ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বসঙ্গীত দিবসে শিল্পীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২১ জুন ২০১৫

বিশ্বসঙ্গীত দিবসে শিল্পীদের ভাবনা

বিশ্ব সঙ্গীত দিবস আজ। বহু বছর ধরে গানের ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজন করে আসছে ফ্রান্স। এভাবে ১৯৮২ সালে এসে এ ফেস্টিভ্যাল ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিত ডে’ রূপ নেয়। ফরাসী ভাষায় ফেট ডে লা মিউজিক-আর বাংলায় বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। সঙ্গীত মানে না কোন কাঁটাতারের বেড়া। ভাল গান যে কোন সংবেদনশীল মানুষের মন ছুঁয়ে যায়, তা সে হোক না যে কোন ভাষার গান। বিশ্বের ১১০টি দেশে ঘটা করে পালিত হচ্ছে উৎসবটি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। ‘সঙ্গীত নেইতো সভ্যতাও নেই’ সেøাগানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ যৌথভাবে দিবসটি উদযাপন করছে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে বিকাল ৪টায় উদ্বোধনী সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বিশ্বসঙ্গীত দিবসের এ বছরের কার্যক্রম শুরু হবে। এ দিবসকে ঘিরে সঙ্গীতাঙ্গনের মানুষদের ভাবনা নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন গৌতম পা-ে। তপন মাহমুদ : আমি বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি। আমাদের সংগঠন থেকে বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উদযাপনের শুরুটা খুব বেশি দিনের নয়। এ দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য হলো আমাদের দেশীয় যত রকমের সঙ্গীত আছে সেগুলোকে মূল্যায়ন করা। সব শিল্পীদের একীভূত করে দেশীয় সঙ্গীতকে আরও সমৃদ্ধ করা। মোট কথা হলো আমাদের মূল ধারার সঙ্গীতকে এক জায়গায় নিয়ে আসা জরুরী। তখন আমরা বিশ্ব সঙ্গীত নিয়ে ভাবতে শিখব এবং এ সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচিত হতে পারব। চন্দনা মজুমদার : আমি বাংলার মাটির গান, মানুষের গান গাই। আমার রক্তের মধ্যে মিশে আছে এসব গান এবং আজীবন মিশে থাকবে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলাম এক ফোক ফেস্টিভ্যালে। সেখানে আমার সম্পূর্ণ পরিবেশনায় ছিল লালনের গান। আমার বেশ-ভূষায় বাউলের ছাপ না থাকলে এ ধরনের গানের ভেতর ঢুকতে পারি না। সেখানে এগুলোর কমতি ছিল না। সেখানে একটা বিষয় আমাকে সবচেয়ে আপ্লুত করেছে, সেটা হলো শ্রোতাদের একাগ্রতা। তারা হয়ত আমাদের ভাষা বোঝে না, কিন্তু সুরের আবেগ তাদের মধ্যে লক্ষ্য করেছি। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে তাই আমার এটাই আহ্বান এদেশের সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে, দেশীয় সংস্কৃতিকে আমরা লালন করতে শিখি এটা নিয়েই আমরা বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব। বিশ্বজিৎ রায় : বিশ্ব সঙ্গীত দিবস সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে। আমরাও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালন করে আসছি। আমি বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের এবারের আয়োজনে পঞ্চাশটির মতো সংগঠন অংশ নিচ্ছে। এবার আমরা চার জন প্রয়াত শিল্পীকে স্মরণ করছি। এরা হলেন- রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মীর মহিউদ্দিন সোহান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুবল দত্ত, বেহালা বাদক শিল্পী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীতের পাশাপাশি এবার থাকছে সঙ্গীত বিষয়ক সেমিনার। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্ব সঙ্গীতের সঙ্গে আমাদের সঙ্গীতকে মেলানো। ফাহ্মিদা নবী : বিশ্ব সঙ্গীত দিবসকে কেন্দ্র করে চ্যানেল আইতে আজ সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ‘গানে গানে সকাল শুরু’ অনুষ্ঠানে আমি গাইব। সঙ্গীতের একটা বিষয় আমাকে সব সময় ভাবায়, সেটা হলো অস্থিরতা। গোটা বিশ্বে সঙ্গীতে চলছে অস্থিরতা। এ কারনেই কোন গান শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিতে পারছে না। এখন সঙ্গীতে পুরো বিষয়টা দেখার হয়ে গেছে। এটা মনের ভেতর জায়গা করে নিতে পারছে না। তবে আমি মনে করি কোন বিষয় যখন পুরোপুরি অস্থিরতায় ভরে যায়, তখন তার দুঃসময় কেটে যাওয়ারও একটা সময় এসে যায়। আমি মনে করি এ দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে শিল্পীদের মিলিত হওয়া জরুরী। কেন আমরা মিলিত হতে পারছি না এটা বুঝতে পারছি না। দেশে এত এত কনসার্ট হচ্ছে কিন্তু এ ধরনের মিলন মেলা কেন হচ্ছে না এটা আমাকে ভাবায়। সুজিত মোস্তফা : সঙ্গীত হচ্ছে শিল্পের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা আসতে পারে না। সব মানুষের আনন্দ-বেদনার কথা তুলে ধরে সঙ্গীত। সুস্থ ধারার সঙ্গীত থেকে মানুষ খুঁজে পায় তার আপন ঠিকানা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষ ধর্মে-বর্ণে হয়ত আলাদা, কিন্তু সঙ্গীতের বিষয় বা সুর সবাইকে ভাবতে শেখায়, বিমোহিত করে। এর ফলে মানুষে মানুষে ঐক্য আসে। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে আমাদের একটাই ব্রত হওয়া উচিত যেটা হলো ভেদাভেদ ভুলে মানুষের জয়গান গাওয়া। কৃষ্ণকলি : সঙ্গীত এমনই একটা মাধ্যম, যার সাহায্যে খুব সহজেই মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করা সম্ভব। মানুষের জীবন যদি সঙ্গীতময়তায় ভরে যায়, তাহলে সমাজের অরাজকতা, মানুষে মানুষে বিভেদ দূর হয়ে যায়। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস শুধুমাত্র একটি সিম্বলিক বিষয় নয়, এটার গুরুত্ব অনেক। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের সঙ্গে বন্ধুতের আদান প্রদান, সংস্কৃতি আদান প্রদান করতে পারি। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একটা বিশেষ ভূমিকা অবশ্যই থাকতে হবে। শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা না করলে সঙ্গীত কখনও আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছতে পারবে না। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে সবার কাছে আমার আহ্বান আসুন আমাদের জীবন সঙ্গীতময় করে তুলি।
×