ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

দিনভর নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২২ জুন ২০১৫

দিনভর নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চরণে চরণে তিনি লিখেছেন দেশ ও দশের কথা। তাঁর শাণিত কাব্যের শরীরজুড়ে উচ্চারিত হয়েছে সমাজ ও মানুষের কথা। ছন্দ আর অনুপ্রাসের অবলম্বনে বলেছেন মুক্তিকামী বাঙালী স্বাধীনতার কথা। জাগ্রত করেছেন স্বদেশের চেতনাবোধ। দেশাত্মবোধের পাশাপাশি প্রেম কিংবা বিরহের বাণীও উঠে এসেছে এই কবির কবিতায়। আর এভাবে কয়েক দশক ধরে বাংলা কবিতার জমিন চষে ফলিয়ে কবিতার সোনালী ফসল ফলিয়ে যাচ্ছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। রবিবার ছিল বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ বরেণ্য এই কবিার ৭১তম জন্মদিন। আর দিনভর উদ্্যাপিত হলো কবির জন্মোৎসব। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার হলে সকাল থেকেই জন্মদিন উদ্্যাপনের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। প্রদর্শিত হয় কবির কবিতা অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র। সেই সঙ্গে দেখানো হয় কবির অভিনীত নাটক। আর আষাঢ়ের বিকেলে কবিকে জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। কথা ও কবিতায় নিবেদন করা জন্মদিনের অঞ্জলি। অতিথিদের নিয়ে কবি প্রজ্বলন করেন গাঁদা ফুলের গুচ্ছ দিয়ে আবৃত ৭১টি মোমবাতি। যৌথভাবে এ জন্মোৎসব উদ্্যাপনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইকোলজি এ্যান্ড অটিজম ফিল্ম ফোরাম ও জাতীয় কবিসভা। বিকেল সাড়ে চারটা থেকেই কবিকে শুভেচ্ছা জানাতে মিলনায়তনের বাইরে ভিড় জমে যায় অতিথিসহ অনুরাগীদের। তবে ক্রিকেটানুরাগী এই খেয়ালি কবি তখন মগ্ন ছিলেন টেলিভিশনের পর্দায়। দেখছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তেজনাকর ক্রিকেট ম্যাচ। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতেই পাঁচটার পর শুভেচ্ছা নিবেদন পর্ব শুরু হয়। এরপর ৬টা ১০ মিনিটে নির্মলেন্দু গুণের উপস্থিতিতে প্রাণের সঞ্চারণ জন্মোৎসবের আয়োজনে। জন্মদিনে আপন অনুভূতি প্রকাশ করে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, দু’দিন আগেও জানতাম না ঘটা করে আমার জন্মদিন উদ্্যাপন করা হবে। এই জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা আমাকে মোকাবেলা করতে হবে। বিষয়টি জানার পর যুক্ত হলাম আয়োজনের সঙ্গে। আর এতে আমার স্নায়ুর ওপর একটা চাপ পড়ে যায়। কোন এক কারণে আজ বৃষ্টি হচ্ছে। এখন উপলব্ধি হচ্ছে আমার জন্মদিনেও বৃষ্টি ঝরে! এরপর সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন কবি। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নির্মলেন্দু গুণের ‘মানুষ’ কবিতা ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অমলকান্তি’ কবিতা অবলম্বনে নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। দ্য পোয়েট্রি বা কবিগাছ শিরোনামের চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করবেন করছেন মাসুদ পথিক। ছবিটিতে নির্মলেন্দু গুণ অভিনয়ও করবেন বলে জানানো হয়। কবিকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান কবি, নাট্যজন, ছড়াকার শিক্ষকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ছড়াকার আসলাম সানী। আর গুণকে ফুলেল শুভেচ্ছা নিবেদনের পাশাপাশি তাঁকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কবি নূহ-উল-আলম লেনিন, জাতিসত্তার কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, সাবেক সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, প্রাবন্ধিক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, কবি মাহবুব আজীজ, কবি বিমল গুহ, শিক্ষক ও কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি তপন বাগচী, কবি রবীন্দ্র গোপ, লেখক স্বকৃত নোমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ পথিকসহ বিশিষ্টজনরা। এছাড়া জাতীয় কবিতা পরিষদ, গণজাগরণ মঞ্চ, কবিসভা, সাতিত্য পত্রিকা পান্থজন, দৈনিক সমকাল পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, আমি সৌভাগ্য যে তিনি আমার সহপাঠী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নির্মলেন্দু গুণ কবি হিসেবে আলোড়ন তোলেন। তাঁর রচিত ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ কাব্যগ্রন্থটি সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তিনি এই সময়ের প্রধান কবিদের একজন। রণজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, এই কবি আমাদের স্বাধীনতা শব্দটি চিনিয়েছেন। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে তাঁর কবিতার অস্তিত্ব প্রবলভাবে বিরাজমান। যতদিন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না ঘুচবে তিনি আমাদের প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন। বক্তব্যের মাঝে এই বক্তা কবির কসাই কবিতার কয়েকটি চরণ পাঠ করেন। মামুনুর রশীদ বলেন, আজ এখানে কবিবন্দনার জন্য উপস্থিত হয়েছি। তাঁর অসংখ্য অনুরাগীর আমিও একজন। তাঁর কাব্যযাত্রা ও আমার নাট্যযাত্রার সূচনা হয় একসঙ্গে। তাই তাঁর সকল কীর্তিকে নিজের কীর্তি মনে হয়। প্রত্যাশা করি তাঁর কবি বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। আসলাম সানী বলেন, একাত্তর আমাদের স্বাধীনতার সংখ্যা। আর আমাদের স্বাধীনতার কবি নির্মলেন্দু গুণ পা রাখছেন ৭১ বছরে। ৭১ আমাদের জাতির জন্য শুভ সংখ্যা। ৭১ বছরে পা দিয়ে কবি আবারও শুভ সংখ্যার দিকে পা বাড়াচ্ছেন। তিনি শুধু কবিতা ও শিল্পের সঙ্গে বসবাস করেছেন, তার অর্থ-বিত্ত-যশের মোহ নেই। অনুষ্ঠানে মিলন সব্যসাচী আবৃত্তি করেন কবির ‘রক্তগোলাপ’ কবিতাটি। এছাড়াও গুণের কবিতাপাঠে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ। বৈকালিক অনুষ্ঠানের আগে সকাল ১১টায় শুরু হয়েছিল জš§দিনের আয়োজন। এগারোটা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দেখানো নির্মলেন্দু গুণের রচনা অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রের তিনটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। আর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী পর্বের শুরুতে দেখানো হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নির্মলেন্দু গুণ অভিনীত টেলিভিশন নাটক অস্পষ্ট। এতে তিনি অভিনয় করেছেন রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায়। এরপর দেখানো হয় তাঁর কবিতা অবলম্বনে নির্মিত মাসুদ পথিক পরিচালিত সরকারী অনুদানের চলচ্চিত্র ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। এছাড়াও উৎসবে দেখানো হয় গুণের কবিতানির্ভর তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘হুলিয়া’। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের সেমিনার ॥ সঙ্গীত মানুষকে প্রশিক্ষিত করে। তার চিত্তবৃত্তিকে বিকশিত করে। নবনব পত্রপুষ্পে ভরে তোলে জীবন। কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটায়। সূক্ষ্মতর অনুভূতিকে জাগ্রত করে মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। সেই শক্তি জোরেই সঙ্গীত সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলে। তাই সঙ্গীত ছাড়া সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। ‘সঙ্গীত : সভ্যতার অপরিহার্য অনুষঙ্গ’ শীর্ষক প্রবন্ধে সঙ্গীত সংগঠক ও শিল্পী মাহমুদ সেলিম এসব কথা বলেন। রবিবার ছিল বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। এ উপলক্ষে ‘সঙ্গীত নেই তো, সভ্যতা নেই’ সেøাগানে শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী। সুজিত মোস্তফার সভাপতিত্বে পঠিত প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান, কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, সাবেক সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ^াস প্রমুখ। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ রায় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। দুইটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা। সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা...’ ও ‘একটাই পৃথিবী একই আকাশ’। এরপর অনুষ্ঠিত সেমিনারে অংশ সঙ্গীতাঙ্গনের শিল্পী ও কলা-কুশলীরা।
×