ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাকার আপীলের শুনানি অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৩ জুন ২০১৫

সাকার আপীলের শুনানি অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপীল শুনানি অব্যাহত রয়েছে। মামলার চতুর্থ অভিযোগ শেষ করে পঞ্চম অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে। সোমবার সাকার আপীল শুনানি চতুর্থ দিনের মতো শুনানির পর আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চে এ শুনানি হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। চতুর্থ দিনের শুনানিতে সাকার বিরুদ্ধে আনা ৩ নম্বর অভিযোগে অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, ৪ নম্বর অভিযোগে জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জনকে গণহত্যার পর ৫ নম্বর অভিযোগে রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যার পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য বিষয়ে আপীলকারী পক্ষে শুনানি শুরু করেন সাকার আইনজবীবী এস এম শাহজাহান। এর আগে তৃতীয় দিনে আদালতে সাকা চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাকার বিরুদ্ধে ৪ নম্বর অভিযোগে রয়েছেÑ ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সালে সকাল ১০.৩০ থেকে ১১.৩০ পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্থানীয় সহযোগীদেরসহ পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হিন্দু-অধ্যুষিত জগৎমল্লাপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। ঘটনার দিন সাকা চৌধুরীর দু’জন সহযোগী আব্দুল মাবুদ ও অপর একজন জগৎমল্লপাড়ায় সেখানকার হিন্দু নর-নারীদের সবাইকে কথিত এক শান্তি মিটিংয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তাদের কাথায় বিশ্বাস করে এলাকাবাসী সবাই কিরণ বিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙ্গিনায় একে একে জড়ো হতে থাকে। তখন তাদের একত্রিত করে বসানো হয়। অতঃপর সাকার উপস্থিতিতে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এখানে গুলিতে ৩২ নারী-পুরুষ মারা যান। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেনÑ তেজেন্দ্র লাল নন্দী, সমির কান্তি চৌধুরী, অশোক চৌধুরী, সীতাংশু বিমল চৌধুরী, প্রেমাংশু বিমল চৌধুরী, কিরণ বিকাশ চৌধুরী, সুরেন্দ্র বিজয় চৌধুরী, চারুবালা চৌধুরাণী, নিরুবালা চৌধুরাণী, প্রভাতী চৌধুরী, রাজলক্ষ্মী চৌধুরাণী, কুসুম বালা চৌধুরাণী, যতীন্দ্র লাল সরকার, হীরেন্দ্র লাল সরকার, প্রভাতী সরকার, দেবেন্দ্র লাল চৌধুরী, রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী, অজিত কুমার চৌধুরী, পরিতোষ চৌধুরী, ভবতোষ চৌধুরী, গোপাল চৌধুরী, রানী বালা চৌধুরাণী, মঞ্জুর চৌধুরী, ঝিনু চৌধুরী, রুনু চৌধুরী, দেবু চৌধুরী, স্বপন চৌধুরী, ফনীভূষণ চৌধুরী, মধুসূদন চৌধুরী, বিপিন চৌধুরী, কামিনি রুদ্র, অনন্ত বালা পাল (নিরুবালা)। অন্যদিকে ৫ নম্বর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল বেলা অনুমানিক ১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কতিপয় অনুসারীকে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালায়। সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার পূর্বে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে সুলতানপুর গ্রামের বণিকপাড়ার লোকজনের নিকট পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর প্রশংসা করে কাউকে বাড়ি না ছাড়ার জন্য প্ররোচনা চালায়। স্থানীয় লোকজন পরিপূর্ণ আস্থা স্থাপন না করতে পেরে নারী শিশুদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়। সেনাসদস্যরা বাণিকপাড়ায় প্রবেশ করে ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রসূত হয়ে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে এলাকার নেপাল চন্দ্র ধর, মনিন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে একত্রিত করে গুলি করে হত্যা করে। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। সর্বমোট ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ে তাকে এ শাস্তি দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭টির পক্ষে সাক্ষী হাজির করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এগুলোর মধ্যে মোট ৯টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ যে ছয়টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করেনি সেগুলো থেকেও সাকা চৌধুরীকে খালাস দেয়া হয়েছে। প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে চারটিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। তিনটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে ২০ বছর এবং আরও দুটি অভিযোগের প্রতিটিতে পাঁচ বছর করে কারাদ- দেয়া হয়েছে সাকা চৌধুরীকে। যে চারটি হত্যা-গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে সেগুলো আনা হয় ৩ নম্বর অভিযোগেÑ অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, ৫ নম্বর অভিযোগে- রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে সংখ্যালঘুদের গণহত্যা, ৬ নম্বর অভিযোগে- রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০-৫৫ জনকে গণহত্যা এবং ৮ নম্বর অভিযোগে- চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যা। ২, ৪, ৭ অভিযোগে ২০ বছর করে কারাদ- দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৭ এবং ১৮ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর করে কারাদ- দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সালাউদ্দিন কাদেরের খালাস চেয়ে আপীল দায়ের করেন তার আইনজীবীরা। আপীল আবেদনে মোট ১ হাজার ৩২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্রের ডকুমেন্টসহ দাখিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন আপীল দায়ের করা হয়নি।
×