ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাপের মুখে মুক্ত নাফিস, জোহানেসবার্গের হাসপাতালে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৪ জুন ২০১৫

চাপের মুখে মুক্ত নাফিস, জোহানেসবার্গের হাসপাতালে ভর্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে চাপের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অপহৃত বাংলাদেশী যুবক নাফিসকে মুক্ত করে দিয়েছে অপহরণকারীরা। অপহরণের পর নাফিসকে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই গত রবিবার সন্ধ্যায় তাকে মুক্ত করে দেয় অপহরণকারীরা। মুক্ত নাফিসকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পুলিশ পাহারায় জোহানেসবার্গের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাফিসকে দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সিআইডি পুলিশ ও নাফিসের মা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশের চাপের মুখে অপহরণকারীরা নাফিসকে মুক্ত করে দিতে বাধ্য হয় বলে জানিয়েছে ঢাকার সিআইডি পুলিশ। অপহরণের ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃত আলেয়াকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে গত সোমবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। আর অপহরণের ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্রেফতারকৃত আলেয়ার স্বামী ও তার দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সে দেশটির পুলিশ। গত ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে অপহরণ করা হয় নাফিসকে। নাফিস গত নয় বছর ধরে একমাত্র বড়বোন তানিয়া ও তার বোন জামাইয়ের সঙ্গে জোহানেসবার্গে বসবাস করে আসছেন। তারা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ব্যবসায়ী। অপহরণের দুই দিন পর নাফিসের মুক্তিপণ হিসেবে সাত লাখ টাকা দাবি করা হয়। নানাভাবে নাফিসকে মুক্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তার পরিবার। শেষ পর্যন্ত গত ১৬ জুন রাজধানীর লালবাগ থানায় নাফিসের মা মামলা দায়ের করেন। এদিকে দাবিকৃত টাকা ঢাকায় বসবাসরত আলেয়ার এ্যাকাউন্টে জমা দিতে বলা হয় অপহরণকারীদের তরফ থেকে। সে মোতাবেক গত ১৮ জুন নাফিসের মা টাকা জমা দেন। টাকা তুলতে গেলে সিআইডি পুলিশ আলেয়াকে গ্রেফতার করে। তাকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আলেয়া জানায়, টাকাগুলো তার স্বামী তাকে তুলে জমি কেনার কথা বলে। এমন তথ্যে নাফিস অপহরণের সঙ্গে আলেয়ার স্বামীর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় সিআইডি। পরে আলেয়ার মাধ্যমে জোহানেসবার্গে অবস্থিত তার স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশের সিআইডি যোগাযোগ করে। সেইসঙ্গে জোহানেসবার্গের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিআইডি পুলিশ। যোগাযোগের প্রেক্ষিতে জোহানেসবার্গ পুলিশ আলেয়ার স্বামী তাজুল ইসলাম, তার বন্ধু মহসীন ও ওয়াসিফকে গ্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে জোহানেসবার্গ পুলিশ। এ ব্যাপারে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) বিভাগের বিশেষ পুলিশ মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিআইডি পুলিশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ পুলিশের চাপের মুখে গত রবিবার সন্ধ্যায় নাফিসকে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। নাফিসের বোন তানিয়া এবং জোহানেসবার্গ পুলিশের তরফ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে নাফিসকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার মা রুবি বেগম। তিনি জোহানেসবার্গে অবস্থিত তার মেয়ে তানিয়ার বরাত দিয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, নাফিসকে অপহরণকারীরা অপহরণের পর ডারবানে আটকে রেখেছিল। তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। তার ওপর অমানুষিক নির্যাতনও চালিয়েছে অপহরণকারীরা। নাফিসের শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর আহত নাফিসকে জোহানেসবার্গের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ পাহারায় নাফিসের চিকিৎসা চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই নাফিসকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান নাফিসের মা। জোহানেসবার্গ পুলিশ তাদের এমন আশ্বাসই দিয়েছে।
×