ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল গঠনে ডিও শিক্ষামন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুন ২০১৫

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল  গঠনে ডিও শিক্ষামন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল গঠন করতে রাষ্ট্রপতির সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে ডিও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মন্ত্রী ডিও পাঠিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকেও। শিক্ষামন্ত্রী একই সঙ্গে ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকদের পদমর্যদা যথাযথ স্থানে নির্ধারণের জন্য ডিও দিয়েছেন। এদিকে নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত না করলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন বেসরকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এর আগে গেল সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন স্কেল নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়ে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষক নেতারা বলেন, সপ্তম বেতন স্কেলে সচিব, সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ও মেজর জেনারেল এক নম্বর গ্রেডে থাকলেও নতুন বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের বেতন আগের তুলনায় তিন থেকে চার ধাপ নেমে গেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। বেতন স্কেল নিয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভের বিষয়গুলো তুলে ধরেন তারা, আমরা সরকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থায় যাব না। স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দিয়ে আমাদের মার্যদা দেয়া হোক। শ্রীলঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে পথে গিয়েছেন আমরা সে পথে যেতে চাই না। আমরা দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছি। প্রয়োজনে জাতির স্বার্থে দীর্ঘ কর্মসূচীতে যাব। শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বেতন কাঠামোয় সংশোধন এনে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবি পূরণে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন। শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতির নিয়ামক শক্তি হচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের মর্যাদা-সম্মান রক্ষায় ফাইট করব। জানা গেছে, শিক্ষকদের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটেই রবিবার শিক্ষামন্ত্রী ডিও লেটার দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রস্তাবিত জাতীয় বেতন কাঠামো সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ডিও পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী জানিয়েছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল গঠন এবং ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এ প্রফেসরদের পদমর্যদা যথাযথ স্থানে নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী এই ডিও প্রেরণ করেছেন। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রবিবারও বলেছেন, সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের পদমর্যাদা সিনিয়র সচিবের সমান করতে হবে। শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের পদমর্যাদা উন্নতিকরণ এবং সরকারী কর্মকর্তাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গাড়ি ও অন্য সুবিধা দিতে হবে। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ডিও দিলেই সঙ্কটের সমাধান হবে না বলে জানিয়েছেন বেসরকারী স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষক নেতারা বলেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে বেসরকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত না করলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জামান, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সাজাহান আলম সাজু, অধ্যক্ষ সমরেন্দ্রনাথ রায় সমর, মোজাম্মেল হক, আবদুল খালেক, আবদুল মজিদ, সুনীল চন্দ্র পাল, হাসিনা পারভীন, শাহ আলম, ফজরুল হক প্রমুখ। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী বলেন, ১ জুলাই থেকেই বেসরকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারী বিধি অনুযায়ী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করতে হবে। এছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্রুত এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৬৫ বছরে উন্নীত করার দাবি জানান তিনি। শিক্ষক নেতা মোজাম্মেল হক বলেন, সরকার আমাদের দাবি না মানলে দেশের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে না। তালা দিয়ে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী বাহামা গেছেন ॥ কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের শিক্ষামন্ত্রীদের ১৯তম সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাহামা গেছেন। মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২২ থেকে ২৬ জুন বাহামার রাজধানী নাসাউতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন উদ্ভাবন ও প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহ তাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে যাতে তথ্যভিত্তিক নীতি, কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে তা নির্ধারণ করাই হবে সম্মেলনের মূল বিবেচ্য বিষয়।
×