ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে জুন ক্লোজিংয়ের নামে অর্থ লুটপাট

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২০ জুন ২০১৫

চাঁপাইয়ে জুন ক্লোজিংয়ের নামে অর্থ লুটপাট

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ চলমান অর্থবছরের শেষ মাস জুন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল বিভাগগুলো জমে থাকা অর্থ নিয়ে লুটপাটের মহোৎসবে নেমেছে। ৩০ জুনের মধ্যে এ অর্থ খরচ বা ব্যয় দেখাতে টেন্ডার না দেখিয়ে মনোনীত ঠিকাদার দিয়ে ঝুঁকিবিহীনভাবে ছোট ছোট প্রকল্প ভাগ করে কাজ করানোর প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ছটি বিভাগে জমে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা বা তারও কিছু বেশি। নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এ ধরনের কাজ প্রায় অর্থবছরের শেষে করে থাকে এলজিডি প্রকৌশল শাখা (বিভিন্ন উপজেলাও রয়েছে), শিক্ষা প্রকৌশল, স্বাস্থ্য প্রকৌশল, সড়ক বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল শাখা। এর মধ্যে দৃশ্যমান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। টাকার অঙ্ক ছোট ছোট করে ভাগের মাধ্যমে খুবই কাছের ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করে থাকে। সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন রুমে রং করা, চুনকাম, বাউন্ডারি ওয়ালের রিপিয়ারিং নতুবা কোন ওয়ালের ফাটল ইত্যাদি সংস্কারমূলক কাজ করে থাকে। একইভাবে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগও জুন এলে বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একইভাবে রংকরাসহ নানান ধরনের টুকিটাকি সংস্কার কাজ করে থাকে। এবার পুরো জুন মাস বর্ষা থাকায় সড়ক বিভাগ একইভাবে রাস্তার কিনার ও পানি গড়িয়ে পড়ায় সাইড ভাঙ্গা বা খাদ পূরণে বিনা টেন্ডারে কাজ করে যাচ্ছে। কোন কোন সময় ভ্রাম্যমাণ গাড়ি নিয়ে পিচ ও খোয়া দিয়ে খাদ বোঝাই করতে দেখা যাচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিভিন্ন সরকারী ভবনে রং করা থেকে শুরু করে ছাদের উপরে অংশের জলছাদ বা মেঝের পুরো অংশ চটিয়ে মজেক উঠিয়ে টাইল বসাচ্ছে। সবই অপ্রয়োজনীয় কিন্তু চলতি অর্থবছরের টাকা শেষ করতে হবে তাই এই তৎপরতা। সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের পার্সেন্টেজ বা শতকরা হিসাব করে ব্যক্তি পকেট ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে গোটা জেলা জুড়ে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগও একইভাবে পানি সরবরাহের নামে পুরনো টিয়বওয়েল ও ডিপ সেমি ডিপ সংস্কারে মনোযোগ দিয়েছে। অধিকাংশ বিভাগ বছরজুড়ে কাজ না করে সংস্কার ও টুকিটাকি কাজগুলো বিনা টেন্ডারে করার জন্য জুন মাসের দিকে তাকিয়ে থাকে। এসব বিভাগের বাইরেও রয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন পৌরসভার প্রকৌশল শাখা ও ঢাকা নিয়ন্ত্রণ করা কৃষি বিভাগের বিভিন্ন প্রকৌশল শাখা একই স্টাইলে জুন আসলেই তৎপর হয়ে ওঠে। যেমন গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফর উপলক্ষে একই স্টাইলে পৌরসভা, সড়ক বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে জরুরী দেখিয়ে বিনা টেন্ডারে। এসব বিভাগের প্রকৌশল শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের বক্তব্যে একই ধরনের কথাবার্তা ওঠে আসে। তারা এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে পরামর্শ দিয়ে থাকে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার। আবার কেউ বলে থাকে জুন আসলে কিংবা ভিআইপির সফর হলে তারা এভাবেই কাজ করে থাকে। একইভাবে অর্থ ছাড় দেয়া স্থানীয় এজি বা এ্যাকাউন্ট অফিস জুন আসায় তারা মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকৌশল শাখার বিল পাসসহ চেক দেবার প্রক্রিয়াগত কাজ করে চলেছে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের সরকারী কর্মকর্তাদের ভুয়া টিএ/ডিএ বিল রয়েছে। এখানেও রয়েছে বড় ধরনের লেনদেন ও পার্সেন্টেজ। বিল ভুয়া হোক কিংবা জুন শেষের অর্থ হোক, তাতে কোন ধরনের আপত্তি না দিয়ে ছাড় দিচ্ছে টাকা উঠাবার। বিধায় মফস্বল অঞ্চল তথা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তড়িঘড়ি টাকা শেষ করার লক্ষ্যে যে কাজ করা হয় তা কোনক্রমেই মানসম্পন্ন হয় না। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও এজি অফিসের কর্মকর্তারা দারুণভাবে ব্যক্তিগত আর্থিক উপকৃত হয়ে থাকে। বিধায় এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ও জুন ক্লোজিং ব্যবস্থা উঠিয়ে কোন বিকল্প ব্যবস্থায় না আনলে সরকারী অর্থ অপচয় কোনভাবেই বন্ধ হবে না। যুগ যুগ ধরে এই অবস্থা চলে আসছে। ঠেকাবার কেউ নেই।
×