ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীতে নেই কর্মচাঞ্চল্যতা

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২২ জুন ২০১৫

ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীতে নেই কর্মচাঞ্চল্যতা

তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী ॥ ব্যবসায়ীরা ১২ মাস ব্যবসা করলেও বিশেষ মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। প্রত্যেকটি ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী বছরের বিভিন্ন সময় একেকটি মৌসুমের সঙ্গে সাক্ষাত হয়ে থাকে। সে সুযোগে তারা সফল ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশের অবস্থা, পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়ীদের মৌসুমগুলোতে সফলভাবে ব্যবসা করার। রমজান মাস চলছে। ঈশ্বরদীর অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতই ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়ীরাও আশায় বুক বেঁধে ছিল আসছে ঈদকে সামনে রেখে গোটা রমজান মাসে ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ি উৎপাদন ও বিক্রি করে বেশি টাকা আয় করবে। কিন্তু সে গুড়েবালি। দেশের অবস্থা, পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভাল থাকার পরও এবার বেনারসি ব্যবসায়ীরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। নানাবিধ কারণেই বেনারসি ব্যবসায়ীদের হতাশার মধ্যে পড়তে হয়েছে। প্রথমত ভারতীয় বেনারসি ও কারচুপিসহ বিভিন্ন প্রকার দামী শাড়ি অবাদ আমদানির কারণে ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লী অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারীভাবে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ২০০৪ সালে ১২ ডিসেম্বর ৯০টি প্লট বিশিষ্ট ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর উদ্বোধন করা হলেও সেখানে বর্তমানে ৮টি প্লটে কারখানা চালু রয়েছে। বাকিগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি শুধু ভারতীয় শাড়ি আমদানির কারণে। দক্ষ কারিগর, ভাল পরিবেশ ও কারখানা মালিকদের ব্যবসায়িক মানসিকতা থাকা সত্ত্বেও তারা কারখানাগুলোতে উৎপাদন ঠিক রাখতে পারছেন না। যদিও ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীতে উৎপাদিত শাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা শাড়ি উৎপাদন করে ভারতীয় শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না। এ অবস্থায় বছরের পর বছর অনেক কারখানা মালিকই তাদের উৎপাদিত বেনারসি শাড়ির পাশাপাশি ভারতীয় থান কাপড় এনে তাতে কারচুপির কাজ করে লেহেঙ্গা, শেরয়ানী, থ্রিডি শাড়ি, চুলবুলি শাড়ি, থ্রিপিস, পার্টি শাড়ি, বিয়ে শাড়িসহ বিভিন্ন প্রকার কাপড় ও থ্রিপিসে কাজ করে কোন রকমে টিকে আছে। ভাই ভাই কারচুপি হাউস ও আধুনিক কারচুিপ হাউসের স্বত্বাধিকার আফজাল হোসেন আরশাদ জানান, ভারতীয় নামীদামী ব্যান্ডের শাড়ি আমদানি হলেও মানের দিক থেকে ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীতে উৎপাদিত শাড়ির মান অনেক উন্নত। ক্রেতারা নামে বিশ্বাস করে ভারতীর শাড়ি কিনে থাকে। একটু বেশি দাম হলেও মানের দিক দিয়ে ঈশ্বরদীতে তৈর বেনারসি শাড়ির মান ভাল ও টেকসই। ঈদ সমাগত হলেও বেনারসির চাহিদা কম হওয়ায় আমরা বাধ্য হয়েই ভারতীয় থান কাপড়ের উপরে কারচুপির কাজ করে বাজারজাত করছি। একইভাবে আলমগীর বেনারসি, সোহেল বেনারসি, শামিম বেনারসি, জাবেদ বেনারসি, নাদিম বেনারসি, মহিউদ্দিন বেনারসি, জাবেদ বেনারসি এন্ড সিল্ক হাউসের অবস্থা শোচনীয়। এসব কারখানার মালিকরাও অন্যবারের মতো ঈদ মৌসুমে ভাল ব্যবসা করতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে। ঈশ্বরদী বেনারসির পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কার সিদ্দিক জানান, ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর উদ্বোধন করা হয় মোট ৯০টি প্লট দিয়ে। উদ্বোধনের পর ৮টি কারখানা চালু করা হয়। প্রতিদিন এসব কারখানায় ৪০ জন করে কারিগর কাজ করে। এখানে দৈনিক ২০ থেকে ২৫টি করে উন্নতমানের বেনারসি শাড়ি উৎপাদন করা হয়। শাড়ির তৈরির পর ঢাকার মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জে পলিশ করার জন্য পাঠানো হয়। এতে কারখানা মালিকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এদিকে ৩ রোজা পার হলেও এবার এখনও বেনারসি পল্লী এলাকায় শাড়ি উৎপাদন ও বিক্রিকে ঘিরে কর্মচাঞ্চল্যতা দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ধারণা করছেন ভারতীয় কাতানসহ বিভিন্ন প্রকার শাড়ি আমদানি বন্ধ না করা এবং সরকারীভাবে কারখানা মালিকদের পর্যাপ্ত সুদমুক্ত ঋণ দেয়া না হলে ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লী এক সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
×