ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরও আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলবে টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২১ জুন ২০১৫

আরও আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলবে টাইগাররা

মোঃ মামুন রশদী ॥ প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক আগেই যেন হেরে গিয়েছিল ভারতীয় দল। সফরকারীদের একেবারে নাস্তানাবুদ করেই জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের সিরিজ নিশ্চিত করার ম্যাচ আজ। তবে ভারতীয় দল র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল এবং নিশ্চিতভাবেই শক্তিধর একটি দল। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে জেতার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাই চালাতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে। তিনি মনে করেন, তরুণ দল হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে সক্ষম কিনা, তা জানার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার যে দলটি উন্নত হতে হতে বিশ্বকাপ জিতেছিল সেটা অনেক অভিজ্ঞ দল ছিল। তবে ভারতের বিরুদ্ধে আগের মতোই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলতে চান বাংলাদেশ কোচ। তবে তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও ভাল খেলেছিল টাইগাররা। সেজন্য আরও উন্নতির বিষয় আছে বলে মনে করেন তিনি। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দলের অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাতুরাসিংহে। প্রথম ম্যাচে চার পেসার ফর্মুলা নিয়ে একাদশ সাজিয়ে চমক উপহার দিয়েছিলেন হাতুরাসিংহে। তবে তার সেই জুয়াটা বেশ কার্যকরী হয়েছে। এজন্য বেশ সন্তুষ্ট হাতুরাসিংহে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময়ই আমাদের শক্তি অনুসারে খেলার চেষ্টা করি। আমরা যদি আমাদের শক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে পারি সেটাই হবে আদর্শ। এটা সত্যি যে আমরা সত্যিই খুব খুশি তরুণ উদীয়মান কিছু ফাস্ট বোলার পেয়েছি। এর পেছনে অধিকাংশ কৃতিত্ব দিতে হবে স্ট্রেন্থ এবং কন্ডিশনিং কোচ, ফাস্ট বোলিং কোচ ও ফিজিওকে। একাডেমি সিস্টেমের মাধ্যমে তারা সবাই তরুণ ফাস্ট বোলারদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করেছেন।’ বিশ্বকাপের আগে পেসারদের গড়ে তোলার জন্য উইকেটে কালো পাথর বিছিয়ে বোলিং অনুশীলন করিয়েছিলেন হাতুরাসিংহে। একের পর এক এমন আরও অনেক চমক উপহার দিয়েছেন তিনি। অপেক্ষা করছে আগামীতে আরও চমক। এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘আমরা এমন অনেক কিছুই আছে যা করতে পারি। আমাদের দলের জন্য যেটা সবচেয়ে ভাল হবে সেটাই করার চেষ্টায় থাকি সবসময়। সুতরাং এই ছয়টি ওয়ানডের পর আমরা হয়ত ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আসতে পারি। তবে আমি এই পরিবেশে খুব বেশি ব্যতিক্রম কিছু হওয়ার বিষয়ে ভাবছি না। আমি আশা করছি প্রায় একই রকম থাকবে সবকিছু।’ বাংলাদেশ দল আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধর এবং প্রতিপক্ষ ভারতের কাছেও যথেষ্ট সমীহ আদায় করে নিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই আর হাতুরাসিংহের মনে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হচ্ছে ভারত শক্তিধর দল পাঠিয়েছে আর এটাই বলে দিচ্ছে আমরা কোন পর্যায়ে আছি এই মুহূর্তে। আমাদের দলের আত্মবিশ্বাস অনেক উঁচুতে। যেভাবে আমরা খেলছি সেটা কিছুটা অন্যরকম।’ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার পর দল অনেক আত্মবিশ্বাসী। ক্রিকেটাররাও আক্রমণাত্মক মেজাজ নিয়েই খেলছেন। এখন সবার স্বপ্ন ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের। এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘আমি মনে করি সময়ই বলে দেবে। এ ধরনের চিন্তা করাটা বেশ আগাম হয়ে যায়। যতদূর সম্ভব পরবর্তী খেলার ওপর আমাদের মনোযোগী হতে হবে এবং আমরা কিভাবে জিতি সেটাই আমাদের অন্যতম চিন্তা। ফলাফলটাই সব ঠিকঠাক করে দেবে। আমরা যেটা করছি সেটা হচ্ছে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি। আমরা মাঠে আগ্রাসী মনোভাব নিয়েছিলাম। সেটা যদি ম্যাচ কিংবা ট্রফি জেতার জন্য কার্যকর হয় খারাপ হয় না। আর সেটাই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবকিছুই নির্ভর করছে আমরা আগামীকাল (আজ) কিভাবে খেলব তার ওপর। আমরা যদি নিজেদের শক্তি অনুসারে খেলতে পারি এবং ভারত যদি সামর্থ্যরে নিচে নৈপুণ্য দেখায় আমরা জিতব।’ কিন্তু উন্নতির অনেক কিছুই আছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ কোচ। তিনি মনে করেন, পাকদের বিরুদ্ধে এর চেয়ে ভাল খেলেছে টাইগাররা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলব না যে আমরা ফেবারিট, কিন্তু আমরা সিরিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আমি সবর্শেষ খেলাটা নিয়ে তেমন খুশি নই। যদিও আমরা জিতেছি সেটা ভীতি সঞ্চারক বিষয়। কিন্তু আমরা এখনও উন্নতি করতে পারি; শুধুমাত্র ব্যাটিংয়ে নয়, আমরা ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করতে পারি এবং বোলিংয়ে আরও কিছু করতে পারি। যদি টপঅর্ডারের একজন সেট হয়ে যান এবং বড় স্কোর করেন সেটা আমাদের বড় সংগ্রহ গড়তে সহায়ক হবে।’ দারুণ একটি দল হিসেবে গড়ে উঠছে বাংলাদেশ। টানা ৯ ম্যাচ ঘরের মাঠে জেতা হয়ে গেছে। আগামী বিশ্বকাপ তবে কি জিততে পারবে টাইগাররা? যেমনটা ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কা কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্বকাপ জিতেছিল? এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘এটা খুব কঠিন দুই যুগের ক্রিকেট দলের মধ্যে তুলনা করা। সেই সময় ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কা দলটি অনেক বেশি অভিজ্ঞ ছিল। আর এটা অনেক তরুণ দল। এই বাংলাদেশ দলের অনেক পথ পাড়ি দেয়ার আছে।’ ভারতের বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচেও আক্রমণাত্মক মেজাজ নিয়ে খেলতে চান হাতুরাসিংহে। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বড় দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমি অবশ্যই চরম প্রতিপক্ষ হওয়ার বিষয়ে বলতে পারি না। আসল ব্যাপার হচ্ছে খেলোয়াড়রা কঠিন মানসিকতা নিয়ে খেলছে এবং এ কারণেই আসলে আমরা খেলছি। আক্রমণাত্মক মনোভাব তখনই আসে যদি নিজের সামর্থ্যরে ওপর বিশ্বাস থাকে। আমাদের ছেলেরা সত্যিই খুব আত্মবিশ্বাসী নিজেদের খেলা নিয়ে। আর যা কিছু ঘটছে তার মধ্যেও নিজেদের এই মনোভাবটা রেখেই খেলছে। জেতার বেশি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় যদি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা যায়।’
×