ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভায় ‘মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন’ এর খসড়া অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৩ জুন ২০১৫

মন্ত্রিসভায় ‘মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন’ এর খসড়া অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দোষ স্বীকার না করলেও সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে অপরাধীদের শাস্তির বিধান রেখে ‘মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন, ২০১৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া অপরাধীদের বিচারের জন্য মোবাইল কোর্ট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবে। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে মন্ত্রিসভা ভেটিং সাপেক্ষে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। পাশাপাশি পাট পণ্যের তালিকায় পাটখড়ি সংযোজন করে পাট আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আর পাটখড়ি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সরকার। বৈঠকের পর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে মোবাইল কোর্ট আইন করা হয়। ভেজালবিরোধী অভিযান, ইভটিজিং প্রতিরোধ, দুর্নীতিমুক্ত পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠান, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জানমাল রক্ষায় দ্রুত বিচার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়ে আসছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০১০-২০১৪ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিশেষ করে ইভটিজিং প্রতিরোধে খুব ভাল ফল এসেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যমান আইনে মোবাইল কোর্টে বিচারযোগ্য অপরাধ যিনি করেছেন তা স্বীকার করলে শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ করেও দোষ স্বীকার করেন না, ফলে শাস্তি দেয়া যায় না। আইন সংশোধনের ফলে দোষ স্বীকার করলেও অপরাধীদের শাস্তি দেয়া যাবে। দোষ স্বীকার না করলেও সাক্ষ্যগ্রহণ, পারিপাশিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে শাস্তি দিতে পারবেন মোবাইল কোর্ট। সংশোধিত আইনে বিচারের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন থেকে ‘ইলেকট্রনিক’ স্বাক্ষর ও ‘বায়োমেট্রিকের’ ব্যবহার করা যাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে ইলেকট্রনিক সিগনেচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে বায়োমেট্রিকের ব্যবহার রয়েছে। মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যিনি বিচার পরিচালনা করবেন, তিনি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যেমন- দুধে পানি দেয়ার বিষয়টি পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ মতামত প্রয়োজন পড়বে। সংশাধনের ফলে মোবাইল কোর্ট আইন আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যাবে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন সংশোধনের ফলে বিচারিক আদালতের ক্ষমতা খর্ব হবে না। শাস্তির জন্য মোবাইল কোর্টের তফসিলে এখন পর্যন্ত ৯৩টি আইন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিচারের জন্য অনেক মন্ত্রণালয়েরও আগ্রহ রয়েছে। কিছু কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভা মোবাইল কোর্টকে আরও কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছিল। পাট পণ্যের তালিকায় পাটখড়ি সংযোজন করে পাট আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আর পাটখড়ি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মূল আইনটি ১৯৬২ সালের জুট অর্ডিন্যান্স, যা পরবর্তীতে ১৯৬৩, ১৯৭৪ এবং ১৯৮৩ সালে সংশোধন করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দু’টি সামরিক শাসনামলে জারিকৃত প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ আইনে পরিবর্তন করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ আইন উপস্থাপন করে। অধ্যাদেশ আইনে পরিবর্তন করতে তেমন কোন পরিবর্তন করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এ আইনে নতুন সংযোজন হিসেবে ‘পাটখড়ি’র বিষয়টি বলা হয়েছে। পাটখড়ি থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে তথ্য সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণের বিধান রাখা হয়েছে। পাটখড়ি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে সরকার রেগুলেট করতে পারবে। এছাড়া বৈঠকে ‘বাংলাদেশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন, ২০১৫’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের (পিও) মাধ্যমে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্টারপ্রাইজেস ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার নামে মূল আইন জারি হয়। সামরিক শাসনামলে এ আইনটি ১০ বার সংশোধন করা হয়। সামরিক শাসনামলের জারিকৃত প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ আইনে পরিবর্তন করতে এ আইন উপস্থাপন করে শিল্প মন্ত্রণালয়। অধ্যাদেশ থেকে আইনে পরিবর্তন করতে তেমন কোন পরিবর্তন করা হয়নি, কিছু সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়েছে। সচিবালয় স্থানান্তর প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতে এক প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয়কে শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তরিত হবে। এ লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প প্লানিং কমিশনে আছে। এটি অনুমোদন হলে সচিবালয় সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হবে। সচিবালয় সরিয়ে নিয়ে গেলে তখন ‘ভিআইপি মুভমেন্ট’-এর কারণে রাস্থায় যানজট হওয়ার ঘটনা কমে আসবে।
×