ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিচ্ছা কাহিনীর প্রথম প্রযোজনা

মঞ্চে আসছে ‘সুখ চান্দের মোড়’

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ জুন ২০১৫

মঞ্চে আসছে ‘সুখ চান্দের মোড়’

সাজু আহমেদ ॥ সম্ভবত নাটকই একমাত্র শিল্প যেটা নিজ গুণে, আপন মহিমায়, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বে¡ও সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে যায় নাট্যকর্মীদের নির্মোহ ও প্রাণান্ত প্রচেষ্টায়। ত্যাগী এবং নিঃস্বার্থ নাট্যশিল্পীদের উদ্দীপনা আর প্রাণোচ্ছল কর্মস্পৃহায় কোন সঙ্কটের অযুহাতই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না শিল্পের নান্দনিক সৃষ্টিশীলতার পথে। সেই প্রেরণা আর শক্তিকে অবলম্বন করে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে ঢাকার নাট্যমঞ্চে তৈরি হওয়া দর্শক সঙ্কটের সময়েও থেমে নেই অবিরাম নাট্যচর্চা, নতুন নতুন ভিন্ন আঙ্গিকের নাট্য নির্মাণ, নাটক মঞ্চায়ন। তবে নিরাপত্তাহীনতায় দর্শক সঙ্কট, ভাল স্ক্রিপ্ট না থাকা কিংবা নাটকের ক্ষেত্রে সরকারী বা বেসরকারী কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় চলতি বছর নাট্যাঙ্গনে হাতে গোনা কয়েকটি দল ছাড়া নতুন প্রযোজনা অন্তত ঢাকার মঞ্চে খুব একটা দেখা যায়নি। যদিও ইতোমধ্যে কয়েকটি দল ঘোষণা দিয়েছে নতুন নাট্যযজ্ঞ নিয়ে আসছে তারা। এই ঘোষণায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে কিচ্ছা কাহিনী। আগামী শুক্রবার তারা মঞ্চে আনছে ‘সুখ চান্দের মোড়’ নামে নতুন একটি নাটক। দলসূত্রে জানা গেছে, নামের মতো নাটকের উপস্থাপনায় থাকছে ভিন্নমাত্রা। যা শিল্পরসিক দর্শকদের পুলকিত তো করবেই ঢাকার নাট্যমঞ্চে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে এ প্রযোজনাটি। এমনটাই প্রত্যাশা এবং দৃঢ় বিশ্বাস দলের কর্মীদের, অভিনয়শিল্পীদের। তবে সাফল্য, প্রাপ্তি, গ্রহণযোগ্যতা সবই নির্ভর করছে নাটকের প্রাণ দর্শকদের বিচারের ওপর। দলসূত্রে জানা গেছে, শ্রমজীবী মানুষ শত শোষণ বঞ্চনার মাঝেও যে জীবনের হাস্যরসে সিক্ত হতে পারে তার চিত্রায়ন দেখা যাবে নাটকে। বিশেষ করে জানযটে নাকাল রাজধানীবাসীকে একটু রসচিত্ত করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে আদর্শিক বিষয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও যুক্ত করা হয়েছে নাটকের গল্পে। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য আঙ্গিক সঙযাত্রার একটি শিল্পরূপ তুলে ধরা হচ্ছে এ নাটকের নির্মাণ ও উপস্থাপনাশৈলীতে। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পীদের শরীর অঙ্কনের মাধ্যমে এ নাট্য শিল্পপ্রযোজনার গুণগত মানকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। নতুন শিল্প নির্মাণে নাট্যনির্মাতা এবং অভিনয়শিল্পীদের শ্রম, সামর্থ্যরে সবটুকু ঢেলে দিচ্ছেন দর্শকদের নাট্যরস ব্যঞ্জনের স্বাদ দিতে। এহেন প্রস্তুতি নিয়েই আগামী ২৬ জুন শুক্রবার মঞ্চে আসছে কিচ্ছা কাহিনী প্রযোজিত প্রথম নাটক ‘সুখ চান্দের মোড়’। নাটকটি রচনা করেছেন আসাদুজ্জামান দুলাল। নির্দেশনা দিচ্ছেন কিচ্ছা কাহিনীর স্বত্বাধিকারী তরুণ মেধাবী নাট্যশিল্পী, নির্দেশক মো. জসিম উদ্দিন। নাটকে তিনি তরুণ অভিনয় শিল্পীদের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। এ নাটকের তারুণ্যনির্ভর অভিনয় শিল্পীরা হলেন মো. নোমান, সুরেশ চন্দ্র দাস (খোকন), মো. শামীম মিয়া, তানভীর আহমেদ, মোহাম্মদ জাভেদ (আকাশ), মো. জান্নাতুন আদনান (অভি), শুভজিৎ কুমার পাল, কাকন চৌধুরী, অমিতাভ রাজীব, মো. মাহবুবুর রহমান, পংকজ দাস (নিরব) প্রমুখ। এছাড়া নাটকের পোশাক ও শরীর অঙ্কনে রয়েছেন এনামতারা সাকী, প্রপস ও সেট ফজলে রাব্বি সুকর্নো, আলোক পরিকল্পনা শওকত হোসেন সজীব। নতুন নাট্য প্রযোজনার কৈফিয়ত প্রসঙ্গে নির্দেশক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সুখ চান্দের মোড়’ নাট্য রচনাটি আমার হাতে আসে সাত-আট বছর আগে। কয়েকটি দলে এ প্রযোজনা নির্মাণ করতে গিয়ে আমি সফল হতে পারিনি। অবশেষে কিসসা কাহিনীর প্রথম প্রযোজনারূপে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এ নাটক। সহজ সরল এক নাট্য আখ্যান সুখ চান্দের মোড়। শ্রমজীবী মানুষ শত শোষণ বঞ্চনার মাঝেও যে জীবনের হাস্যরস অবগাহন করতে পারে তারই দুয়াপাত রয়েছে এই পা-ুলিপিতে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে আমাদের নাট্য নির্মাণে অনেকটা অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যাঙ্গিক সঙযাত্রা। শরীর অঙ্কন শিল্প এ প্রযোজনায় বৃদ্ধি করেছে গুণগত মান। আমরা আমাদের শ্রম, সময়, ও সামর্থ্যরে শেষ বিন্দুটুকু ঢেলে দিয়েছি এই শিল্প নির্মাণে। তবে ব্যঞ্জনের স্বাদ কেমন হয়েছে তা বিচারের এখতিয়ার ভোক্তা তথা দর্শকদের। তিনি আরও জানান, ‘সুখ চান্দের মোড়’Ñপ্রত্যন্ত এক গ্রামের চার রাস্তার সংযোগ স্থলের নাম। নাটকের কাহিনীতে দেখা যাবে গ্রামের বড় রাস্তার সঙ্গে পিচঢালা সংযোগ সড়ক নির্মাণ হচ্ছে সুখ চান্দের মোড় থেকে। এ নিয়ে সবাই ব্যস্ত। কামলা, কামলার দালাল, রাজমিস্ত্রি, ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার এমনকি রাজনীতিবিদরা ও এই ব্যস্ততায় যুক্ত। অনেক আশা-আকাক্সক্ষা আর সুখের সম্ভাবনা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এই রাস্তা। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও যুক্ত করা হয় এই রাস্তার সঙ্গে। কিন্তু সত্যিই কি সুখ আর সম্ভাবনার প্রতীক এই রাস্তা? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি যুক্ত হচ্ছে এই নির্মিতব্য অবকাঠামোর সঙ্গে! নাকি কামলা থেকে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত সুখ সন্ধানী মানুষের পারস্পরিক শোষণের পর্যায়ক্রমিক কাঠামো পোক্ত হচ্ছে এই কর্মযজ্ঞে! এমনি গোলক ধাঁধার আবর্তেও কেউ না কেউ থাকে যে পরিচ্ছন্ন স্বপ্নের ক্যানভাসে সুন্দর স্বদেশের স্বপ্ন দেখে। সে কবি কাশেম গণি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে সে প্রতিরোধও গড়ে তোলে শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে। আপাত দৃষ্টিতে এই প্রতিরোধ ব্যর্থ হয় তবে কাশেম গণির এই প্রতিরোধ আমাদের সচেতনতার দুয়ারে যে করাঘাত করে যায় তাতেই এর সার্থকতা। এমন ঘোষণায় প্রত্যাশার সবটুকু নিয়ে দর্শক যাবেন নাটক দেখতে। ফিরবেন না খালি হাতে। এমনটাই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
×