ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাবি ভিসি ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ॥ পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৩ জুন ২০১৫

শাবি ভিসি ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ॥ পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ ভিসির পদত্যাগ ইস্যুতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (শাবি) পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দুই মাসের ছুটি শেষ হওয়ার একদিন আগেই সোমবার নিজ কার্যালয়ে এসে কাজ শুরু করেন উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া। সকাল আটটার দিকে হঠাৎ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন উপাচার্য। তিনি কার্যালয়ে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যে ভবনের গেটে তালা দিয়ে বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। এ সময় ওই ভবনে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢুকতে পারেননি। দু’জন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে উপাচার্য সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ থাকেন। ভিসির পদত্যাগ দাবিতে মঙ্গলবার পুনরায় কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিকেল চারটায় আন্দোলন কর্মসূচী স্থগিত করা হয়। সোমবার দুপুরে শিক্ষক সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি গ্রুপ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব নিয়ে যান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ভিসির পদত্যাগ ছাড়া আলোচনার কোন অবকাশ নেই বলে জানিয়ে দেন। তারা বলেন, ভিসি ছুটিতে যাওয়ার সময় কথা দিয়ে যান তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি। আমরা তার পদত্যাগ ছাড়া অন্য কোন কিছু মানি না। এদিকে ভিসি সকালে অফিসে এসে নতুন প্রক্টরিয়াল কমিটির অনুমোদন দেন। বনবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কামরুজ্জামানকে প্রক্টর, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক সামিউল ইসলাম, গণিতের ওমর ফারুক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক জাহিদ হোসেনকে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষকদের একাংশের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় উদ্বুব্ধ শিক্ষক পরিষদের’ সমর্থক কয়েকজন শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রক্টরিয়াল কমিটি সাজিয়ে নেন। কিন্তু আন্দোলনের কারণে প্রশাসনিক কাজকর্ম অচল হয়ে পড়ায় নতুন কমিটির ঘোষণাপত্র জারি করা সম্ভব হয়নি। ভিসির পদত্যাগ ইস্যুতে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। ভিসির পদত্যাগ নিয়ে একপক্ষ মাঠে আন্দোলনে থাকলেও অপরপক্ষ ভিসির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। তবে ভিসির পক্ষাবলম্বনকারীদের মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না। পাঁচ শতাধিক শিক্ষকের মধ্যে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছেন মাত্র শতাধিক শিক্ষক। আন্দোলনের নেতৃত্ব পর্যায়ে আছেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। বাকি শিক্ষদের একটি অংশ ভিসির সঙ্গে আছেন। জামায়াত-বিএনপি ছাড়াও বড় একটি অংশ বর্তমান ইস্যুতে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনও কারও পক্ষে অবস্থান নেননি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্যের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কর্মকর্তা নেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্যের এমন আচরণ তারা ভাল চোখে দেখছেন না। তাদের মতে, ভিসি কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। যে কারণে কর্মকর্তা নেতারাও তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ, প্রশাসন পরিচালনায় অযোগ্যতার পাশাপাশি নিয়োগে অনিয়ম ও আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি প্রশাসনিক পদ থেকে ৩৫ শিক্ষক নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন।
×