ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এ দেশের মানুষের সব অর্জন হয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৪ জুন ২০১৫

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এ দেশের মানুষের সব অর্জন হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী অর্থ হচ্ছে জনগণ। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে মাটি ও মানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু একটি শক্তিশালী সংগঠন (আওয়ামী লীগ) করেছিলেন বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে, মানুষের অধিকারও অর্জন হয়েছে। দেশ ও জাতির জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেক ত্যাগ ছিল বলেই আজ স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। যে কেউ ইতিহাস লিখতে গেলে আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে লিখতে পারবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষাকে উপেক্ষা করতে পারবে না। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শহীদের রক্ত ও মানুষের আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যায় না। দীর্ঘ ৬৬ বছরে দেশ ও জাতির জন্য আওয়ামী লীগের বিশাল ত্যাগের কথাও চিরদিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশকে এখন কেউ আর অবহেলা কিংবা উপেক্ষার চোখে দেখে না। অবহেলা নয়, বিশে^র কাছে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে বাঙালীর স্বাধীনতা অর্জনসহ এদেশের মানুষের সব অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ সংগঠন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছে। ক্ষমতায় থাক বা না থাক, আন্দোলন-সংগ্রাম করে জনগণের অধিকার আদায়ও করেছে। আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন বলেই ’৯০ সালে আমরা আন্দোলন করে এরশাদের পতন ঘটিয়েছি, ’৯৬ সালে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করিয়েছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিটি ক্ষেত্রে এদেশের মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতাই শুধু এনে দেয়নি, অর্থনৈতিক অর্জনের পথেও আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ এদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবোই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ দলের জ্যেষ্ঠ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে লেখা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে কোন অর্জন ও উদ্দেশ্য সাধনে শক্তিশালী সংগঠনের প্রয়োজন হয়। আওয়ামী লীগ তাই করেছে। আর আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীরাও বারবার জুলুম-নির্যাতনের শিকার হলেও মাথানত করেননি। আদর্শের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার মূল শক্তিই ছিল দেশের জনগণ আর আওয়ামী লীগ নামের শক্তিশালী সংগঠন। বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী সংগঠন করেছিলেন বলেই নেতৃত্ব দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন। মানুষের সব অধিকারও অর্জন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ একটি জাতির জন্য কত ত্যাগ করতে পারেন! বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে। তাঁর লক্ষ্যই ছিল তিনি বাঙালীকে স্বাধীনতা এনে দেবেন। সেই জন্যই তিনি আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বলেন, ’৮১ সালে তিনি দেশে ফিরে প্রায় প্রতিটি জায়গায় গিয়েই শুনেছেন, সেখানে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। বাঙালীকে স্বাধীনতা এনে দেবেনÑ এই অভিপ্রায় থেকেই বঙ্গবন্ধু সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন। কখনও সাইকেলে, কখনও হেঁটে আবার নৌকায় চড়ে বঙ্গবন্ধু গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন, নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শক্তিশালী সংগঠন ছিল বলেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও জাতির প্রয়োজনে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকে, সেটা তারাও বারবার প্রমাণ করেছে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ৪০ বছর পর ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই এই চুক্তির বাস্তবায়ন হতো। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ পরবর্তী জিয়া-খালেদা-এরশাদ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেছে, কিন্তু তারা দেশের সমস্যা সমাধানের দাবিটি ভারতের কাছে তুলে ধরার সাহস দেখাতে পারেনি। সমুদ্রসীমা, স্থলসীমান্ত, গঙ্গা ও পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে টু-শব্দটিও করেনি। যা কিছু করেছে তা সব আওয়ামী লীগই করেছে। জন্মলগ্ন থেকেই আমরা জাতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধশালী করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবোই। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আত্মত্যাগ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলিয়ান করতে হবে। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় সবকিছু হারিয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেছিলেন বলেই আর সবক্ষেত্রে দেশের এতো উন্নয়ন হচ্ছে। আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ৩৪ বছরে ধরে ধাপে ধাপে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশের জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের মাধ্যমে তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছেন। এদেশের মানুষের যা কিছু অর্জন তা সবই দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। তবে সব বাধা অতিক্রম করে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে দেশকে গড়ে তুলবেনই। তোফায়েল আহমেদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অপশক্তির কোন ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়ন হবে না। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া দু’বার দীর্ঘ সময় ধরে নাশকতা-সন্ত্রাস ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। বলেছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করে শূন্য হাতেই ঘরে ফিরতে হয়েছে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছরের মধ্যে ৩৪ বছরই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দীর্ঘ সময়ে তাকে বারংবার হুমকি-ধমকি এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তাকে হত্যার এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের জন্য আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, পৃথিবীর আর কোন দলের এমন ত্যাগের নজীর নেই। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদন খান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনা যদি না থাকেন তবে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়েও পরিণতি খারাপ হবে। জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা আমাদের ওপর আঘাত হানতে চায়। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘটিত থাকলে সকল হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব। বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের আস্তানা গড়তে চায়। রুখতে হলে সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
×