহফুজুর রহমান, তার গাড়ি চালক জাবেদ আলী গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের অন্যান্য যেসব কর্মকর্তা ও সদস্য জড়িত তাদের খোঁজা হচ্ছে। পুলিশের কর্মকর্তা মাহফুজের দেয়া তথ্যানুযায়ী মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট যেসব ইয়াবা ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করে তা কম মূল্যে কিনে পরে তা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে চড়া মূল্য বিক্রি করেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, উদ্ধার করা এসব ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য কম মূল্যে পাওয়া যায় বলে অধিকাংশ সময় এসবের প্রতি এ সিন্ডিকেটের আগ্রহ বেশি থাকে। এছাড়া এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা মাদকদ্রব্য জব্দ তালিকায় কম দেখিয়েও বেশিরভাগ নিজেদের কাছে রেখে দিতেন। পরে তা নিজেদের উদ্যোগে গোপনে মাদকের সিন্ডিকেটদের কাছে বিক্রি করে দেয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় এএসআই মাহফুজ। পুলিশের এএসআই মাহফুজের দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইয়াবা পরিবহনের জন্য ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে সিলভার কালারের একটি নোহা মাইক্রোবাস কিনেছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ওই মাইক্রোবাসে তিনি ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার ব্যবহার করতেন। এ সিন্ডিকেটটি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারি চক্রের সঙ্গে জড়িত। সীমান্ত হয়ে মাদকের চালান আমদানির পাশাপাশি পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্ধার করা মাদকও সংগ্রহ করে তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের মাদক সিন্ডিকেটদের কাছে সরবরাহ করেন। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালানটি রাজধানী ঢাকার নিয়ে যাওয়ার পর কোন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার লক্ষ্য ছিল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। গ্রেফতার হওয়া এএসআই মাহফুজ তার সহযোগী পুলিশ কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে আরও ইয়াবার চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীর একটি বড় ধরনের সিন্ডিকেট রয়েছে, যা এএসআই মাহফুজুর রহমানের জবানবন্দীতে জানা গেছে।
×