ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২০ জুন ২০১৫

জননী সাহসিকা  কবি সুফিয়া  কামালের  জন্মদিন  আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত জননী সাহসিকা কবি বেগম সুফিয়া কামাল। আজ শনিবার প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের এই স্বপ্নদ্রষ্টার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও ১০৫তম জন্মদিন। ১৯১১ সালের ২০ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভাময়ী এই মহীয়সী নারী আজীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে সংগ্রাম করেছেন। সাহিত্যচর্চার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে-সংগ্রামে রেখেছেন সোচ্চার ভূমিকা। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। আজ সকাল এগারোটায় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে সুফিয়া কামাল স্মরণানুষ্ঠান। গানের সুরে ও কবিতার ছন্দে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে প্রগতির অগ্রপথিক এই কবিকে। আর জন্মদিনের আগের দিন শুক্রবার সকালে কচিকাঁচার মেলার পক্ষ থেকে উদ্্যাপিত হয় সুফিয়া কামাল জন্মোৎসবের আনন্দানুষ্ঠান। নাচ গান ও কবিতা এবং বিশিষ্টজন কথায় জননী সাহসিকাকে নিবেদন করা হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। সুফিয়া কামালের জন্মদিনে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনা এবং নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত কবি সুফিয়া কামাল একদিকে ছিলেন আবহমান বাঙালী নারীর প্রতিকৃতি মমতাময়ী মা, অন্যদিকে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল তাঁর আপোসহীন ও দৃপ্ত পদচারণা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন দেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামসহ শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনে প্রত্যক্ষ উপস্থিতি তাঁকে জনগণের ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করে যখন এদেশের ইতিহাস বিকৃতির পালা শুরু হয় তখনও তাঁর সোচ্চার ভূমিকা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল। সাহিত্যে তাঁর সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা ছাড়াও দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে। ১৯১১ সালের আজকের এই দিনে বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুফিয়া কামাল। বিশ শতকের গোড়ার দিকের অন্যান্য বাঙালী পরিবারের মতোই তাঁর পরিবারেও নারীশিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতো না। মা সাবেরা বেগমের কাছে বাংলা পড়তে শেখেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে। মূলত স্বামীর প্রেরণাতেই সাহিত্যপাঠে উৎসাহী হন সুফিয়া কামাল। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয় তৎকালীন জনপ্রিয় সাময়িকী সওগাতে। ত্রিশের দশকে কলকাতায় থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র ও বেগম রোকেয়ার মতো দিকপালদের সান্নিধ্য পান তিনি। ১৯৩৭ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গল্প সংকলন ‘কেয়ার কাঁটা’। ১৯৩৮-এ প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই ‘সাঁঝের মায়া’। যার মুখবন্ধ লিখে দেন কাজী নজরুল ইসলাম। দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ চলে আসেন ঢাকায়। রাজনৈতিক চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ভাষা আন্দোলনে। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শিশুদের সংগঠন ‘কচিকাঁচার মেলা’। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। এ সময় একদল তরুণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গঠন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি সুফিয়া কামাল অংশ নেন গণঅভ্যুত্থানে। বর্জন করেন পাকিস্তান সরকারের দেয়া ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে গেছেন অকুতোভয় সহযোগিতা। ১৯৯৯ সালের ২০ নবেম্বর সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন।
×