ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ায় ক্লোজার এখন মরণফাঁদ ॥ ৪০ গ্রামে জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২৩ জুন ২০১৫

কলাপাড়ায় ক্লোজার এখন মরণফাঁদ ॥ ৪০ গ্রামে জলাবদ্ধতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২২ জুন ॥ গাববাড়িয়া ক্লোজারটি এখন কলাপাড়ার অর্ধলক্ষ কৃষকের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। সোনাতলা নদীর সঙ্গে শিববাড়িয়া সংযোগ নদীতে ক্লোজারটি নির্মাণের ফলে তিন দিকের তিনটি শাখা ও সংযোগ নদীতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ক্লোজারটির ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধের ভিতরের খালের পানি নামার ১৯টি স্লুইসের পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্লুইস থেকে পানি শুধু ভিতরের খালে ওঠে। কিন্তু নামছে না। কৃষকের কোন কাজে আসছে না। ফলে ডালবুগঞ্জ, ধুলাসার, মিঠাগঞ্জ, মহিপুর ও বালিয়াতলী ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ কৃষকের অন্তত ৫০ হাজার একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের সাত/আট দিনের মধ্যে অন্তত ৪০ গ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় হাজার হাজার কৃষক পড়েছেন চরম বিপাকে। কোমর থেকে হাঁটু সমান পানি জমে যাওয়ায় সব পচে গলে পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। পানির রঙ লাল হয়ে যাচ্ছে। মাছ মরে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে ওই পয়েন্টে একটি গার্ডার ব্রিজ করার মালামাল পর্যন্ত সাইটে নেয়া হয়। কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পরে আবার তা রহস্যজনকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সকল মানুষের প্রশ্ন যেখানে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করলে ব্যয় আরও কম হতো সেখানে কেন ক্লোজার করা হয়েছে? কৃষকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের মন্তব্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই নিজেদের এবং ঠিকাদারের স্বার্থে ক্লোজারটি করে তিনটি শাখা নদী ও সংযোগ নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ক্লোজারটির প্রকৃত ব্যয় বরাদ্দ নিয়েও এলাকায় খোলামেলা সমালোচনা চলছে। যার দায়ভার সরকারকে ওপর পড়ছে। ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিকদার জানান, ওই পয়েন্টে ক্লোজার না করার জন্য হাজার হাজার কৃষক নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। করেছেন প্রতিবাদ সমাবেশ। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড আমলে নেয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, সরেজমিনে পরিদর্শন করে কৃষকের সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হয়তো ক্লোজার পয়েন্টে স্লুইস নয়তো পানি নামার খালগুলো খনন করা হবে। আমতলী পৌর শহরসহ ২৫ গ্রাম হুমকিতে নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে পায়রা নদী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। গত তিন দিনে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউ ৮০০ মিটার বাঁধ ও জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আমতলী শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পরতে শুরু করেছে। বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে আমতলী পৌর শহরসহ আমতলী ও তালতলী উপজেলার ২৫ গ্রাম। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। পৌর শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ফেলার কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ২৫ বছরে আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৫ হাজার একর কৃষিজমি, বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পায়রা নদী গ্রাস করে নিয়েছে। এ বছর নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত তিন দিন ভারী বর্ষণ ও লঘুচাপের প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৮০০ মিটার বাঁধ ও কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে আমতলী পৌরসভা, বৈঠাকাটা, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, পশ্চিম ঘটখালী, আঙ্গুলকাটা, গুলিশাখালী, জয়ালভাঙ্গা, ছোটবগী বাজার, মৌপাড়া, গাবতলী, চরপাড়া, তালুকদার পাড়া, নলবুনিয়া, নিদ্রাসকিনা ও তেঁতুলবাড়ীয়াসহ ২৫ গ্রাম। পাউবোর আমতলী অফিসের সহকারী প্রকৌশলী নুর মোহম্মদ রিপন জানান পৌর শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ফেলার জন্য পাউবোর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন ডিজাইন পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান ওই ডিজাইন বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শকরা গ্রহণ না করায় কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শকদের আপত্তির কারণে কাজ শুরু হচ্ছে না।
×