ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস

২৪ বছর ঝুলে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ২১ জুন ২০১৫

২৪ বছর ঝুলে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজারে টেকনাফ ও উখিয়ার দুইটি ক্যাম্প এবং বস্তিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সমস্যার সমাধান হয়নি। রোহিঙ্গারাও চায় অধিকার আদায় নিশ্চিত হলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবে। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে নানা সমস্যা ও বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। গত বছরের ৩১ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে ২ হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নেবে। ২ মাসের স্থলে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। এ ব্যাপারে কোন ধরনের সাড়া দেয়নি মিয়ানমার সরকার। ২ হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করার সিদ্ধান্ত গত ১০ মাস ধরে ফাইল বন্দী হয়ে রয়েছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। শরণার্থী ছাড়াও বস্তিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে রাজি রয়েছে। তবে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের বেলায় আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। টেনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের আবদুল মজিদ জানান, প্রায় ২৩ বছর ধরে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে প্রবাসে শরণার্থী হয়ে বসবাস করছি। আমরা উদ্বাস্তু হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ও বিদেশী এনজিও সংস্থার সাহায্য নিয়ে কোন রকমে দিন যাপন করছি। সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার ২টি শরণার্থী ক্যাম্পে ৩৩ হাজারসহ ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। রোহিঙ্গারা আরাকান রাজ্যে বসবাসকারী স্থানীয় অধিবাসীদের দেশটির সরকার সেদেশের নাগরিকত্ব না দেয়ায় রোহিঙ্গা মুসলিম এই জনগোষ্ঠী মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ভাষা ও সংস্কৃতির মিল থাকায় ওরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে বেশিরভাগ। কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম শহরে এদের আত্মীয়স্বজনরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করার সুবাদে নতুন করে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারীরা রোহিঙ্গারা ওইসব বাড়ি-ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। ১৯৯১-৯২ সালে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার অত্যাচারের অজুহাত তুলে ২ লাখ ৫২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে চলে এসেছিল। পরবর্তীতে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন শরণার্থী স্বদেশে ফিরে গেলেও আরও ২৫ হাজার শরণাথী প্রত্যাবাসন হতে পারেনি। ওই সময় স্বার্থান্বেষী কতিপয় মৌলবাদীদের প্ররোচনায় কিছু সংখ্যক এনজিও কর্মীদের সহযোগিতায় মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে দিয়ে বাংলাদেশে ফের অনুপ্রবেশ করে বনভূমি দখল করে ঝুপড়ি তৈরি করে। সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই ২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে শরণার্থী প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। রোহিঙ্গারাই দেশে নানা অপরাধ ও বেআইনী কাজ সৃষ্টি করছে। মানবপাচার করে সাগরে বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ার পেছনে দায়ী ওইসব রোহিঙ্গা। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার গণকবরে শত শত কঙ্কাল এবং বিভিন্ন বন্দীশিবির থেকে নীরিহ লোকজনকে উদ্ধার ঘটনার নায়কই হচ্ছে রোহিঙ্গারা।
×