ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ল্যাব সহকারীসহ আটক চার

জঙ্গী বোমা তৈরিতে বিস্ফোরক যাচ্ছে ঢাবি থেকে?

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২০ জুন ২০১৫

জঙ্গী বোমা তৈরিতে বিস্ফোরক যাচ্ছে  ঢাবি থেকে?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেআইনীভাবে জঙ্গীদের কাছে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক উপাদান সরবরাহের দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ল্যাবরেটরি সহকারী ও তিন কেমিক্যাল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার থেকে জঙ্গীদের কাছে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সরবরাহের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিস্ফোরক সরবরাহের পর স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে জামায়াত শিবিরের প্রভাব থাকা রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গীদের কাছে বিস্ফোরক সরবরাহ হয়ে আসছে কি না। চারজন গ্রেফতারের পর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগার ও বিস্ফোরক বা রাসায়নিক বিক্রির প্রতিষ্ঠানের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডিবির দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদের সার্বিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে সহকারী পুলিশ কমিশনার আহসান হাবীবের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় অভিযান চালায় ডিবির একটি দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারের সহকারী হিসেবে কর্মরত গাজী মোহাম্মদ বাবুল, টিকাটুলীর এশিয়া সায়েন্টিফিক নামে রাসায়নিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক রিপন মোল্ল্যা, ওয়েস্টার্ন সায়েন্টিফিক কোম্পানির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন ও এফএম কেমিক্যাল এ্যান্ড সন্স নামে রাসায়নিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ নাসির উদ্দিনকে। শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গত ৭ জুন ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীকে বেআইনীভাবে বিস্ফোরক ও বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সরবরাহ করে আসছিল। তিনি আরও জানান, স্কুল-কলেজ বা কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য কিনতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত প্যাডে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সইসহ কাগজ জমা দেয়ার নিয়ম। জমা দেয়া কাগজপত্র যাচাইবাছাই শেষে রাসায়নিক পদার্থ বিক্রি বা সরবরাহের নিয়ম। কিন্তু দোকান মালিকরা এসব যাচাইবাছাই না করেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক বিক্রি করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব সহকারী নিজেকে প্রাক্তন ছাত্র পরিচয় দিয়ে এসব দোকান থেকে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সংগ্রহ করত। প্রাথমিকভাবে মোটা টাকার জন্যই বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক পদার্থ গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গীদের কাছে সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে। তবে এর পেছনে আরও কোন কারণ আছে কিনা বা আদর্শগত কারণে গ্রেফতারকৃতরা রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করে আসছিল কিনা সে বিষয়ে গভীর তদন্ত চলছে। গত ৭ জুন রাতে রাজধানীর বনশ্রী ও সূত্রাপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৯ সদস্য। তারা হচ্ছে কাজী ইফতেখার খালেদ ওরফে খালেদ, ফাহাদ বিন নুরুল্লাহ কাশেমী ওরফে ফাহাদ, মোঃ রাহাত, দ্বীন ইসলাম, আরিফুল করিম চৌধুরী ওরফে আদনান, মোঃ নুরুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল্লাহ কাশেমী, মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ ইয়াসিন আরাফাত। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বিভিন্ন ধরনের প্রায় ছয় কেজি বিস্ফোরক, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, গ্রেফতারকৃতদের তৈরি আটটি শক্তিশালী হাতবোমা ও ছয়টি চকলেট বোমা, চারটি চাপাতি, উগ্র মতবাদ প্রচারের বইপত্র ও সংগঠনের প্রস্তাবিত পতাকা। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিবি পুলিশ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, পতাকাটি ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন আইএসের পতাকার আদলে তৈরি। গ্রেফতারকৃতরা আইএসের আদলে ‘বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ’ নামের একটি জঙ্গী সংগঠন তৈরি করেছে। সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য তারা রাজধানী ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলো ডাকাতিসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে সংগ্রহ করা করেছিল গ্রেফতারকৃতরা। গত ২১ এপ্রিল দুপুরে সাভারের কাঠগড়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক শাখায় বোমা মেরে, গুলি চালিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তারক্ষীসহ তিনজনকে হত্যা করে ক্যাশ লুটের ঘটনা ঘটায় জঙ্গীরা। ওই ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে জঙ্গীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও গুলির ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়। ডাকাতির ঘটনায় মোট আট জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় গত ৩০ মে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মাহফুজুল ইসলাম শামীম ওরফে সুমন গ্রেফতার হয়। সুমন ব্যাংক ডাকাতির ‘অপারেশন কমান্ডার’ ছিল। সুমনসহ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ১১ জন গ্রেফতার হয়। যাদের অধিকাংশ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। সাভারের ব্যাংক ডাকাতি ছাড়াও সুমন চলতি বছরের ১০ মার্চ গাজীপুরের বোর্ডবাজারে বিকাশের পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সময় একজনকে হত্যার সঙ্গে জড়িত। দলীয় ফান্ডের টাকা যোগাড় করতেই ব্যাংক ডাকাতি করেছে বলে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়। সাভারের ব্যাংক ডাকাতিসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গত ৭ জুন গ্রেফতারকৃত হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৯ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পায় ডিবি পুলিশ। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ওই ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নাশকতায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের যোগান আসছে ঢাকার কয়েকটি ম্যাচ ফ্যাক্টরি, অসাধু বিস্ফোরক ব্যবসায়ী আর সীমান্তের অস্ত্রগোলাবারুদ চোরাকারবারীদের কাছ থেকে। ৫৯ জন বিস্ফোরক ব্যবসায়ীর অধিকাংশই আড়ালে সন্ত্রাসীদের কাছে মোটা টাকায় বিস্ফোরক বিক্রি করছে। ঢাকা থেকে সংগৃহীত বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি হচ্ছে হাতবোমা, ককটেল আর হ্যান্ড গ্রেনেড। আর পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারতীয় জঙ্গীদের মাধ্যমে স্থল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে উচ্চ মাত্রার বিস্ফোরক। অস্ত্রগোলাবারুদ সংক্রান্ত বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার সন্ত্রাসী। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত ২৩ হাজার ৬০৬ আর বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় ৫ হাজার ৪২৩ মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ৬ হাজার। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত র‌্যাব বিভিন্ন প্রকারের ১১ হাজার ৫১৮ বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র, ১ লাখ ২২ হাজার ২২৯ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকারের বুলেট, ১৬ হাজার ৬৪৭ বিস্ফোরক (ককটেল, বোমা ও গ্রেনেড), ৫ হাজার ১৯৫ কেজি বিভিন্ন প্রকারের বিস্ফোরক এবং ৩৩৪ ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। এসব ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার সন্ত্রাসী। গত বছর বিজিবি বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ৫৪ পিস্তল, ৬ রিভলবার, ৪৪ বন্দুক, ২৫ বোমা, ৩০৫ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকারের বুলেট ও তিন বোতল গান পাউডার উদ্ধার করে। গত বছরের ২ ডিসেম্বর রাজধানীর খিলগাঁও বস্টন স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে সোয়া ৫ কেজি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এইচ এম আতিকুর রহমান (২৪) ও মাহবুবুর রহমান (১৮)। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত আতিকুর রহমান খিলগাঁও পলাশ এ্যাডুকেয়ার কোচিং একাডেমির শিক্ষক। অপরজন একই কোচিং একাডেমির অফিস সহকারী। দুজনই বোমা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। তারা কোচিং সেন্টারের আড়ালে বিস্ফোরক মজুদের কাজ করে। ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালাতে বিস্ফোরকের মজুদ গড়ে তুলছিলেন তারা। তারা জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। বিস্ফোরকের চালানটি তারা শিবিরের এক নেতার বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী বোমা ও গ্রেনেড তৈরি সম্ভব ছিল। গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গী সংগঠনের সদস্য বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরআগে ডিবি পুলিশ ঢাকা মহানগর যুবদল নেতা কাজী আতাউর রহমান লিটুর বাড়ি থেকে দুই দফায় ৯৭ শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে। ওই সময় গ্রেফতার হওয়া বাড়ির কেয়ারটেকার বেলায়েত হোসেন ডিবিকে জানায়, বোমাগুলো দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা তৈরি করে ওই বাড়িতে মজুদ করে রেখেছিল। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপির ডাকা অবরোধে ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটে। নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে চলমান অভিযানে গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীতে ছাত্র শিবিরের বোমা তৈরির কারখানা থেকে ১৩০ শক্তিশালী তাজা বোমা, পেট্রোলবোমা, গান পাউডার, জিহাদী বই ও চাঁদা প্রদানকারী জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের তালিকা উদ্ধার হয়। গ্রেফতার হয় ছাত্র শিবিরের বনানী থানা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ পাঁচ। পরদিন ২১ জানুয়ারি লালবাগ থানাধীন ঢাকেশ্বরীতে বোমা তৈরির সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিউ মার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পীর মৃত্যু হয়। আহত হয় তিনজন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাজারীবাগের একটি বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হয় জসিম উদ্দিন নামে এক যুবদল নেতা। আহত হয় হাজারীবাগ থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু হোসেন ও তার ভাই জিসান। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, গানপাউডার, শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক পদার্থসহ রাজশাহী-১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি ও দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমানসহ ও বেসরকারী নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের চীফ কন্ট্রোলারসহ ২০ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রসহ জামায়াত-শিবির ও বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় বৈধ বিস্ফোরক দ্রব্য বিক্রির দোকানের সংখ্যা ৫৯। এসব দোকানের অধিকাংশই বংশাল, টিকাটুলী, সুরিটোলা, করাতিটোলা, লালবাগ, কোতোয়ালি, মিটফোর্ডসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থিত। দোকানগুলো কি পরিমাণ বিস্ফোরক আমদানি করে এবং বিক্রি করে তা মনিটরিং করার দায়িত্বে রয়েছে বিস্ফোরক অধিদফতর। প্রতিমাসেই নির্দিষ্ট এলাকার দায়িত্বরত পরিদর্শকের বিস্ফোরক দোকানগুলো মনিটরিং করার কথা। সরকারী হিসেব অনুযায়ী তারা কত বিস্ফোরক এনেছেন এবং বিক্রি করেছেন তার ফিরিস্তি বিস্ফোরক অধিদফতরে জমা দেয়ার নিয়ম। বিক্রির পর বাড়তি থাকা বিস্ফোরক সম্পর্কেও বিস্ফোরক ব্যবসায়ী ও পরিদর্শকের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। এ কাজ শুধু কাগজে কলমে রয়েছে। বাস্তবে নেই। সূত্র বলছে, বাংলাদেশের বৈধ দোকানগুলোতে যেসব বিস্ফোরক বিক্রি হয় তা সার উৎপাদন ও দিয়াশলাই (ম্যাচ) ফ্যাক্টরিতে কাজে লাগে। ম্যাচ তৈরি করতে যে রেড সালফার ব্যবহৃত হয়, তা ককটেল বা হাতবোমা তৈরির কাজেও ব্যবহৃত হয়। ভুয়া ভাউচারে অসাধু বিস্কোরক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিস্ফোরক বিক্রি করে থাকে। আবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও মোটা টাকা দিয়ে বিস্ফোরক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিস্ফোরক আমদানি করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ম্যাচ ফ্যাক্টরির মাধ্যমেও এসব বিস্ফোরক যোগাড় করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি থেকে বিস্ফোরক সরবরাহের বিষয়টি রীতিমত অবাক করার বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি থেকে জঙ্গীদের কাছে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করা হতে পারে। নতুবা এত বিস্ফোরক জঙ্গীরা পায় কোথায়? প্রতিটি জঙ্গী সংগঠনের সদস্য ধরা পড়লেই তাদের কাছে বিস্ফোরক পাওয়া যায়। জামায়াত-শিবিরের প্রভাব থাকা রাজশাহী, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি থেকে জঙ্গীরা কৌশলে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সংগ্রহ করছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরির দায়িত্বে থাকা জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতারাও নানা কৌশলে বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সরবরাহ করে আসছে। এ কারণেই জঙ্গীদের কাছে এখনও প্রচুর বিস্ফোরক থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিস্ফোরক তারা দীর্ঘদিন ধরে নানা উপায়ে সংগ্রহ করে আসছে। মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও আদর্শগত কোন কারণে গ্রেফতারকৃতরা বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করছিল কিনা গভীরভাবে তার তদন্ত চলছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে থাকা বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক পদার্থের সঠিক হিসেব রাখা এবং নজরদারির মধ্যে রাখা প্রয়োজন। অন্যথায় শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ চলে যাবে জঙ্গীদের হাতে। যা ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে ব্যবহৃত হবে।
×