ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ, কলঙ্কিত নেইমার

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৯ জুন ২০১৫

নিষিদ্ধ, কলঙ্কিত নেইমার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কলম্বিয়ার কাছে দুই যুগ পর হারের জ্বালা সইতে পারেননি ব্রাজিল অধিনায়ক নেইমার। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ম্যাচে লালকার্ড দেখেছেন সেলেসাও অধিনায়ক। যে কারণে দুই বা তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন বার্সিলোনা তারকা। কলঙ্কিত এই ঘটনায় ব্রাজিলের কোপা স্বপ্ন নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। তবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে গোটা ব্রাজিল দল রেফারির কড়া সমালোচনা করেছেন। কোচ কার্লোস দুঙ্গা, অধিনায়ক নেইমার, ডিফেন্ডার দানিয়েল আলভেজসহ প্রায় সবাই চিলিয়ান রেফারির মু-ুপাত করছেন। তাদের মতে, সবাই যেন উঠে পড়ে লেগেছে ব্রাজিলকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করতে। কেউ কেউ তো বলে দিয়েছেন, সবাই ব্রাজিলের শত্রু! কলম্বিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধের শেষ দিকে হাত দিয়ে বল থামিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন নেইমার। কিছুক্ষণ পর হতাশায় বলে ঘুষি মেরেও পার পেয়ে যান বার্সিলোনার এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচের শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হতাশায় কলম্বিয়ার পাবলো আরমেরোকে লক্ষ্য করে বলে লাথি মারেন নেইমার। এরপরই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন দু’দলের খেলোয়াড়রা। নেইমার ধাক্কা মারেন কলম্বিয়ার গোলদাতাকে। আর কলম্বিয়ার কার্লোস বাক্কা পেছন থেকে নেইমারকে ধাক্কা মারেন। এই ঘটনায় ম্যাচ শেষে ফেরার সময় রেফারি ছুটে গিয়ে লালকার্ড দেখান নেইমারকে। বাক্কাকেও পেতে হয় একই শাস্তি। এমনিতেই পর পর দুই ম্যাচে দুই হলুদ কার্ড দেখায় ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলতে পারতেন না নেইমার। লালকার্ড দেখায় আরও দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন তিনি। যে কারণে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদেরও হতাশা বেড়েছে। ২০১৪ বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে জুয়ান জুনিগার মারাত্মক ফাউলে চোট পেয়ে পরের ম্যাচগুলো আর খেলতে পারেননি নেইমার। ব্রাজিল সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে যায়। তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হলে ব্রাজিল ফাইনালে উঠলেই কেবল চলমান কোপায় আবার মাঠে নামার সুযোগ পাবেন নেইমার। কাজটি যে বড্ড কঠিন সেটা বলাইবাহুল্য। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে ব্রাজিল বেকায়দায়। এ কারণে দলের সেরা তারকাকে ছাড়া সামনের পথটা পাড়ি দেয়ার ছক কষছেন কোচ দুঙ্গা। তিনি বলেন, নেইমারকে ছাড়া কিভাবে খেলা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা শুরুর জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নেইমার দলের জন্য মূল্যবান কিন্তু তাকে ছাড়াও অতীতে ব্রাজিলের সাফল্য পাওয়ার উদাহরণ টেনে দুঙ্গা বলেন, একবার আমরা নেইমারকে ছাড়াই খেলেছিলাম। আমাদের প্রস্তুত হতে হবে এবং একতাবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরও বলেন, তাকে (নেইমার) পেলে ভাল হতো। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। তাই পরিস্থিতির সমাধানের পথটা আমাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাববার পাশাপাশি রেফারিং নিয়েও ক্ষোভ জানান দুঙ্গা। ম্যাচের চিলিয়ান রেফারি এনরিকে ওসেসের মু-ুপাত করেন তিনি। তার মতে নেইমারকে ম্যাচের শেষে লালকার্ড দেখানো তো বটেই পুরো ম্যাচেই রেফারির পক্ষপাত ছিল ব্রাজিল বিদ্বেষী। দুঙ্গা কিছু দিন আগে অনুষ্ঠিত কোপা লিবারটেডরসের একটি ম্যাচের উদাহরণ টেনে বেলেছেন, ওই ম্যাচেও প্যারাগুয়ের গুয়ারানি ক্লাবের বিরুদ্ধে করিন্থিয়ানসের দুই খেলোয়াড়কে লালকার্ড দিয়েছিলেন এই রেফারি। দুঙ্গা ক্ষোভের সঙ্গেই বলেছেন, বিষয়টাকে কাকতালিয় বলে উড়িয়ে দেয়ার কোন উপায় নেই। ওটা কাকতালের চেয়ে বেশি কিছু। দুঙ্গা শুধু রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েই থেমে যাননি। তার ক্ষোভের কারণ কলম্বিয়ার ট্যাকটিকসও। এ প্রসঙ্গে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের ভাষ্য, পুরো ম্যাচেই কলম্বিয়ার খেলোয়াড়েরা নেইমারকে উস্কানি দিয়ে গেছে। উস্কানি দেয়ার বিষয়টিকে ‘বাজে কৌশল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এমন নেতিবাচক কৌশল ব্রাজিল ইচ্ছা করলেই নিতে পারত, কিন্তু আমরা তা নিইনি। কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ জোশে পেকারম্যান স্বাভাবিকভাবেই দুঙ্গার মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ম্যাচে বাজে রেফারিংয়ের কিছুই ঘটেনি। গত বছর বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের দিনটি সবার স্মরণ করা উচিত। ওই ম্যাচে যে কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। ব্রাজিলের ফুটবলাররাও সমালোচনা করেছেন রেফারির। তাদের মতে, সবাই যেন ব্রাজিলের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। টুর্নামেন্টে নেইমার যে দুটো হলুদ কার্ড দেখেছেন সেটা নিয়েও কথা হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে নেইমারকে হলুদ কার্ড দেখানো হয় হাত দিয়ে ভ্যানিশিং স্প্রে মুছে ফেলার জন্য! আর দ্বিতীয় ম্যাচে হাত দিয়ে বল ধরার অপরাধে।
×