ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মূর্তিমান আতঙ্ক এখন সেই তামিম

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২০ জুন ২০১৫

মূর্তিমান আতঙ্ক এখন সেই তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সময়ের বিবর্তন বুঝি এমনই! মাত্র তিন মাস আগেই সমালোচনায় বিদ্ধ ছিলেন তামিম ইকবাল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রায় ম্যাচেই ইনিংসের শুরুতে দলকে ডুবিয়েছিলেন। যে কারণে অনেক বাংলাদেশী ভক্ত বিরক্তি ও আক্রোশের সুরে সে সময় বলেছিলেন, ‘তামিমকে দল থেকে বাদ দেয়া উচিত। মাঠে তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয় খেলার প্রতি সে সিরিয়াস না। প্রায় ম্যাচেই এমন দেখা যাচ্ছে। অন্য কাউকে তাঁর বদলে সুযোগ দিলে ভাল করবে মনে হয়।’ বিশ্বকাপের হতাশা ভুলতে মোটেও কালক্ষেপণ করেননি তামিম। নিজ দেশে বিশ্বকাপ পরবর্তী ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফিরে পান নিজের চেনা ছন্দ। পাকিদের হোয়াইটওয়াশ করার পথে তিন ইনিংসের দু’টিতে শতক ও অপরটিকে অর্ধশতক হাঁকান। শুরুর প্রসঙ্গটিই তাই বলতে হচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে সেই তামিমই এখন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ভরসার নাম। পাকিদের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফর্মেন্স ভারতের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ওয়ানডে সিরিজেও অব্যাহত রেখেছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর ম্যাচেও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন তামিম। মূলত ইনিংসের শুরুতে ২৬ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের সাহসী ব্যাটিংয়েই বড় সংগ্রহ আর জয়ের ভিত পায় বাংলাদেশ। তামিমের ব্যাটিংয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও। ওপেনিংয়ে তামিম-সৌম্যর রেকর্ড জুটির কল্যাণেই ভারতকে নাকাল করার রসদ পেয়ে যায় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এখন তাই ঘুুরেফিরে আসছে সেই কথাÑযে তামিম দলকে বার বার ডোবাচ্ছিলেন, সেই কিনা এখন টাইগারদের জয়ের মূলমন্ত্র! আর তাতে বিদ্ধ হচ্ছে একের পর এক ক্রিকেটের পরাশক্তিরা। বিশ্বকাপের পর থেকে নিজেকে ফিরে পাওয়া তামিম বেশ কয়েকটি গৌরবময় রেকর্ডও গড়েছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে তিন ওয়ানডেতে করেন যথাক্রমে ১৩২, ১১৬* ও ৬৪ রান। অসাধারণ এই ব্যাটিং করার পথে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের (৪৪৯৭ রান) রেকর্ড গড়েন। আর এই ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টেও দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের (৩০৫৫) রেকর্ড গড়ছেন তামিম। এরপর ওয়ানডেও শুরু করেছেন ওপেনিংয়ে ১০২ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে। অর্থাৎ তামিম আর রেকর্ডকে এখন একে অপরের পরিপূরক বললে খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না। অথচ গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় অনেক ভক্তই ক্ষোভের সুরে বলেছিলেন, তামিম ধারাবাহিকভাবে যেভাবে দলকে ভোগাচ্ছে তাতে তাঁর সাজা হওয়া উচিত! ওই সময় পরিসংখ্যানে চোখ মেলালে দেখা যায়, তামিমের আসলে কপাল ভাল! প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েও বহাল তবিয়তে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন চট্টগ্রামের এই তরুণ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তামিম। ওপেনিংয়ে তার বিকল্পও খুব একটা নেই। বিশ্বকাপেও তামিমের ব্যাটিংয়ের দিকে চেয়ে ছিল গোটা বাঙালী। কিন্তু গ্রুপ পর্বে ৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রান করা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছু করতে ব্যর্থ হন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের শেষ দুই ম্যাচে তামিমের ব্যর্থতা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ৯ মার্চ এ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন তিনি। মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপরও বোলারদের অসাধারণ সাফল্যে ইংলিশদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ম্যাচটির শেষ দিকে একপর্যায়ে সহজ একটি ক্যাচ ছাড়েন তামিম। তাঁর কপাল ভাল যে, শেষ পর্যন্ত টাইগাররা ম্যাচটি জিতে নেয়। তা না হলে নিশ্চিত করে ওই ক্যাচ ড্রপটাই ম্যাচ হারের বড় কারণ হয়ে থাকত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের শেষ আটে খেলার স্বপ্নও পূরণ হতো না। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ গ্রুপ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও তাঁর ব্যাট হাসেনি। আনলাকি ১৩ রানে দ্বিতীয় সিøপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। বিশ্বকাপের ব্যর্থ মিশন শেষে দেশে ফিরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ থেকে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন তামিম। যে ধারা অব্যাহত আছে ভারতের বিরুদ্ধে চলমান সিরিজেও। তার এই পারফর্মেন্স স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ২০১২ সালের এশিয়া কাপকে। সেবার এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে টানা চার ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তামিম। রানার্সআপ হয়ে বাংলাদেশও পেয়েছিল স্বর্ণালি সাফল্য। খেলা দেখতে আসা তামিম ভক্ত কুষ্টিয়ার সিফাতুল বুশরা তাই বলেন, ‘এই জয়ে তামিমের অবদান অনেক। শুরুতে তার দারুণ ব্যাটিংই বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছে। আশা করি তার এ সাফল্য অব্যাহত থাকবে।’
×