ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষের উপক্রম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ জুন ২০১৫

দুই ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষের উপক্রম

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২০ জুন ॥ কালীগঞ্জে দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের উপক্রম হলে চলন্ত ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে শতাধিক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। ট্রেন দুটি দুর্ঘটনার উপক্রম এবং শতাধিক যাত্রী আহত হওয়ায় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা কাকিনা রেলওয়ে স্টেশনে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। স্টেশনে কর্মরত রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মীরা পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। আহতদের কয়েকজনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। স্টেশন মাস্টারসহ দু’জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল আটটা ৫২ মিনিটে লালমনিরহাট বুড়িমারী রেলস্টেশনের কাকিনা স্টেশনে যাত্রীবাহী দু’টি ট্রেন ক্রসিং করা হয়। বুড়িমারী রেলস্টেশন হতে লালমনিরহাট স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসা লোকাল ৪৫৪নং ট্রেনটি কাকিনা স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। এই সময় লালমনিরহাট রেলস্টেশন হতে ছেড়ে আসা ৬৫নং কমিউটার ট্রেনটি কাকিনা স্টেশনের প্রবেশের সিগন্যাল পেয়ে যায়। ভুলক্রমে একই লাইনে দু’টি ট্রেন প্রবেশের সিগন্যাল দেয়া হয়। দ্রুতগামী একটি ট্রেন অন্য একটি ট্রেনের ওপর আছড়ে পড়ার উপক্রম হয়। মুখোমুখি সংঘর্ষ ও মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে দাঁড়িয়ে থাকা ও চলন্ত ট্রেনের বগি হতে যাত্রীরা দ্রুত লাফিয়ে পড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চায়। ট্রেন হতে লাফিয়ে পড়ে শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ শতাধিক যাত্রী রক্তাক্ত যখম ও হাড়গোড় ভেঙ্গে গুরুতর আহত হয়। কমিউটার ট্রেনের চালক মোঃ তহিদার রহমান ঘটনা বর্ণনা দিয়ে জানান, কাকিনা স্টেশন মাস্টার ও পয়েজম্যানের অবহেলার কারণে এই দুূর্ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। ক্রসিং করার সময় একই লাইনে দু’টি ট্রেন এসে পড়ে। চলন্ত ট্রেনের চালক হিসেবে স্টেশনে ট্রেন ঢুকে পড়ার আগে সিগন্যাল পায়। তবে দূর হতে স্টেশনে একটি ট্রেন অপেক্ষমাণ দেখতে পাই। ফলে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ করি। তাই দু’টি ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি সংর্ঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। দিনের বেলা হওয়ায় দূর হতে দেখা যায়। রাতে হলে মুখোমুখি সংর্ঘষ কোনক্রমেই এড়ানো যেত না। ট্রেন দু’টি মুখোমুখি সংঘর্ষের উপক্রম হলে যাত্রীদের লাফিয়ে পড়া ও আর্তচিৎকারে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দেড় শতাধিক আহত যাত্রীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। মারাত্মক আহত অনেককে লালমনিরহাট জেলা সদর হাসপাতাল ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা আহত রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। চিকিৎসকরা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে না থাকায় রোগীরা দ্রুত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এদিকে দুর্ঘটনার উপক্রম ও শতাধিক যাত্রী আহত হওয়ায় ট্রেনের বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা কাকিনা রেল স্টেশনে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। প্রাণ বাঁচাতে স্টেশনে কর্মরত রেলওয়েকর্মী ও কর্মকর্তাগণ পালিয়ে যায়। লালমনিরহাট রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, স্টেশনে ভাংচুরের ঘটনায় অজ্ঞাত যাত্রীদের আসামি করে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। জিআরপি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্টেশন মাস্টারসহ দু’জন সাময়িক বরখাস্ত ॥ দুূর্ঘটনার পরপরই লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ম্যানেজার মোঃ নাজমুল ইসলাম কাকিনা রেলস্টেশন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রাথমিকভাবে স্টেশন মাস্টার ও পয়েজম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কাকিনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবু তাহের, সহকারী স্টেশন মাস্টার মোঃ আজির উদ্দিন ও পয়েজম্যান নাজির উদ্দিন দায়িত্ব পালন করে আসছিল। শনিবার দুর্ঘটনার সময় সহকারী স্টেশন মাস্টার মোঃ আজির উদ্দিন দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা যায়। তদন্ত টিম গঠন ॥ বিভাগীয় ট্রাফিক সুপারিন্টেন্ডেন্ট (ডিটিএস) মোঃ মোস্তাফিজার রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের রেলওয়ে বিভাগীয় তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) মোঃ নাজমূল ইসলাম জানান, ১২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত টিমকে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ॥ শনিবার সকালে দুর্ঘটনার পর এই রুটে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। উত্তেজিত জনতা স্টেশনে ব্যাপক ভাংচুর করায় যোগাযোগের সকল সিস্টেম অকেজো হয়ে যায়। বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর সাড়ে ১১টার পর ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। মুখোমুখি সংঘর্ষের উপক্রম হওয়া ট্রেন দুটিও পরে নিজ নিজ গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
×