ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগে বিশেষ কৌশল!

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২১ জুন ২০১৫

এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগে বিশেষ কৌশল!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) দুটি বার্থ পরিচালনার দরপত্র মূল্যায়নে শেষ পর্যন্ত যোগ্য বিবেচিত হলো সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। মোট তিনটি দরপত্র জমা পড়লেও আরোপিত শর্ত পূরণের যোগ্যতা ছিল একমাত্র ঐ প্রতিষ্ঠানটিরই। ফলে দরপত্রগুলোর টেকনিক্যাল ও আর্থিক প্রস্তাব যাচাই বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠানটিকে যোগ্য বিবেচনা করেছে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি। যৌথভাবে দাখিল করা টেন্ডারে যোগ্যতায় সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে মেসার্স এমএইচ চৌধুরী ও মেসার্স এ এ্যান্ড জে ট্রেডার্স। বন্দর কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করছে বলে জানা গেছে। এদিকে, টেন্ডারের শর্তে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করায় এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য বার্থ অপারেটরদের অভিযোগÑ পছন্দের প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে পাশ কাটাতে এনসিটির চারটি বার্থে অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়াটি একসঙ্গে সম্পন্ন না করে আলাদা আলাদাভাবে দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এনসিটির দুটি বার্থে অপারেটর নিয়োগ সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ টেন্ডারের শর্তের কারণে দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত প্রতিষ্ঠানগুলোর। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, এনসিটির ৪ ও ৫ নম্বর বার্থের জন্য যৌথ টেন্ডারে সাইফ পাওয়ার টেক, এমএইচ চৌধুরী এবং এ এ্যান্ড জে ট্রেডার্স দর প্রদান করেছে ৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। টেকনিক্যাল অফার যাচাই বাছাইয়েও উত্তীর্ণ হয়েছে এই যৌথ দরপত্রটি। অপারেটর নিয়োগের জন্য যোগ্যতার শর্তে টার্মিনাল অপারেশনের অভিজ্ঞতা চাওয়ায় অন্য বার্থ অপারেটরগুলোর যোগ্য বিবেচিত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে যৌথ টেন্ডারে অপর দুই প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএইচ চৌধুরী ও মেসার্স এ এ্যান্ড জে ট্রেডার্স বিবেচিত হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড টার্মিনাল অপারেটর হলেও আওয়ামী লীগের এ দুই নেতার প্রতিষ্ঠানের টার্মিনাল অপারেশনের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বার্থ অপারেটর হয়েও এই দুই প্রতিষ্ঠান কিভাবে বিবেচিত হয় তা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। একাধিক বার্থ অপারেটর ক্ষোভের সঙ্গে জানান, পুরো প্রক্রিয়াটিই অস্বচ্ছ। যৌথভাবে এই টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বলেও অভিমত তাদের। বন্দর ও বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আলোচিত সাইফ পাওয়ারটেককে এনসিটি অপারেশনের দায়িত্ব প্রদানের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াটি ছিল স্রেফ আইওয়াশ। বাকি ছিল শুধুমাত্র লোক দেখানো একটি প্রক্রিয়ার। এনসিটির চারটি বার্থের জন্য দু’দফায় আলাদাভাবে দরপত্র গ্রহণের কৌশলটিও মূলত সে কারণে। কারণ একসঙ্গে চারটি বার্থের জন্য দরপত্র গ্রহণ করা হলে তা যেত একেবারে প্রধানমন্ত্রী পর্যায় পর্যন্ত। পৃথকভাবে দরপত্র জমা নিয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে পাশ কাটানোর চেষ্টাই করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নিয়মানুযায়ী ২৫ কোটি টাকার নিচের যে কোন প্রকল্প বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজ এখতিয়ারে বাস্তবায়নের ক্ষমতা রয়েছে। ২৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার নিচের প্রকল্পগুলোর অনুমোদনের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। আর ৫০ কোটি টাকার উর্ধে হলে তা অনুমোদিত হতে হয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। আলোচিত টেন্ডারটিতে দর প্রদান করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা ৫০ কোটির চেয়ে সামান্যই কম। উদ্দেশ্য, মন্ত্রণালয় পর্যায়েই প্রক্রিয়াটি নিষ্পত্তি করা। এনসিটির বাকি দুই বার্থ অর্থাৎ ২ ও ৩ নম্বর জেটিতেও ৫০ কোটি টাকার নিচে দর প্রদান করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দুই বার্থেও পরিচালক হওয়ার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড। ফলে সবকিছু পরিকল্পনামাফিক সম্পন্ন করা গেলে এই প্রতিষ্ঠানটি সিসিটির (চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল) পাশাপাশি এনসিটি অপারেশনের দায়িত্বটিও পেতে যাচ্ছেÑ এটি অনেকটাই নিশ্চিত। চট্টগ্রাম বন্দর এনসিটির চারটি বার্থে অপারেটর নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ৪ মে। কিন্তু একই দিনে দরপত্র আহ্বান হলেও গ্রহণের তারিখ দেয়া হয় দুটি। তন্মধ্যে ৪ ও ৫ নম্বর বার্থের দরপত্র ৯ জুন এবং ২ ও ৩ নম্বর বার্থের দরপত্র গ্রহণ করা হয় ১০ জুন। সম্পূর্ণ কৌশলগত কারণে চারটি বার্থের দরপত্র একদিনে গ্রহণ না করে দুদিনে করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, দরপত্রের শর্ত নির্ধারণেও অন্য বার্থ অপারেটরদের কোন মতামত বিবেচনা করা হয়নি। বরং যোগ্যতার মানদ- হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির বার্থ অপারেশনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ৩০ কোটি টাকার টার্নওভার থাকার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে ঐ একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্রে প্রতিযোগিতারই সুযোগ পায়নি। উল্লেখ্য, প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এনসিটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে। নানা জটিলতায় এ টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগ সম্ভব হচ্ছিল না। ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর দাবি ছিল যত দ্রুত সম্ভব এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগের। কারণ, অত্যাধুনিক এই টার্মিনালের এ কারণেই বার্ষিক কন্টেনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ১৫ লাখ টিইইউএস। এদিকে, দীর্ঘ সাত বছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে অপারেটর নিয়োগ হলেও প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যাচ্ছে। বন্দরের সিসিটি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সামর্থ্য ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও বন্দরে প্রতিষ্ঠানটির অনুপ্রবেশের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার জন্য চারটি বার্থে অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জমা পড়ে মোট ৮টি টেন্ডার। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাফর আলম জানান, গত ১০ জুন গ্রহণ করা হয় এনসিটির ২ ও ৩ নং বার্থের দরপত্র। এতে মোট ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হিসেবে দরপত্র জমা দেয় সেগুলো হচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, মেসার্স এএ্যান্ডজে টেডার্স, মেসার্স ফজলে এ্যান্ড সন্স, কন্টেনার এ্যান্ড টার্মিনাল সার্ভিসেস (সিটিএস) এবং মেসার্স এইচ কে। এর আগের দিন ৯ জুন গ্রহণ করা হয় ৪ ও ৫ নং বার্থের দরপত্র। এতে মোট তিনটি দরপত্র পাওয়া যায়। দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, এমএইচ চৌধুরী এবং এএ্যান্ড জে টেডার্স যৌথভাবে একটি দরপত্র জমা দেয়। আর ওই দুই বার্থের জন্য পৃথকভাবে দরপত্র জমা দেয় কন্টেনার এ্যান্ড টার্মিনাল সার্ভিসেস (সিটিএস) এবং মেসার্স বশির আহমেদ ডিস্ট্রিবিউটর
×