ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তামিম-সৌম্য, বৃষ্টি-অশ্বিন

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৯ জুন ২০১৫

তামিম-সৌম্য, বৃষ্টি-অশ্বিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এমন সূচনা খুব কমই হয়েছে। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার যে ঝড় তুললেন। সেই ঝড়ের ফলশ্রুতিতেই বুঝি বৃষ্টি নামল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। আর বৃষ্টির পরই বদলে গেল বাংলাদেশ। বেরিয়ে এলো ব্যাটিংয়ের পুরনো সেই দৈন্যতা। একে একে আত্মাহুতি দিয়ে ফিরে গেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ধস নামতে সময় লাগল না। যারা স্বপ্ন বুনছিলেন বিশাল কোন সংগ্রহ গড়ে রেকর্ড বুকে নতুন কিছু লিখবে বাংলাদেশ সেটা বাধাগ্রস্ত হলো। এ ধসের পেছনে মূল নায়ক হয়ে উঠলেন ভারতীয় অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। শুধু বাংলাদেশের শুরুর তা-বই থামাননি বরং বোলিং ঘূর্ণিতে বিপাকেই ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা অশ্বিনের মতো বিশ্বমানের স্পিনারকে খাটো করে দেখার খেসারতও দিলেন। বৃহস্পতিবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে এমনটাই ঘটে। প্রথম পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভার দারুণ কাজে লাগিয়েছেন তামিম-সৌম্য। দু’জন মিলে ভারতীয় বোলিং বিভাগ দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছেন। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ভ্রƒ তাই কুঞ্চিত দুশ্চিন্তায়। কারণ ১০ ওভারেই ৭৯ রান তুলে ফেলেন তামিম-সৌম্য। ১৩.২ ওভারেই ১০০ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল। সে সময় মনে হচ্ছিল ভারতের বিরুদ্ধে বিশাল এক সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু দুর্ভাগ্যটা হানা দিল দুই বল পরেই। রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝির খেসারত দিতে হলো তামিমের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি বিধ্বংসী হয়ে ওঠা সৌম্যকে। মাত্র ৪০ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ করে রানআউটের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। তবে ততক্ষণে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন তামিম-সৌম্য। দু’জনের ১০২ রানের জুটি ভেঙ্গে যায় যা ভারতের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের প্রথম শতরান। এর আগে সেরা জুটি ছিল ৮০ রানের। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি মিরপুরেই তামিম-ইমরুল কায়েস জুটি এ রান করেছিলেন। সেটিকে ছেড়ে গেলেন এ দু’জন। এরপর আর দুই ওভার খেলার পরই বৃষ্টি নামে। রান তখন ১ উইকেটে ১১৯! কিন্তু বৃষ্টিটাই যেন কাল হলো। ছোবল হানতে শুরু করলেন অশ্বিন। আর অপরদিকে, একের পর এক আত্মাহুতি দিতে লাগলেন। এক ঘণ্টা চার মিনিটের বিরতিই যেন বড় কাল হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য। বৃষ্টির আগে ভারতীয় তিন পেসার উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহিত শর্মারা তুলোধুনো হয়েছেন। পাত্তা পাননি অশ্বিনও। তিনি ৩ ওভারে ২৬ রান দেয়ার পর বৃষ্টির আগেই তাকে বোলিং থেকে সরিয়ে নেন অধিনায়ক ধোনি। বৃষ্টির পর দ্বিতীয় এবং ইনিংসের ১৮তম ওভারে ফিরেই আঘাত হানলেন অশ্বিন। তার বলের গুণাগুণ বিচার না করে তুলে মারতে গিয়ে নিজেই যেন আত্মাহুতি দিলেন তামিম। অথচ বৃষ্টির আগে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছিলেন তিনি। লং অফে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগেই অবশ্য দারুণ এক অর্জন হয়েছে তামিমের। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী যে কোন ব্যাটসম্যানকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে ১৫ ওয়ানডে খেলে সর্বাধিক ৬ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৪.৭১ গড়ে সর্বাধিক ৪৮৬ রান করেছেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে নৈপুণ্যের বিচারে তামিমের ওপরে ছিলেন মুশফিকুর রহীম। ১৬ ম্যাচে ৩৮.৫০ গড়ে ভারতের বিরুদ্ধে মুশফিকের রান ৪৬২। আর হাফসেঞ্চুরির দিক থেকে সাকিব আছেন তামিমের পর। সাকিব ভারতের বিরুদ্ধে ১৩ ওয়ানডে খেলে হাঁকিয়েছেন ৫ অর্ধশতক। তামিম দারুণ দ্রুতগতিতে ব্যাট চালাচ্ছিলেন। তিনি ৬২ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬০ রান করেন। বিরতির পর মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটা এ ওপেনার আবার ব্যাটিং শুরুর পর থেকেই কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর আরও দুটি বড় আঘাত হেনে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলেন অশ্বিন। আত্মঘাতী শট খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন অভিষেক হওয়া তরুণ লিটন কুমার দাস (৮)। তিনি বলের ফ্লাইট না বুঝে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর শিকার হন। এরপর মুশফিক উইকেটে সেট হওয়ার আগেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে অশ্বিনকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের টপ এবং মিডল অর্ডারের স্তম্ভ নড়বড়ে করে দেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এ স্পিনার। কিন্তু তাকে বুঝেশুনে না খেলে উইকেটে টিকে যাওয়ার আগেই তুলে মারতে গিয়ে আত্মাহুতি দেন তামিম, লিটন ও মুশফিক। অশ্বিন ১০ ওভার বোলিং করে ৫১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে শেষ করেছেন বোলিং।
×