ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার বৃহত্তম আয়োজন সুশৃঙ্খল, সৌহার্দ্যময় পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৪ জুন ২০১৫

ঢাকার বৃহত্তম আয়োজন সুশৃঙ্খল, সৌহার্দ্যময় পরিবেশ

মোরসালিন মিজান ॥ বড়সড়ো ইফতার অনেক হয়। তবে বায়তুল মোকাররমে যে ইফতার আয়োজন, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। হ্যাঁ, এত বড় এবং বিপুল আয়োজন। সরকারী আমলা ব্যবসায়ী শিল্পপতি ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ হকার এমনকি পথচারীরা ইফতার করছেন। বিত্তবান বা বিত্তহীন হতদরিদ্রের মাঝে এখানে কেউ পার্থক্য করতে আসেন না। সবাই সমান। এক মর্যাদার। পাশাপাশি বসে ইফতার করছেন। খেতে খেতেই অপরিচিত মানুষজন একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। গড়ে উঠছে সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক। অদ্ভুত সুন্দর এ আয়োজনটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। ফাউন্ডেশন প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি রোজাদারকে অতিথির মর্যাদা দিয়ে ইফতার করাচ্ছে। এখন আছর নামাজের পর থেকেই সরগরম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহান। নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে প্রস্তুতি। নামাজ শেষে অনেক মুসল্লি আর বাইরে বের হন না। বসে দোয়া দরুদ পড়েন। ইফতারের আগ পর্যন্ত ধর্মীয় বয়ান হয়। সেই বয়ান শুনেন তারা। সময় যত গড়ায়, বাড়তে থাকে রোজাদারের সংখ্যা। এক সময় তা ২ হাজার ছুঁয়ে যায়। মুসল্লি, আশপাশের দোকানের কর্মচারী, গুলিস্তান এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা মানুষ, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, এতিম মিসকিনÑ কেউ বাদ যান না। অনেক চাকরিজীবী, বড় ব্যবসায়ী, ছাত্ররাও এখানে ইফতার করেন। বেশ কয়েকটি দীর্ঘ সারিতে সুশৃঙ্খলভাবে বসেন তারা। কয়েকজন মিলে গোল হয়েও বসেন। বিরাট এ কর্মযজ্ঞ তদারকি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগ। এ বিভাগের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার জানান, ইফতারের প্রতিদিনের আইটেমগুলোর মধ্যে থাকে শরবত, খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি ও কলা। প্রতিদিনের ইফতারের ৭০ কেজি ছোলা, ৪৫ কেজি মুড়ি, ৬০ কেজি পেঁয়াজু, ৬০ কেজি জিলাপি এবং ৪০ কেজি খেজুর থাকছে। সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭০০ পিস কলা অর্ধেক করে কেটে পরিবেশন করা হয়। ১০টি বড় বালতিতে তৈরি করা হয় শরবত। ৭০টি জগে করে ১৫শ’ গ্লাসে তা বিতরণ করা হয়। জানা যায়, খাবার পরিবেশনের জন্য রয়েছে ২০০টি বড় ডিশ। প্রতিটিতে ৬ থেকে ৮ জনের ইফতার করার ব্যবস্থা। রোজাদাররা ডিশের চারপাশে চমৎকার গোল হয়ে বসে ইফতার করেন। সিঙ্গেল ডিশও আছে। ৪শ’ মানুষ সিঙ্গেল ডিশে ইফতার করতে পারেন। দশটি সারিতে ৭০ জন করে বসে ইফতার করেন। বিশাল এ আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে কাজ করছেন ২১ খাদেম। থালা বাটি ধোয়ার জন্য রয়েছেন আরও কয়েকজন। আছে স্বেচ্ছাসেবীও। পুরুষের পাশাপাশি পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে মহিলাদের জন্য। মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তে নামাজ কক্ষে প্রতিদিন শতাধিক মহিলা ইফতার করেন। সব মিলিয়ে অন্যরকম একটি আয়োজন। মঙ্গলবার বায়তুল মোকাররমে ইফতার করতে এসেছিলেন সবুজবাগের প্রবীণ মাওলানা ইসমাইল হোসেন। জনকণ্ঠেকে তিনি বলেন, এখানে ইফতারের মোটামুটি সব ব্যবস্থাই করা থাকে। তবে শুধু ইফতার করতে আসিনি। বহু মানুষের সঙ্গে দোয়ায় শামিল হতে এসেছি। এত মানুষ একসঙ্গে ডাকলে আল্লাহ না শুনে পারেন না। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককেও দেখা গেল প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছেন। বিপুল এ ইফতার আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে এত মানুষ। অথচ কোন সমস্যা নেই। বিরোধ নেই। সবাই সবার ভাইয়ের মতো। গরীব লোক প্রচুর এসেছেন। খোঁজ করলে বহু বড়লোকেরও দেখা পাবেন। সবাই কিন্তু পাশাপাশি বসেছেন। ধর্মীয় ব্যাখ্যার পাশাপাশি এর সামাজিক গুরুতও¡ অনেক বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর একেবারে হতদরিদ্র ভিক্ষুক ভবঘুরেদের কথা তো বলাই বাহুল্য, তাদের একবেলা খাওয়া এখানে হয়ে যায়। তাতেই আনন্দ। ইব্রাহিম নামের এক পথশিশুর কথাটি প্রণিধানযোগ্য। সে বললোÑ ‘সবাইতো খালি ইফতার খায়। কত দেখি নষ্ট করে। তবু আমাগোরে খাইতে দেয় না। এইখানে আইসা তাই খাই। রোজার প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া ইফতার আয়োজন চলবে রোজার শেষ দিন পর্যন্ত।
×