ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের সর্ববৃহৎ হর্টিকালচার সেন্টার নানা সমস্যায় জর্জরিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারা বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৯ জুন ২০১৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারা বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ দেশের সর্ববৃহৎ হর্টিকালচার সেন্টারটির তত্ত্বাবধান নতুন প্রযুক্তির আওতায় না আনায় নানান সঙ্কটে জর্জরিত। শহরসংলগ্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-গোমস্তাপুর সড়কের ধারে কল্যাণপুর এলাকায় সেন্টারটির অবস্থান। দীর্ঘদিনের জমে থাকা সমস্যা সমাধানে নেয়া হচ্ছে না কোন উদ্যোগ। উপরন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি গবেষণাগারে বড় ধরনের উদাসীনতার কারণে সঙ্কুচিত হচ্ছে সেন্টারের এলাকা। ইতোমধ্যেই এ সেন্টারের বিশাল এলাকার জমি হস্তান্তর করা হয়েছে লাক্ষা ফার্ম ও বাংলাদেশ কৃষি রিসার্স সেন্টারের (বীনার) কাছে। আলাদা এ দুটি প্রতিষ্ঠান অন্যত্র জমি হুকুম দখলের মধ্য দিয়ে করা হলে হর্টিকালচার সেন্টারটি ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। ফলে ৭২.৭২ একর হর্টিকালচার সেন্টারের জমি কমে প্রায় ৫০ একরে নেমে এসেছে। ফলে আমসহ ২১টি বিভিন্ন ফলের চারা তৈরি, নানান মৌসুমের কৃষি শাক সবজির বীজ তৈরির প্রকল্পগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক কথায় এতে প্রায় প্রতি মৌসুমের বিক্রি খাত হতে কোটি টাকা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। হর্টিকালচার সেন্টারের অধীন ১৮ একরের স্থায়ী আমবাগান রয়েছে। রয়েছে তাতে ৪৪ জাতের আম। এ ছাড়াও রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, কুল, পেয়ারাসহ প্রায় ৩১ জাতের অন্যান্য ফলের বাগান। তেজপাতা, দারুচিনি, গোলমরিচ, কাঠ বাদাম, কদম মহুয়াসহ নানান ধরনের একাধিক গাছ রয়েছে। শোভাবর্ধনকারী ফুলসহ নিম, সেগুন, বাবলা ইত্যাদির গাছও রয়েছে। নতুন সংগৃহীত প্রায় ২০টি বিদেশী জাতের আমগাছও রয়েছে। চালু আছে ক্লেফট গ্রাফটিং। এর আওতায় ব্লেফট গ্রাফটিং করা হয় আম, জাম, কামরাঙ্গা, পেয়ারা, আমলকি, বেল, তেঁতুল, লেবু (হাইব্রিড), কাঁঠাল, জলপাই, ডুমুর (পাকিস্তানী), কদবেল, জাবাটিকা, ঢেওয়া, বাতাবি লেবু, ডালিম ও ৩১ বিভন্ন ধরনের ফুল। এসব ফলের চারা, সবজি বীজ ১৪ শত কেজির অধিক সবজির চারা প্রতিবছর তৈরি করা হয়, যা ৫০ লাখের অধিক। বিক্রিও হয় সেই অনুপাতে। মৌসুম এলেই পুরো দেশ তাকিয়ে থাকে এই সেন্টারের চারা ও বীজের দিকে। পুরো দেশের আমসহ বিভিন্ন ফুলের চারার শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এই হর্টিকালচার সেন্টার থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত সেন্টারের উন্নয়নে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। প্রতিবছর আমবাগান বিক্রির অর্থ চলে যায় সরকারের রাজস্ব বিভাগে। অর্থাৎ চারা বীজ বিক্রির কোটি টাকাও চলে যায় সরকারের নির্ধারিত নিজস্ব খাতে। অধিক লাভজনক কল্যাণপুর হর্টিকালচার থেকে বিশাল অংকের অর্থ রাজস্ব খাতে গেলেও তার চার ভাগের এক ভাগও বরাদ্দ আসে না সরকারের কাছ থেকে। বর্তমানে একজন উপ-পরিচালকসহ ৩২ জন কর্মরত রয়েছেন। যদিও এখানে পদের সংখ্যা ৩৯ জন। প্রয়োজন শতাধিক পদের। লেবার প্রয়োজন শতাধিক। অযতœ আর অবহেলার চিত্র তুলে ধরে জনৈক কর্মকর্তা জানান, অসম্পন্ন বাউন্ডারি, আন্ডারগ্রাউন্ড সেচ ব্যবস্থা, টিসু কালচারের জন্য রিজার্ভ হাউস, নেট হাউস, ফ্লোর নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়াও উৎপাদনে আরও গতি আনতে হলে প্রয়োজন একাধিক পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, ধান ও গম মাড়াই যন্ত্র, সেচযন্ত্র, হাইড্রলিক ¯েপ্র মেশিন, হ্যান্ড স্প্রে মেশিন, মাইক্রো পাওয়ার টিলার, মাটি মিকচার মেশিন, মাটি পরীক্ষা কার্যক্রম, মিনিট্রাক ও পিকআপ। বাউন্ডারি ওয়ালসংলগ্ন পুকুর ও বিশাল ক্যানেল সংস্কার প্রয়োজন। পুরো এলাকা বাউন্ডারি ওয়াল নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার ফলে বাহিরের লোকজন অবাধে চলাফেরা করে। ফলে ফার্মে চুরি বেড়েছে। এক কথায় ফার্মটিতে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা নেই। হর্টিকালচার সেন্টারের কোন কর্মকর্তা মিডিয়ার কাছে বক্তব্য রাখতে অপারগতা প্রকাশ করলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে হর্টিকালচার সেন্টারটিতে কাজের গতি ও কৃষির ব্যাপারে বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে সরাসরি কৃষিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কারণ এ ফার্মের নজরকাড়া রাজস্ব আয় কৃষি সম্প্রসারণের কোন ডইং কোনভাবেই ভাল নজরে না এনে সহ্য করতে পারে না।
×