ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ জুন ২০১৫

খোশ আমদেদ  মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের চতুর্থ দিবস আমরা অতিবাহিত করছি। রমজানে মুসলমানের জীবন মুসলমানদের সংস্কৃতি একটু আলাদা, একটু ভিন্ন। হৃদয়কাড়া নানা আয়োজন উপভোগে রাতদিন মুমিন মন থাকে মশগুল। আপনি রমজানের মৌসুমে জনপদের যে প্রান্তেই অবস্থান করুন, ভোর রাতে নানা ধরনের গজলের সুর কানে আসবেই। মুসলিম শিশু-কিশোর স্বেচ্ছাসেবী দল নানা কোরাস তুলে ঘণ্টাধ্বনি কিংবা সাইরেন দিয়ে সেহ্রি গ্রহণের জন্য রোজাদারদের নিদ্রাভঙ্গে প্রয়াস চালায়। যেমন কোথাও কোথাও কিশোররা মসজিদের মাইক থেকে ভোর রাতে গেয়ে উঠে: ‘রমজানেরই রাতের শেষে/ঘুমিয়ে কেন তুমি এখন সেহ্রির যে সময় হলো/ উঠো উঠো মুমিনগণ।’ সেহ্রি অর্থ কোন কিছু পানাহার পূর্বক প্রত্যুষে সুবহে সাদিকের আগে রোজার শুভ সূচনা করা (আমাদের অনেকে সাহরীকে ‘সেহেরী’ বলে, এটা শুদ্ধ নয়। তবুও এটা প্রচল হয়ে আছে)। উল্লেখ্য, সাহরী/সেহ্রি ভোররাতে নিছক একটি খানাপিনার আয়োজন নয়। এটি ইসলাম ধর্মে ইবাদতের মধ্যে শামিল। এ এক পবিত্র মুহূর্ত। আল কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে : তোমরা পানাহার করো, যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য সাদা সুতা কালো সুতা হতে সুস্পষ্ট না হয়।’ রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন তোমরা সেহ্রি খাও। কেননা এতে বড়ো বরকত নিহিত।’ Ñবুখারী শরীফ। বিখ্যাত সাহাবী হযরত যায়িদ ইবনে সাবিত (রাদি:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা প্রিয় নবী হুজুরে কারীম (স.) এর সাথে সেহ্রি খেয়েছি। পরে তিনি ফজরের নামাজ পড়েছেন। সাহাবী যায়েদ (রাদি:) স্মৃতি রোমাঞ্চনের সময় একজন জানতে চাইলেন তখন আজান ও সেহ্রির মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? উত্তরে তিনি জানালেন ৫০ আয়াত তিলাওয়াত করতে যে সময় লাগে সে সময় পরিমাণ।’ রাসূলে আকরাম (স.) অন্যত্র বলেছেন : নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর ফিরেস্তারা সেহ্রি গ্রহণকারীর ওপর রহমত ও দোয়া প্রেরণ করেন। -(ফাজায়েলে তাবরানী)। সুতরাং আমরা যেন সেহ্রি অনুষ্ঠানকে রমজানের পালনীয় একটি অন্যতম সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করি। কোন ধর্মীয় ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কিংবা কৃত্রিমতার আশ্রয় নেয়া উচিত নয়। আল্লাহপাক বান্দাকে শুধু উপোস রেখে পরীক্ষা করতে চান তা নয়, পবিত্র ও হালাল পন্থায় পানাহারের যে তাগিদ রয়েছে সেহ্রির প্রতি ইসলামের উৎসাহ প্রদান সে ইঙ্গিত বহন করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তো স্পষ্টত বলে ফেলেছেন : ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার পার্থক্য হচ্ছে সেহ্রি খাওয়া নিয়ে।’ (ইমাম মুসলিম হাদীসটি আমর ইবনুল আসের (রাদি:) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন)। সেহ্রি যথাসম্ভব দেরি করে খাওয়া ভাল। তবে এত দেরি করা উচিত নয় যে, যখন সুবহে সাদিক হওয়ার আশঙ্কা হয়। কেউ যদি সেহ্রি খুব জলদি খায়, কিন্তু তারপর পান-চা-পানি ইত্যাদি অনেক্ষণ পর্যন্ত খেতে থাকে এবং সুবহি সাদিক হওয়ার অল্প পূর্বে কুলি করে ফেলে তবুও দেরি করে খাওয়ার সওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি কারো রাতে ঘুম না ভাঙ্গে এবং সে জন্য সেহ্রি খেতে না পারে- তখন সেহ্রি না খেয়ে রোজা রাখবে। সেহ্রি না খাওয়ার কারণে রোজা ছেড়ে দেয়া বড়ই কাপুরষতার লক্ষণ। আমরা যেন এসব বিধি বিধান পালনে সতর্ক হই, তাহলেই আল্লাহ তায়ালার রহমতের যে বারিধারা এ মৌসুমে প্রবাহমান তা আমাদের সিক্ত করবে।
×