ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

ঈদে লঞ্চে যাত্রী ও মালামাল ওভারলোড করলে কঠিন শাস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ জুন ২০১৫

ঈদে লঞ্চে যাত্রী ও মালামাল ওভারলোড করলে কঠিন শাস্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ষায় ঈদ যাত্রায় বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিটিএ) সভাকক্ষে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে লঞ্চ, ফেরি সার্ভিস ও স্টিমারসহ অন্যান্য জলযানের নিরাপদ চলাচল বিষয়ক এক সভায় জানানো হয় এবার বর্ষার মধ্যে ঈদে যাত্রী পরিবহন করতে হবে। সঙ্গতকারণে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয় ঈদের সময় কোন ক্রমেই লঞ্চে যাত্রী ও মালামাল ওভারলোড করা যাবে না। লোড লেভেল ক্রস করার আগেই লঞ্চ ছেড়ে দিতে হবে। সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ার পর পথিমধ্যে লঞ্চ থামিয়ে নৌকা বা অন্য কোন মাধ্যমে যাত্রী বা মালামাল উঠানো যাবে না। বাড়তি অর্থ উপার্জনে কোন লঞ্চ মালিক তা করলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, ঈদের সময় লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া যাবে না। লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে নৌপথে সকল মাছ ধরার জাল পাতা বন্ধ রাখতে হবে। লঞ্চে যাত্রী উঠার সময় থেকে লঞ্চের চালক, মাস্টার ও অন্য কর্মচারীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঈদের পূর্বে তিন দিন ও ঈদের পরে তিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ রাখতে হবে। রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত) সকল প্রকার মালবাহী জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। মাওয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে অধিক যাত্রী হলে প্রয়োজনে ফেরি দিয়ে যাত্রী পার করা হবে। সূর্যাস্তের পর স্পিডবোট চলবে না। স্পিডবোটের যাত্রীদের অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, সার্বিক অবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভিজিলেন্স টিম গঠন করবে। ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটসমূহে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নিয়ন্ত্রণের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার সেক্টরে ঈদের ছুটি পুনর্বিন্যাস করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, বিজেএমইএ, বিকেএমইএকে অনুরোধ জানানো হবে। ফেরিঘাটে সিরিয়াল দেয়ার জন্য কোন প্রকার অনিয়ম করা যাবে না। যাত্রীসেবা নিশ্চিত ও নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সভায় জানানো হয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃক পরিচালিত ১৪টি ফেরিঘাট ও ফেরিঘাট সংলগ্ন লঞ্চ ঘাটগুলোতে পহেলা জুলাই থেকে ইজারা প্রথা বন্ধ থাকবে। ফেরিতে উঠার আগে বড় বাস ও ট্রাকপ্রতি ৪০ টাকা এবং ছোট গাড়িপ্রতি ২০ টাকা দিতে হবে। এসময় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ঈদে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে লঞ্চগুলোর ওপর কড়া নজরদারি থাকবে। রোজার ঈদ পড়েছে বর্ষায়। পুরো বর্ষায় আমাদের যাত্রীদের পারাপার করতে হবে। নতুন করে দুর্ঘটনা ঘটুক আমরা চাই না। তিনি বলেন, এবারের ঈদে লঞ্চের ওপর কড়া নজরদারি থাকবে, যাতে অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে না পারে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকলে ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা করা হবে। তবে বিগত বছররগুলোর তুলনায় নৌ-দুর্ঘটনা কমেছে এমন দুটি উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪ সালে ৩১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ২০১৫ সালে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০টি।’ মন্ত্রী বলেন, নৌ-পথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এখন নতুন নতুন জাহাজ আসছে। এ পর্যন্ত ৯টি জাহাজ এসেছে। মধুমতি নামের আরেকটি জাহাজ আনা হয়েছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোন দিন উদ্বোধন করবেন। প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে প্রতিবছরই লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটছে। গত বছর ৪ আগস্ট ঈদ ফেরত যাত্রায় মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে আসার পথে পদ্মায় এমভি পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ ডুবে যায়, যাতে প্রাণহানি ও নিখোঁজের মোট সংখ্যা ছিল শতাধিক। বেপরোয়া চলাচলসহ অতিরিক্ত যাত্রী বহনকে ওই দুর্ঘটনার কারণ বলে দায়ী করা হয়। পিনাক-৬ ডুবির প্রসঙ্গ টেনে নৌমন্ত্রী জানান, এরপর ১১টি ছোট লঞ্চ বন্ধসহ বর্ষার মৌসুমে বেশ কয়েকটি ছোট লঞ্চ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্ষার সময় সব ছোট লঞ্চের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এম জাকিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, নৌ-পুলিশের মহাপরিচালক লঞ্চ মালিক, শ্রমিক, সড়ক পরিবহন ফেডারেশন, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ উপস্থিত ছিলেন।
×