ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবিশ্বাস্য জয়ে এগিয়ে গেল পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২২ জুন ২০১৫

অবিশ্বাস্য জয়ে এগিয়ে গেল পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বৃষ্টির জন্য ভেস্তে গিয়েছিল প্রথম দিনের পুরোটা, আবহাওয়ার বাগড়া ছিল দ্বিতীয় আর তৃতীয় দিনেও, এক অর্থে গল টেস্টে নিট খেলা হয়েছে সাড়ে তিনÑ তাতেই ১০ উইকেটের বড় জয় পাকিস্তানের! ফল দেখে টেস্টের চিত্র বোঝা যায় না। প্রায় ফলোঅনে পড়তে যাওয়া সফরকারীদের এ জয় যেমন অবিশ্বাস্য, তেমনি নিজেদের সম্প্রতি বাজে হার বলে মেনে নিয়েছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। সব মিলিয়ে চিত্তাকর্ষক জয়ে তিন টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল মিসবাহ-উল হকের দল। প্রথম ইনিংসে চমৎকার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পেছনে উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা সরফরাজ আহমেদ। কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্ট বৃহস্পতিবার থেকে। ওপেনার কুশল সিলভার সেঞ্চুরি (১২৫) ও বড় তারকা কুমার সাঙ্গাকারার হাফ সেঞ্চুরির (৫০) ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ঠিক ৩০০ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। জবাবে এক পর্যায়ে ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় পড়া পাকিস্তানকে টেনে তোলেন আসাদ শফিক (১৩১) ও সরফরাজ (৯৬)। ৪১৭ রান করে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। ততক্ষণে ম্যাচের আয়ু অবশ্য সাড়ে তিন দিনেরও বেশি অতিবাহিত, কে ভেবেছিল তাতে এভাবে রেজাল্ট আসবে? প্রায় ড্র দেখা গলে রেজাল্টের পথ তৈরি করে দেয় দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের ব্যাটিং ব্যর্থতা! ইয়াসির শাহর স্পিন-ভেল্কিতে মাত্র ২০৬ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। সর্বোচ্চ ৭৯ রান ওপেনার দিমুথ করুণারতেœর। লহিরু থিরিমান্নের ৪৪ ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রান দিনেশ চান্দিমালের। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের পথে ৭৬ রানে ৭ উইকেট নেন ইয়াসির। গত ২০ বছরে কোন পাকিস্তানী লেগস্পিনারের ইনিংসে এটিই সেরা বোলিংয়ের নজির। বাকি উইকেটটি অফস্পিনার জুলফিকার বাবরের। জয়ের জন্য ৯০ রানের লক্ষ্যটাকে ডাল-ভাত বানিয়ে ফেলেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজ ও আহমেদ শেহজাদ। ১১.২ ওভারে ওয়ানডে স্টাইলে ৯২ রান তুলে নেন তারা। ওভারপ্রতি ৮.১১। হাফিজ ৩৩ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ ও শেহজাদ ৩৫ বলে ৬ চারের সাহায্যে ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ২০০৬ সালের পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট-সাফল্য এটি। এর মধ্য দিয়ে এশিয়ান দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৩ জয় (৩৯০ ম্যাচে) তুলে নিলে পাকিরা। ৪৮৮ টেস্টে ১২২ জয়ে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। প্রথম ইনিংসে মহাগুরুত্বপূর্ণ ৯৬ রানের পাশাপাশি ম্যাচে ৬ ক্যাচ নিয়ে দারুণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যের জন্য ম্যাচসেরা সরফরাজ। প্রতিক্রিয়ায় পাক উইকেটরক্ষক বলেন, ‘সুইপ খেলার জন্য কোচ গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের পরামর্শে পর্যাপ্ত অনুশীলন করেছি। প্রথম ইনংসে সেঞ্চুরি পেলে আরও ভাল লাগত। তবে দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরেই খুশি।’ স্বভাবতই বিপরীত প্রতিক্রিয়া লঙ্কান ম্যাথুসের কণ্ঠে। নিজেদের ব্যর্থতার পাশাপাশি মিসবাহদের প্রশংসা করে পরাজিত অধিনায়ক বলেন, ‘সম্প্রতি এটি আমাদের অন্যতম বাজে হার। সাড়ে তিন দিনের মতো খেলা হয়েছে, যেখানে ম্যাচ বাঁচানোর যথেষ্ট সুযোগ ছিল। কিন্তু পারিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে মোটেই ভাল ব্যাটিং করিনি। কৃতিত্বটা পাকিস্তানী স্পিনারদের। ইয়াসির শাহই আমাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে। কলম্বোয় নামার আগে ভুল-ত্রুটি শুধরে উঠতে হবে।’ স্কোর ॥ শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস ৩০০/১০ (১০৯.৩ ওভার; কুশল ১২৫, সাঙ্গাকারা ৫০, চান্দিমাল ২৩, করুণারতেœ ২১, ম্যাথুস ১৯, ভিতানাগে ১৮, দিলরুয়ান ১৫; জুলফিকার ৩/৬৪, ওয়াহাব ৩/৭৪, হাফিজ ২/৪০, ইয়াসির ২/৭৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২০৬/১০ (৭৭.১ ওভার; করুণারতেœ ৭৯, থিরিমান্নে ৪৪, চান্দিমাল ৩৮, সাঙ্গাকারা ১৮, ম্যাথুস ৫, কুশল ৫; ইয়াসির ৭/৭৬, ওয়াহাব ২/৪৬) পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ৪১৭/১০ (১১৩.১ ওভার; শফিক ১৩১, সরফরাজ ৯৬, জুলফিকার ৫৬, ইউনুস ৪৭, মিসবাহ ২০; ধাম্মিকা ৩/৯১, দিলরুয়ান ৪/১২২, হেরাথ ১/৯৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৯২/০ (১১.২ ওভার; হাফিজ ৪৬*, সরফরাজ ৪৩*) ফল ॥ পাকিস্তান ১০ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সরফরাজ (পাকিস্তান) সিরিজ ॥ তিন টেস্টের সিরিজে পাকিস্তান ১-০তে এগিয়ে।
×